বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১

শেষ পান্ডুলিপি - নজরুল ইসলাম


"নিয়তিতে বিশ্বাস করেন?"

"একটি খুনের নেপথ্যে" দিয়ে লেখকের সাথে পরিচয় এবং ভাল লাগা। থ্রিলার ঘরানার ছিল। "শেষ পান্ডুলিপি" ভাল লাগা বাড়িয়েছে।

লেখকের লেখা সাবলীল, চরিত্রগুলির অঙ্কন দারুন। বই পড়ে যদি সময়, চরিত্রগুলিকে চোখের মাঝে ভেসে বেড়াতে না দেখি, তবে বই আলগোছে সরিয়ে রেখে দেই। কিন্তু এই লেখক ধরে রাখতে পারেন, তার সহজ লেখার ধারায়।

থ্রিলার ঘরানায় লিখতে গেলে খেয়াল রাখতে হয়, পাঠক খুব দ্রুত ইন্টারেস্ট হারায়, শুধুমাত্র "পরের পৃষ্ঠায় কি আছে" এই প্রশ্নটির অ্যাবসেন্স এর জন্যে। কিন্তু লেখক সেটা খুব চমৎকারভাবেই বজায় রেখেছিলেন।

লাইব্রেরীতে চেনা লেখকের বইটি হাতে নিয়ে যখন "প্রারম্ভ" অধ্যায়টি এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেলি, তখন কিছুক্ষণ বুকে ব্যথা করছিল। তারপরই বই ব্যাগে গুজে বের হয়ে সোজা বাসায়।


কাহিনীতে দেখা যায়, এক লেখক, "নওরোজ মোস্তফা", বহু বছর পর এমন এক শহরে ফিরে আসেন, তার অতীত জীবনের এমন এক অধ্যায়ের উপর থেকে পর্দা তুলতে, যা পরিস্কার না হলে তার বায়োগ্রাফি অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। সেই ভয়ংকর সত্যটির খোঁজে একের পর এক দৃশ্য, চরিত্রের আগমন। "নওরোজ মোস্তফার" অতীতের পঁয়ত্রিশ বছর ধরে জমে রাখা রহস্যের উপর থেকে ধুলোর স্তুপ সরতে থাকে, সত্য মিথ্যে হয়ে যায়, আর মিথ্যে হয়ে যায় ভয়ংকর সত্য।

শেষের ক্লাইমেক্স আসলেই দূর্দান্ত। "প্রারম্ভ" পড়ে যেমন বুকে ব্যথা করছিল, ঠিক তেমনি "শেষ অধ্যায়" মুখে একটা তৃপ্তির হাসিও দিয়েছে।

সুখপাঠ্য।

*লেখককে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ, "তিলোত্তমা" আমাদের বাড়ির নাম, (আপনাকে আমন্ত্রন), আমাদের "মা" এর নামানুযায়ী।

************************************************************

বই: শেষ পান্ডুলিপি
লেখক: নজরুল ইসলাম
রেটিং ৫/৫



‍#সাহিত্যানুশীলন

মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১

যে শহরে গল্প লেখা বারণ - মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী

লেখকের প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাস হিসেবে যা দেখিয়েছেন, নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়। 

কোন এলেবেলে কনসেপ্ট নয় একদমই, দারুন উপস্থাপনা, সাবলীল লেখনীর ছাঁচে লেখকের কল্পনার জগৎটা ভাল লেগেছে।

আর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার এমনিতেই আমার পচ্ছন্দের একটি ঘরানা। কাজেই বইটি পড়তে গিয়ে বিন্দুমাত্র বিরক্তির আভাসও আসেনি। সুখপাঠ্য ছিল।


১৪৪ পাতার বইতে শেষের দিকে ক্লাইমেক্স এর উপর ক্লাইমেক্স। ছোট্ট একটি মফস্বল শহর, যেখানে ছোট অপরাধগুলোই নামমাত্র হয়, সেখানে খুন-খারাপি কিংবা ডাকাতির মতন ঘটনা অসম্ভব ধরনের। গল্প সেই শহরের, সেই শহরের বাসিন্দাদের। একটি বিনোদনমূলক পত্রিকা বের হয়, "গল্প হলেও সত্যি", কাল্পনিক অপরাধের গল্পগুলো গায়ে কাঁটা দেবার মতন, কিন্ত তা ভয়াবহতার পর্যায় পৌঁছোয় যখন তা বাস্তবে রুপ নিতে থাকে।

নিছোক বিনোদন, বাস্তব হয়ে দাঁড়ায়।

"মানুষের মধ্যে অন্যের ক্ষতি দেখার একটা প্রবণতা আছে, সীমিত পর্যায়ে। প্রবণতাটা মাত্রা ছাড়িয়ে বেশি হয়ে গেলে তাকে বলে স্যাডিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজর্ডার"।

আমাদের সমাজের মানুষগুলোর মধ্যে কি এর সংখ্যা বেড়েই চলছে!

"সুপারহিরো চরিত্র ভাবায় আমাদের, কিন্তু এই চরিত্রগুলোর কি কাজ যদি সুপারভিলেনই না থাকে। এভরি পজিটিভ এনার্জি এক্সপেক্টস নেগেটিভিটি।"

সুখপাঠ্য।

*********************************************************************************

বই: যে শহরে গল্প লেখা বারণ
লেখক: মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী
প্রকাশনী: বাতিঘর
রেটিং: ৪/৫

শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

সূর্যতামসী - কৌশিক মজুমদার

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ


সূর্যতামসী - কৌশিক মজুমদার


ভাল লেগেছে, এই ফ্ল্যাশব্যাকের চিত্রগুলি এক অন্যরকম থ্রিলিংস এর স্বাদ দিয়েছে। পেলাম উনিশ শতকের কলকাতার চিত্র, যেখানে খুন, সোনাগাছি, ম্যাজিক, পাগলাগারদের হাহাকার, ব্রিটিশরাজ, সাইকোলজি থেকে শুরু করে, আছে প্রাচীন হিংস্র চাইনিজ গুপ্তহত্যার কাহিনী, এমনকি ফ্রিম্যাসনও।



পাগলদের চিকিৎসা নিয়ে সেই উনিশ শতকে কি ভাবা হতো, কেমন করে চেষ্টা করা হতো তাদের সুস্থ করবার তার একটা চিত্র লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন চমৎকারভাবে। বিজ্ঞানে অনেক কিছু সহজ করে পাবার জন্যে কি ভয়ংকর এক্সপেরিমেন্টের ভেতর দিয়েও আমাদের যেতে হয় তার একটা ছোট্ট গল্প। দুই যুগের দুই গোয়েন্দাদারের দাস্তান, সাথে পুলিশ ভাইরাও আছেন। এইরম আরোও কিছু সময়ের কাহিনী সমন্বয় এই বই।

অতীত, বর্তমানের ঘটনাগুলো প্যারালালভাবে চলে, আকর্ষন ধরে রাখে। এ একদম আয়েস করে কোন মেঘলা দুপুরে চায়ের কাপের সঙ্গী, আবার রাতের আঁধারেও বেড ল্যাম্প এর আলোতে মেলে ধরার যোগ্যতা রাখে।

এই গল্প শেষ হয়েও হয় নি। এটা প্রথম পর্ব। আশা থাকবে যে প্লট লেখক তৈরি করেছেন, পরের পর্বে যেন যথাযথ জাস্টিস হয়।


পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।

**************

বইঃ সূর্যতামসী
লেখকঃ কৌশিক মজুমদার
রেটিংঃ ৪/৫

**************


#সাহিত্যানুশীলন #সূর্যতামসী #bookworm #koushikmojumdar

বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মারিবার হলো তার সাধ- সুস্ময় সুমন



একটা দীর্ঘ সময় লকডাউন এর জন্যে লাইব্রেরী ছিল বন্ধ। যখন খোলে, যথারীতি হামলা চালাই। এবং বাংলা বইয়ের তাকটা বোধহয় একাই খালি করি। নিজের কার্ড (কারণ ২৪টির বেশি আমাকে আর ইস্যু করছিলনা) এবং সুমি ভাবির লাইব্রেরীর কার্ড নিয়ে লোভীর মতন বগলদাবা করি মোট ৩০ টির মতন বই। এর মধ্যে একখানা হচ্ছে "মারিবার হলো তার সাধ।"


সুস্ময় সুমন এর সাথে পরিচয় এই বইয়ের দ্বারা। "আঁধারের জানালাটা খোলা" এবং "যে ছিল অন্তরালে" এই দুটোও জোগাড় করেছি, লাইনে আছে। সে যাক গে, এই বইয়ের একটু আভাস শুধু শেয়ার করেছিলাম। থ্রিলার প্রেমীদের সাড়া পাই সঙ্গে সঙ্গেই। প্রথম পূর্বাভাস এর পাতাতেই লেখক লেখেন, "প্রিয় পাঠক, হাত-পা গুটিয়ে বসুন। শুরু হতে যাচ্ছে শ্বাসরুদ্ধকর কু‍‍‌ৎসিত এক প্রতিশোধের গল্প"। আমি সত্যিই একটু জমিয়ে বসি।

গল্পের গতি সাবলিল, চমৎকার, গ্রিপিং টাইপ। ক্লাইমেক্স এর জন্যে একদম শেষ অবধিই অপেক্ষা করতে হয়েছে। নৃশংসতার দৃশ্যগুলো আসলেই ভয়াবহ। মানুষের মনের অন্ধকার জগত, অসুস্থ মানসিকতা সত্যিই এমন ভয়াবহ হয়। পড়ার সময় মনে হয়েছিল, একসময় কেউ বোধহয় জিজ্ঞেস করেছিল আমায়, ভুতের ভয় আছে কি না আমার। উত্তর ছিল, আমি ভুতের চেয়ে বেশি "মানুষ"কে ভয় পাই! কারণ একটি মানুষ, আরেকটি মানুষকে ঠান্ডা মাথায় ১৬/১৭ টুকরো করতে পারে!


লেখকের এখন পেশা নাটক নির্মাণ। আমি বোধহয় এখনো তার কোন নাটক দেখেনি। কিন্ত ভালো লাগবে, উনি যা লিখেছেন এই বইয়ে, এইরম কাহিনী দিয়েই চমৎকার ওয়েব সিরিজ বাংলাদেশে নির্মাণ সম্ভব। মনে মনে তো কাস্টিংও করা হয়ে গিয়েছে আমার। গল্পে "তাহিতির" চরিত্রটি শেষ অবধি ... থাক স্পয়লার দেয়া ঠিক হবে না।


সুখ পাঠ্য অবশ্যই।


বই: মারিবার হলো তার সাধ
লেখক: সুস্ময় সুমন
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১৯০
রেটিং: ৪/৫

#সাহিত্যানুশীলন

গিলগামেশ- জাহিদ হোসেন

"যা চলে গেছে, তা কি কখনো আর ফিরে আসে?"
ঈশ্বরের মুখোশ" এর দ্বারা পরিচয় এই লেখকের সাথে। লেখক বলেই নিয়েছেন মহাকাব্যের পরিনতি ঘটতে যাচ্ছে, ছোট খাটো এক উপাখ্যানে, কাজেই অল্পতেই খেল খতম টাইপ কিছুই নেই। এবং সেটা দেখিয়েছেনও।

কাহিনীর গতি হঠাতই মনে হবে, কোথাও একদম পাল্টে গেল, কিন্তু নাহ। সুত্রপাত এর সাথে মধ্যখানের সংযোগ সাংঘাতিক ছিল। ফ্ল্যাশব্যাক ছিল দূর্দান্ত।

শেষের দিকে মনে হলো একটু কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খারাপ লাগা বিন্দুমাত্র ছিলনা। সাসপেন্স ছিল, ছিল থ্রিলার, ভয়াবহতা। মিথোলজির মিশেলতো এক অন্য দুনিয়াতে নিয়ে যায়, যার ছাপ আমার এডিটেড বুকোগ্রাফিতে স্পষ্ট।

"লুপ্ত ধর্মাচার" জর্জ লুকাসের বই গুগল করে অস্থির, যার রেফারেন্স লেখক দিয়েছেন তার বইতে। কিন্ত ঘেঁটে দেখার পর জানতে পারলাম এটি নেহাতই তার কল্পনাপ্রসুত। মানে সেইই পর্যায়ের। এর জন্যেই রেটিং বাড়িয়ে ৫/৫ দিতে একটুও দ্বিধা করিনি। 

সৈয়দ শাহ ফতেহ গিল, জাদুকর কর্নেল কালাহান, দুটি দারুন চরিত্র।

"চোখের বদলে নিকষ কালো আঁধার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে", কেমন একটা অদ্ভুত ভয় লাগা অনুভূতি।

এই সর্তকবার্তা সক্কলের জন্যেই...

"মনে রেখো গিলগামেশ, শিকারও একসময় শিকারীতে পরিনত হয়, আর শিকারী শিকারে।"

সুখপাঠ্য নি:সন্দেহে।

বই: গিলগামেশ
লেখক: জাহিদ হোসেন
পৃষ্ঠাঃ ৪৬৪
রেটিং: ৫/৫



#সাহিত্যানুশীলন

বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১

এক অপ্রেমিকের জন্য -- তসলিমা নাসরিন

এক অপ্রেমিকের জন্য-- তসলিমা নাসরিন


এই শহরেই তুমি বাস করবে, 
কাজে অকাজে দৌড়োবে এদিক ওদিক কোথাও আড্ডা দেবে অবসরে, 
মদ খাবে, তুমুল হৈ চৈ করবে, রাত ঘুমিয়ে যাবে, তুমি ঘুমোবে না।

ফাঁক পেলে কোনও কোনও সন্ধেয় এ বাড়ি ও বাড়ি খেতে যাবে,
খেলতে যাবে,
কে জানে হয়তো খুলতেই যাবে আলগোছে কারও শাড়ি
আমার আঙিনা পেরিয়েই কোনও বাড়িতেই হয়তো।

এ পাড়াতেই হয়তো দু’বেলা হাঁটাহাঁটি করবে,
হাতের নাগালেই থাকবে, হয়তো কখনও জানিয়েও দেবে আমাকে,
যে, কাছেই আছো,
কুঁকড়ে যেতে থাকবো, কুচি কুচি করে নিজেকে কাটতে থাকবো
দেখা না হওয়ার যণ্ত্রণায়,
তবু বলবো না, এসো।
বলবো না, তোমাকে সুযোগ দেব না বলার যে তোমার সময় নেই, বা ভীষণ ব্যস্ত তুমি ইদানিং
তোমার অপ্রেম থেকে নিজেকে বাঁচাবো আমি।

তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে না। 
বছর পেরোবে, তোমার সঙ্গে দেখা হবে না আমার, 
দেখা না হতে না হতে ভুলতে থাকবো 
তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াটা ঠিক কেমন ছিল 

কী রঙের সার্ট পরতে তুমি, 
হাসলে তোমাকে ঠিক কেমন দেখাতো, 
কথা বলার সময় নখ খুঁটতে, চোখের দিকে নাকি অন্য কোথাও তাকাতে, 
পা নাড়তে, ঘন ঘন চেয়ার ছেড়ে উঠতে, জল খেতে কিনা, ভুলতে থাকবো। 
দেখা না হতে না হতে ভুলতে থাকবো তুমি ঠিক দেখতে কেমন ছিলে, 
অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যাবে, 
তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। 
এক শহরেই, অথচ দেখা হবে না। 
পথ ভুলেও কেউ কারও পথের দিকে হাঁটবো না, 
আমাদের অসুখ বিসুখ হবে, দেখা হবে না। 
কোনও রাস্তার মোড়ে কিংবা পেট্রোল পাম্পে কিংবা মাছের দোকানে, বইমেলায়, রেস্তোরাঁয়, কোথাও দেখা হবে না।

আরও অনেকগুলো বছর পর, ভেবে রেখেছি, 
যেদিন হুড়মুড় করে এক ঝাঁক আলো নিয়ে সন্ধে ঢুকতে থাকবে 
আমার নির্জন ঘরে, 
যেদিন বারান্দায় দাঁড়ালে আমার আঁচল উড়িয়ে নিতে থাকবে বুনো বৈশাখি 
এক আকাশ চাঁদের সঙ্গে কথা বলবো যে রাতে সারারাত-- 
তোমাকে মনে মনে বলবোই সেদিন, 
কী এমন হয় দেখা না হলে, 
দেখা না হলে মনে হতো বুঝি বেঁচে থাকা যায় না, 
কে বলেছে যায় না, দেখ, দিব্যি যায়! 
তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি কয়েক হাজার বছর, 
তাই বলে কি আর বেঁচে ছিলাম না? দিব্যি ছিলাম!

ভেবেছি বলবো, 
তুমি তো আসলে একটা কিছুই-না ধরনের কিছু, 
আমার আকাংখা দিয়ে এঁকেছিলাম তোমাকে, 
আমার আকাংখা দিয়ে তোমাকে প্রেমিক করেছিলাম, 
আমার আকাংখা দিয়ে তোমাকে অপ্রেমিকও করেছি 
তোমাকে না দেখে লক্ষ বছরও বেঁচে থাকতে পারি! 
অপ্রেমিককে না ছুঁয়ে, অনন্তকাল।

এক ফোঁটা চোখের জল বর্ষার জলের মতো ঝরে ধুয়ে দিতে পারে 
এতকালের আঁকা সবগুলো ছবি, 
তোমার নাম ধাম দ্রুত মুছে দিতে পারে চোখের জল। 
তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।

আমাকে একা বলে ভেবো না কখনো, তোমার অপ্রেম আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে।

বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১

"হার না মানা অন্ধকার"... তবুও বিশ্বাস করি আলোর জয়


লেখকের মুন্সিয়ানায় অভিভূত আমি। এটা লেখকের লেখা প্রথম পড়া বই। ক'টা দিন ধরেই হরর থ্রিলার ঘরানার কিছু খুঁজছিলাম, চমৎকার এক কথায়। ঐ যে বলেছিলাম, লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম হানা দেবার জন্যে, এটাকে সেখানেই পাই। 

"হার না মানা অন্ধকার"... ১ম পর্ব। ঈশ্বর বিশ্বাস করলে, অপশক্তিকেও স্বীকার করতে হয়। কাহিনী চলছে, দূর্দান্ত এবং মুন্সিয়ানা বলেছি এই জন্যে, এক কাহিনী থেকে লেখক নিয়ে গিয়েছে আরেক কাহিনীতে, এক জগতের কাহিনীর মধ্যে আরেক জগত চলে আসছে, মনে হচ্ছিল মূল কাহিনী বুঝি এটাই। একটুও বিরক্তি আসছিল না, বরং আগ্রহ বেড়েই যাচ্ছে, উত্তেজনায় ভাটা পরেনি, প্রত্যেকটা চরিত্রতের অঙ্কন যথাযথভাবে।

শেষের বেলার ঘটনার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না, পরে মনে হলো, তা তো হবেই, কারণ পরের পর্ব আসছে। ভাগ্যিস, লাইব্রেরীতে ২য় পর্বটাও ছিল, না হলে মাথা গরমটা থামাতে পারতাম না। দূরদেশে এখন এই ২য় পর্ব পাবোটাই বা কোথায়! আর অপেক্ষা বড্ড খারাপ জিনিষ।


"সত্য-কলাম" এর প্রকাশক রফিক শিকদার এর লিখিত উপাখ্যানগুলোতে হারিয়ে যাবেন, সময় ভালো কাটবে। ১০৯ পৃষ্ঠার, পরিসর কম, কিন্তু চমৎকার। ২য় পর্বটাও পড়ার আগ্রহ জাগবে, যেমন আমি এখন শুরু করব। 

********************

বই: হার না মানা অন্ধকার

লেখক: বাপ্পী খান

প্রকাশক: বাতিঘর, ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ইং









মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১

"আলাদিন" এর আশায়.......

"আলাদিন" এর আশায়....... 

মহামারীর ধাক্কায় বন্দী শহর জীবন, আবারও স্বাভাবিকতার আশায় বাহিরমুখো। খুলে গিয়েছে, কম্যুউনিটির পাবলিক পাঠাগারগুলোও। মহামারীর ছোবলে বন্দী জীবনগুলো শুরুর ঘন্টা বাজার দিনগুলোতে, ঘরে এনে রেখেছিলাম প্রায় ৩০/৩৫ বই। নিজের লাইব্রেরী কার্ড, আবার ডাক্তার ম্যাডামের কার্ড নিয়েও।

সেগুলো আবার যথাস্থানে ফেরত এবং বগলদাবায় নতুন কিছু নেব বলে ভাবছি, চোখে পরল, "আলাদিন".... এই শব্দটির সাথে আমাদের ৯০' এর শিশুবেলাগুলো একদম মাখোমাখোভাবে জড়িত। একটু স্মৃতিকাতরতার সাথেই হাতে নেই। লেখকের নামটাও বড় চমৎকার। "#আহনাফ_তাহমিদ"। ভাল লাগল। বইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাঠ অংশটাও মজার লাগল। পড়া শেষে, মনে হলো ইসসসস.... কবে বের হবে এর ২য় পর্ব। 

খোঁজ করে দেখলাম, এখনোও বের হয় নি। 


একটা অ্যারাবিক আরবান ফ্যান্টাসির জগৎ। ১ম পর্বে চমৎকার করে, কাহিনীকে একটা ভীত দেয়া হয়েছে। শুরুতেই মনে হবে, কি রে ভাই হচ্ছেটা কি! কিন্তু পরে মনে হচ্ছে, আরেব্বাস হলোটা কি!!! উত্তেজনা ছিল। ইস্কান্দর মির্জা, জিন্নাতুল হুদা, আলাদিন, জেসমিন, সাইফার বইয়ের চরিত্রগুলোর নাম। আমি সত্যিই ২য় পর্বের আশায় খুব উৎসাহ নিয়েই অপেক্ষা করছি, কারণ যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে এই পর্ব, সেখান থেকে এই কাহিনীকে একটা জবরদস্ত রুপ দেয়া সম্ভব। 

লেখকের জন্যে অনেক শুভ কামনা।

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

Yaqin se yaadon ke bare mein kuchh kaha nahin ja sakta- IFTIKHAR ARIF

Tum ne jo phuul mujhe ruḳhsat hote vaqt diyā thā

vo nazm maiñ ne tumhārī yādoñ ke saath, lifāfe meñ band kar ke rakh dī thī

aaj dinoñ baad | bahut akele maiñ use khol kar dekhā hai,

phuul kī nau pañkhuḌiyāñ haiñ,

nazm ke nau misre,

yādeñ bhī kaisī ajiib hotī haiñ,

pahlī pañkhuḌī yaad dilātī hai us lamhe kī| jab maiñ ne,

pahlī baar tumheñ bharī mahfil meñ| apnī taraf musalsal takte hue dekh liyā thā,

dūsrī pañkhuḌī jab ham pahlī baar, ek dūsre ko kuchh kahe baġhair,

bas yūñhī, jaan buujh kar nazar bachāte hue| ek rāhdārī se guzar ga.e the,

phir tīsrī baar|
 jab ham āchānak ek moḌ par kahīñ mile

aur ham ne bahut saarī bāteñ kiiñ | aur bahut saare baras,

ek saath pal meñ guzār diye

aur chauthī baar ab maiñ bhūlne lagā huuñ

bahut dinoñ se Thahrī huī udāsī keī vajah se shāyad

kuchh log kahte haiñ udāsī tanhā.ī keī kokh se janam letī hai

mumkin hai Thiik kahte hoñ

kuchh log kahte haiñ bahut tanhā rahnā bhī udāsī kā sabab ban jaatā hai

mumkin hai ye bhī Thiik ho

mumkin hai tum aao to bhūlī huī saarī bāteñ phir se yaad aa jaa.eñ

mumkin hai tum aao to vo bāteñ bhī maiñ bhuul chukā huuñ jo abhī mujhe yaad haiñ

yādoñ ke baare meñ aur udāsī ke baare meñ aur tanhā.ī ke baare meñ

koī baat yaqīn se nahīñ kahī jā saktī

https://www.rekhta.org/nazms/yaqiin-se-yaadon-ke-baare-men-kuchh-kahaa-nahiin-jaa-saktaa-tum-ne-jo-phuul-mujhe-rukhsat-hote-vaqt-diyaa-thaa-iftikhar-arif-nazms


রবিবার, ২৫ জুলাই, ২০২১

পরিভাষাহীন: অভিষেক

পরিভাষাহীন: অভিষেক



আমরা কারা?

দুই নগ্ন দেহ, এক আলিঙনে...


নাকি দুই আত্মা, এক নতুন প্রেমের গল্পের উদ্দাপনে?

আমরা নোংরা, আমরা ত্যাজ্য।


হ্যাঁ, তাই তো, কিন্তু শুধুমাত্র এই অন্ধ সমাজের চোখে।

আর ঈশ্বরের কাছে?

আমরা শ্বাশত, আমরা জীবন্ত।


সত্যিই কি তাই? আমরাতো অস্তিত্বহীন, আমরাতো পরিভাষাহীন।



আমি তো পরিভাষা চাইনি।

তাহলে কি চেয়েছো তুমি?


এক সময় হয়ত ভালবাসতে চেয়েছিলাম,

এখন শুধু ঈশ্বর হতে চাই।

ক্ষমা করতে চাই, নিজেকে, তোমাকে,

এই অন্ধ সমাজকে, প্রেম করার মতন হৃদয় হয়ত আর নেই আমার,

তাই শুধুই করুনা দিতে চাই।



আর সাহস!! সাহস আছে??

সেই সাহস কি খুঁজে দেবে আমাদের এক নতুন পরিভাষা!

আমরাতো আর কিছু খুঁজছিনা!

আমরাতো পেয়ে গেছি,

আমি তোমাকে, তুমি আমাকে, এই অন্ধকার সংসারকে।


তাহলে থাক না, আমাদের পরিভাষাহীন এই প্রেম, অন্ধকার সংসারে নগ্ন হয়েই থাক, পাপ হয়েই থাক।

কিন্ত তাতে কি কারুর মঙ্গল হবে না?


আমি তো কারুর মঙ্গল কামনা করিনি।

তাহলে যে আমরা মঙ্গলময়ী ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারবো না, ক্ষমা করতে পারব না।


হয়ত ঈশ্বর হওয়া আমাদের এই নোংরা, পাপী শরীরের ভাগ্যেই নেই।

আমরাতো প্রেম করেছি, পাপতো করিনি।

তাহলে আমাদের প্রণয় কি ওই পাথরের মন্দিরে খোঁদাই করা হবে?

সে নাই বা হোক, আমরা যে তাহলে শুধুমাত্র এক পাথরের মূর্তি হয়ে রয়ে যাবো।

আমরা যে আর জীবন্ত ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারবো না।


আমি তো পূজো চাইনি, আমাদের প্রেম থাকবে পূজোহীন, পরিভাষাহীন,

বিলুপ্ত, আর এই অন্ধ সমাজের চোখে অদৃশ্য।


আচ্ছা আমরা যদি আবার হারিয়ে যাই এই সংসারে?


আমাদের আত্মা একে অপরকে খুঁজে পাবে, সঙ্গে থাকবে,

এই আলিঙনে প্রেম প্রতিষ্ঠা করবে।

আমাদের সেই প্রতিষ্ঠা কি পারবে, ঈশ্বেরর কাছে পবিত্র হয়ে উঠতে?

ঈশ্বরতো অন্ধ নয়!

আমাদের প্রেম তার কাছে এক নতুন পরিভাষা নিয়ে পরিচিত হয়ে উঠবে।


তাই হোক, এই অন্ধ সমাজে না হয় আমরা পরিভাষাহীনই রইলাম, ত্যাজ্য রইলাম।

কিন্ত এক সঙ্গে, এক প্রেমের আলিঙনেই রইলাম।


তুমি চিন্তা করছো কেন? আমরা ঈশ্বরের কাছে পবিত্র হয়ে উঠবো।

আমাদের সব পাপ মুছে যাবে, এই প্রেমের আলিঙনে আমরা

এক নতুন ঈশ্বর হয়ে উঠবো।

এক নতুন পরিভাষা খুঁজে পাবো।

খুঁজে পাবো এক নতুন ঈশ্বর, এক নতুন প্রেমের পরিভাষা।



©অভিষেক

শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১

অনু গল্প: রূপকথার শেষটুকু..#সাদিয়া রশিদ

অনু গল্প: রূপকথার শেষটুকু..#সাদিয়া রশিদ


রূপকথায় যেমন থাকে--"অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বাস করিলো"- এমনি একটা স্বপ্নের ঘোরে বসবাস সেমন্তীর। শিশিরে পা ভিজিয়ে,ফুলের গন্ধ বুকে নিয়ে সকাল হয় তার। প্রজাপতির পেছনে ছুটে ক্লান্ত হয়ে অপরাহ্ন হয়। সোনাঝরা বিকেলে সূর্য টাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সন্ধ্যে গড়ায়। বাবা-মার রাজকন্যা,আহ্লাদী-অভিমানী সেমন্তীর তারপরও কিসের এতো উদাসীনতা, কোথা হতে মেঘ কালো করা বিষণ্ণতা এসে গ্রাস করে নিয়ে যায় তাকে! আহারে মেয়ে !  -এক বুক ভাঙা কষ্ট আছে বৈকি তার! দেখি আমার এই গল্প একটু খানিক হলেও সেমন্তীর কষ্টে সুখের প্রলেপ দিতে পারে কিনা!!

কোন একদিন......
একদিন ঝুম বৃষ্টি দুপুরে দরজায় ঠক ঠক শব্দ। সেমন্তী দরজা খুললে ভেজা শরীরে দেখতে পেলো নিলয় কে। দুই জোড়া চোখ একে অন্য কে দেখছে। সেমন্তীর বড় মায়া হলো...বেচারা কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 
"আমি নিলয়.. এটা কি ৩৭/এ?" 
সেমন্তী : না,আপনি ভুল বাসায় এসেছেন...ভেতরে আসুন...ভিজে যাচ্ছেন..দাঁড়ান টাওয়েল নিয়ে আসি।

একপ্রকার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভেতরে ঢুকলো নিলয়। 
নিলয়: এভাবে স্ট্রেঞ্জার বাসায় ঢুকানো কি ঠিক হলো? খারাপ মানুষ ও তো হতে পারি আমি!! 

সেমন্তী চুপ করে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে। নিলয় খুব খেয়াল করে দেখছে সেমন্তীকে। সাধারন চেহারার শ্যামা মেয়ে..কি যেন আছে তবু..,,,,, চোখ দুটো মায়াকাড়া.. বিষন্ন.. কাছে টানে খুব.. বোঁচা নাক চেহারার মিষ্টি ভাব টা বাড়িয়ে দিয়েছে, বাঙালী শারীরিক গড়ন.. জলপাই রঙের সালোয়ার কামিজ পরনে। কি স্নিগ্ধ লাগছে? 
সেমন্তী চা এগিয়ে দিলো। 

নিলয়: ধন্যবাদ চায়ের জন্য। বৃষ্টি থেমে গেছে। আজ তাহলে আসি। সবকিছুর জন্য অনেক ধন্যবাদ।আপনার নাম টা জানা হলো না। 
সেমন্তী : আমি সেমন্তী... 
নিলয়: বাহ..সুন্দর নাম। মানে সাদা গোলাপ? 

সেমন্তী দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিলয়ের চলে যাওয়া দেখলো। 
সেমন্তী -নিলয় কাহিনীর এখানেই সূত্রপাত। তারপর যা হয়... নিলয়-সেমন্তীর ভালোবাসার দিবস-রজনী।মাঝে মাঝে সেমন্তী কে খুব আনমনা লাগে... নিলয় জানতে চায়.

"এতো কি ভাবো তুমি সেমন্তী?
"সেমন্তী হাসে শুধু!চুপ করে থাকে। 
নিলয়: কিছু লুকিও না আমার কাছে। কষ্ট থাকলে বলো আমাকে..শুষে নিবো সব কষ্ট তোমার। 
সেমন্তী : নিলয়.. আমাদের খুব সুখের সংসার হবে দেখে নিও.. খুব ফুটফুটে একটা মেয়ে বাবুও থাকবে আমাদের। নাম রাখবো... "নয়নতারা" 
নিলয়: আর বাবুর নাক তোমার মতো বোঁচা হবে, কারনে-অকারনে অভিমানে গাল ফুলাবে..আর মা-মেয়ে মিলে আমার জীবনের বারোটা বাজাবে। 

আজ তাদের ভালোবাসার তিন বছর পূর্তি। 
নিলয় দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে নয়নতারা ফুটে আছে। সেমন্তীর কবরে নিলয় নিজ হাতে অনেক নয়ন তারা গাছ লাগিয়েছে। এক বছর হলো সেমন্তী চলে গেছে তাকে ছেড়ে.. রক্তের খারাপ অসুখ টার সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেছে মেয়েটা। নিলয়ের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। সেমন্তী কে হারানোর বেদনা সহ্য করার মতো ক্ষমতা বিধাতা তাকে দেয়নি। 

পুনশ্চ: গল্পের শেষটা এমনও হতে পারতো..সেমন্তী সুস্থ হয়ে গেলো। তাদের কোল জুড়ে "নয়নতারা".. তাদের জীবনটা রূপকথার গল্পের মতো কেটে গেলো! চারিদিকে হাসি আনন্দ রাশি রাশি। কিন্তু জীবন তো গল্প নয়!

©সাদিয়া রশিদ

শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০২১

চলে যেতে চাও?- সমৃক চক্রবর্তী

চলে যেতে চাও?

চলে যেতে চাও? আপত্তি নেই, 

কিন্তু যাওয়ার পথের বাঁকে একবার ঘুরে তাকিও,

দেখবে তাসের ঘর ভেঙে পরছে অগচরে।


চলে যেতে চাও? আপত্তি নেই।  

জানবে তুমি গেলেও বসন্ত আসবে,

আবির খেলা হবে, রং মাখবে তুমি, রং মাখবো আমি।

কিন্তু নৈকট্য আগের মতন আর থাকবে না।


চলে যেতে চাও? আপত্তি নেই।

তুমি চলে গেলেও বরষার বিকেলে বারান্দায় চা খাওয়া হবে।

কিন্তু পেয়ালা থাকবে একটাই।


চলে যেতে চাও? আপত্তি নেই।

গঙ্গার ধারে আবারও সন্ধ্যা নামবে।

ডিঙি বেয়ে ঘরে ফিরবে জেলেরা। 


রাত পেরিয়ে আবার সকাল আসবে। 

সব কিছু আবার আগের মত হবে।

কিচ্ছুটি বদলাবে না। কিচ্ছুটি।


তবুও যদি চলে যেতে চাও..... আপত্তি নেই।

©সমৃক চক্রবর্তী

পাঠ: বিনোদিনী

বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১

আমার কোন গল্প নেই- অভিষেক

আমার কোন গল্প নেই....

আমার কোন গল্প নেই....


আমার স্বামী ভাতৃপ্রেমের উদাহরন

তার বিরহে আমি রইলাম,

চোদ্দ বছরের বনবাসে

সে আজও ঘরে ঘরে পূজিত।

কিন্তু তার পাশে আমার স্থান নেই।


আমি লক্ষণের স্ত্রী উর্মিলা,

আমার কোন গল্প নেই.. আমার কোন গল্প নেই।


সে যে পরম ভক্ত ছিল মহাদেবের,

ঈশ্বর মেনে ছিলাম আমি সেই দশাননকে, 

তবুও পরস্ত্রীকে,

অপহরন করার পাপ থেকে তার কোন মুক্তি নেই।


তাকে ছাড়া রামায়ন অসম্পূর্ণ

কিন্তু আমি, আমি রাবনের মন্দদারী।


আমার কোন গল্প নেই, আমার কোন গল্প নেই।

যুগে যুগে মন্দিরে পূজিত আমার স্বামী,

একমাত্র তার প্রেমিকার সাথে

শ্রেষ্ঠ প্রেমের উদাহরনে

এই সংসারে আজও তাদেরই নাম।


সে আমার জীবন সঙ্গী তো হলো,

কিন্তু আমার তার প্রতি প্রেমের

হয়ত আজও কারোর জানা নেই।

আমি কৃষ্ণের রুকমনী

আমার কোন গল্প নেই ....

আমার কোন গল্প নেই।


মানুষের পাপ ধোয়া আমার ভাগ্যে হয়ত নেই,

নদী হয়েও এই পৃথিবীতে, তাই আজ আমার কোন অস্তিত্ব নেই।


নদীদের মধ্যে আমি গঙ্গা নই,

তাই আজও আমার কোন পূজা নেই।

আমি স্বরস্বতি।

আমার কোন গল্প নেই।

©অভিষেক

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

তুমি রবে নীরবে- ©আমিনা তাবাস্সুম

তুমি রবে নীরবে

তুমি: কী ব্যাপার? এই অসময়ে যে?

আমি: তোমার কাছে আসার জন্য কোনো সময় অসময় লাগে নাকি?

তুমি: (মৃদু হেসে) সেটা বলেছি নাকি? তোমার মনে হয় আজ মন খারাপ?

আমি: নাহ, কোথায়? আমার আবার মন।

তুমি: এই যে, কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে যে তোমার মন খারাপ।

আমি: হুম, তুমি তো দেখি সব বেশি বেশি বুঝো।

তুমি: সব বেশি বেশি বুঝি কিনা জানিনা কিন্তু তোমার মনটা ঠিকই বুঝি।

আমি: (অল্প হেসে) তাই বুঝি?

তুমি: তুমি সেটা বুঝতে পারোনা?

আমি: না পারলে কি সময় অসময়ে বার বার তোমার কাছে ছুটে আসি?

তুমি: এখন বলো, মন খারাপ কেন?

আমি: তুমি না আমার মন বুঝো? এটাও না হয় বুঝে নাও।

তুমি : বরের সাথে ঝগড়া হয়েছে?

আমি: ধুর, তুমি তো ওকে ভালোমতোই চেনো। ও কি ঝগড়া করার মানুষ?

তুমি : হ্যাঁ, সে তো আবার স্ত্রীর প্রেমে পাগল। তোমার সাথে কি সে ঝগড়া করবে?

আমি: তোমার ওকে হিংসা হয়?

তুমি: হিংসা? কী জানি? হয়তোবা হয়, হয়তোবা হয়না। তুমি কোনটা চাও?

আমি: ওমা, আমি কী চাইবো?

তুমি : তোমার চাওয়ার উপরই তো সব। তোমার চাওয়াতেই তো আমি।

আমি: উফফ, আজকাল যে বড় রোমান্টিক ডায়লগ দিচ্ছ?

তুমি : কী করবো? তোমার তো আবার রোমান্স খুবই প্রিয়। এতে যদি তোমার মন ভালো হয়।

আমি: হয়েছে, রোমান্স করার জন্য আমার ও আছে। তোমার সাথে রোমান্স না করলেও চলবে।

তুমি: তাহলে শুধু শুধু আমাকে ঝুলিয়ে রেখেছো কেন?

আমি: ঝুলিয়ে কি আর শখ করে রেখেছি? তুমি যে আমার চিরকালের অভ্যাসের মতো। চাইলেই কি আর 
ছাড়া যায়?

তুমি : কী চাও আমার কাছ থেকে?

আমি: এই যে যখন তখন অকারণে তোমার কাছে আসতে চাই, বসতে চাই, হাসতে চাই, কাঁদতে চাই আর চাই তুমি সব শুনবে, সব বুঝবে আর যা চাইবো করবে। ব্যাস, এইটুকুই।

তুমি : ব্যাস, এইটুকু??? তোমার দেখি চাওয়ার শেষ নাই। লোভী কোথাকার।

আমি: আচ্ছা যাও, আমি না হয় লোভী। কিন্তু তুমি তো ঠিকই আমার সব আকাঙ্খা পূরণ করে এসেছো। 
যখন যা চেয়েছি সব দিয়েছ।

তুমি: কী করবো বলো? আমার কি আর কোনো উপায় আছে? আমি যে তোমার মনে বাঁধা পরে গেছি।

আমি: মুক্তি চাও?

তুমি : নাহ, আমার কী আর মুক্তি আছে? তোমার মনেই আমার জন্ম, তোমার মনেই আমার বাস, তোমার 
মনেই আবার হয়তোবা একদিন বিলীন হয়ে যাবো।

আমি: ওমা, তোমার মন খারাপ হচ্ছে?

তুমি : নাহ, আমার আবার মন।

আমি: ঠিক আছে যাও, আজ না হয় আমিই তোমার মন ভালো করার চেষ্টা করি। কী করি বলোতো? গান 
শুনবে?


আমি একা একা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে কড়াইয়ের গরম সরিষার তেলে রসুন আর পাঁচ ফোড়ন ছেড়ে দিতে দিতে গুনগুন করে গান ধরলাম ………তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম…….

©আমিনা তাবাস্সুম

কথোপকথন-আমিনা

রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

ক্রিটিক্যাল চিন্তাধারার দ্বিচারিতা!

ক্রিটিকাল চিন্তা খারাপ নয়, কিন্তু কথা হচ্ছে একটা মোরাল স্যান্টার্ডাড গ্রাউন্ড থাকে, যেখান থেকে আমরা সত্য বা মিথ্যা আখ্যায়িত করি। আর যাদের সেই মোরাল সান্টাড নাই তারাই সেই হঠাত বিস্ফোরণের ফসল, অ্যাকসিডেন্টাল এক্সিসটেন্ট যাকে বলে! বুদ্ধিমত্তা চর্চার ধারনা থেকে আমরা কখনো কখনো বিভিন্ন ন্যারেটিভে কোন একটা ঘটনাকে বিচার করি, যেমন কেউ কাউকে খুন করলে, কেন করল, ব্যাকগ্রাউন্ড কি, মেন্টাল স্টেট কেমন ছিল আরও হেনা তেনা। তারপর বিভিন্নভাবে যাস্টিফাই করি। 

আমরা ইসরায়েলর অন্যায়কে যাস্টিফাই করছি। আমরা বলি, তাদের রাইট আছে ডিফেন্ড করার। গাধার মতন কথা। বিচার করি না, কাদের কাছ থেকে তারা নিজেদের ডিফেন্ড করছে, প্রতিপক্ষ কি শক্তিমত্তায় তাদের সমান? ইসরায়েল যায়নিস্টরা উড়ে এসে জুড়ে বসা। এবং হলোকস্ট এর ইতিহাস বিক্রি করে খায়। 

ইহুদি নিধন এর যজ্ঞকে কোন সুস্থধারার মানুষই সমর্থন যেমন করবেনা ঠিক তেমনিই ফিলিস্তিনে "হামাস" নিধন এর নাম করে, নিজেদের জাতিকে "রক্ষা"র নাম করে হাজার হাজার মানুষদের, বিশেষ করে শিশু হত্যাকেও সমর্থন করা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে সম্ভব না। "হলোকস্ট" একটা হিস্টোরি, আর "ফিলিস্তিন" আমাদের এখনকার বর্তমান!!!! এই অ্যাডভান্সড মর্ডান যুগের বাস্তব বর্তমান, চোখের সামনে হত্যাযজ্ঞ। 

এটা কোন কমপ্লিকেটেড ম্যাটার না যার জন্যে ডিবেট লাগবে, এটা পানির মতন বাস্তব সত্য অন্যায়, জাতি নিধন, জুলুম। আর এটা কোন "মুসলিম" ম্যাটারও নয় যে ফিলিস্তিনের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে মুসলিম হতে হবে। হলোকস্টের ইতিহাসে, ইহুদিনিধন যজ্ঞের কাহিনীতে, যদি ইহুদি না হয়েও লোম দাঁড়িয়ে যায়, চোখে পানি আসে! তো ফিলিস্তিনিদের জন্যে এই দুমুখো হিপোক্রিট আচরণ কেন?? তার মানে কি দাঁড়ায়? 

এই দ্বিচারিতা কেন? আজকে আমার এক সনাতনধর্মী বান্ধবীর সাথে বলার সময় উঠে আসল, যে এই মসজিদ আক্রমনের ঘটনা যদি কোন প্রখ্যাত হিন্দু টেম্পলে হতো, তবে সোজা সাপ্টা খবরের এবং পৃথিবীর মানুষের কাছে হেডিং হতো  "টেররিস্ট অ্যাটাক" আর যদি ভ্যাটিকানে হতো, তবে তো তৃতীয় যুদ্ধ শুরু হতো। আমাদের ন্যারেটিভ কতটা বায়াস্ট, আমাদের চিন্তাধারা কতটা এককেন্দ্রিক! 

আমাদের সমাজ হিপোক্রেট দিয়ে ভর্তি যারা "প্রগতিবাদীর" নামে আশ্রয় নিয়ে আছে। এরাই সমাজ দূষণের মূল কারণ। এই দ্বিচারিতা চর্চাকারীরাই হচ্ছে, এক চোখা, ওয়ান আই।

রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১

তোমার জন্য - মোঃ ওয়ালিউল ইসলাম সাকিব

তোমার জন্য- মোঃ ওয়ালিউল ইসলাম সাকিব

তোমার জন্য এই পৃথিবী থেমে থাকবেনা,
তোমার জন্য পৃথিবীর কেউ অপেক্ষা করবে না,
তোমার জন্য কয়েক সেকেন্ড সবকিছু থেমে যাবে না।
সূর্য পূর্ব আকাশেই উঠবে,
......

পশ্চিম আকাশেই অস্ত যাবে।
তোমার জন্য এক মূহুর্ত ও থামবে না কোনোকিছু,
তোমার জন্য কারও জীবনের পথচলা থেমে থাকবে না,
তোমার অপেক্ষায় কেউ বসে থাকবে না।
একাকিত্বের কারাগারে তোমার জীবন দুঃসহ হয়ে উঠবে,

ঠিক সেই মূহুর্তে....
কেউ যদি তোমার অপেক্ষা করে,
তবে সেটা আমি।



কারও জীবনের পথচলা থামুক আর নাই থামুক,
আমার জীবনের পথচলা থেমে যাবে।
কেউ অপেক্ষা করুক আর নাই করুক,
আমি তোমার অপেক্ষা করব।
কেউ তোমার দিকে চেয়ে থাকুক আর নাই থাকুক,
আমি তোমার দিকে চেয়ে থাকব।
কেউ তোমার অনুভূতি বুঝুক আর নাই বুঝুক,
আমি তোমার অনুভূতি ঠিকই বুঝব।
তোমার চোখের ভাষা আর কেউ না বুঝলেও,
আমি ঠিকই তোমার চোখের ভাষা পড়ে নেব।



তোমার প্রতিক্ষায় আমি অনন্ত কাল কাটিয়ে দিব,
তোমার পথচেয়ে বসে থাকব সারাজীবন।
তোমার দেখা পাওয়ার আশায় এরকম শত শত জীবন,
আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।



পৃথিবীর সবকিছু চলতে থাকবে,
শুধু তোমার জন্য থমকে থাকব একমাত্র আমি,
থমকে থাকবে আমার জীবন।
তোমার জন্য আমি সব করতে পারি,
শুধু জীবন দিয়ে দেব না।

যদি জীবন দিয়ে দেই,
তাহলে তোমার জন্য আর কেউ অপেক্ষা করবে না,
তোমার জন্য পথচেয়ে থাকার আর কেউ থাকবে না,
তাই জীবন দেব না,


আমার জীবনের সব অর্জন তোমাকে উৎসর্গ করে দেব,
আমার অনুভূতির প্রতিটি বিন্দু দিয়ে,
আমি তোমাকে ভালোবাসব।


একটা পৃথিবীতে যত ভালোবাসা আছে,!
তার চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসা আমি তোমাকে দেব।
আমার সবকিছু শুধু তোমার জন্য;


এই কথাগুলো তোমাকে বলতে চেয়েছি বহুবার,
কিন্তু বলতে পারিনি,.....বলতে পারিনি,..
লিখে রেখেছি খাতায়।


আমার এই লেখা হয়ত তোমার হাতে পৌছবে,
হয়ত পৌছবে না।
তুমি হয়তবা বুঝতে পেরেছ,আমি তোমাকে ভালোবাসি,
হয়তোবা কখনোই........ বোঝনি আমার অনুভূতি।


হয়তোবা একদিন তোমার মস্তিষ্ক থেকে,
আমার স্মৃতি মুছে যাবে।
কিন্তু আমার মস্তিষ্ক থেকে,
কখনোই তোমার স্মৃতি মুছে যাবে না।


পৃথিবীর সব স্মৃতি মুছে গেলেও,
তোমার স্মৃতি কখনোই মুছে যাবে না।


তুমি আমাকে ভুলে গেলে....... যেতেও পার,
কিন্তু............ আমি তোমাকে কখনোই ভুলবনা।
আমি এই আশায় তোমার প্রতিক্ষায় থাকব,...যদি তুমি আস,
তুমি না আসলেও তোমার প্রতিক্ষায় সারাজীবন কাটিয়ে দেব।


অমলকান্তি - নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী---"অন্ধকার বারান্দা"

অমলকান্তি আমার বন্ধু,

ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।
রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না,
শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে
এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে,
দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।


আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!
ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,
জাম আর জামরুলের পাতায়
যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।


আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে।
মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে;
চা খায়, এটা-ওটা গল্প করে, তারপর বলে, “উঠি তাহলে।”
আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।


আমাদের মধ্যে যে এখন মাষ্টারি করে,
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত,
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল,
উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না।
অথচ, সকলেরই ইচ্ছেপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সেই অমলকান্তি–রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে
ভাবতে-ভাবতে
যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।

শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১

দারিদ্র্য রেখা - তারাপদ রায়

দারিদ্র্য রেখা - তারাপদ রায়


আমি নিতান্ত গরীব ছিলাম, খুবই গরীব।
আমার ক্ষুধার অন্ন ছিল না, আমার লজ্জা নিবারণের কাপড় ছিল না,
আমার মাথার উপরে আচ্ছাদন ছিল না।
অসীম দয়ার শরীর আপনার, আপনি এসে আমাকে বললেন,
না, গরীব কথাটা খুব খারাপ,
ওতে মানুষের মর্যাদা হানি হয়, তুমি আসলে দরিদ্র।

অপরিসীম দারিদ্র্যের মধ্যে আমার কষ্টের দিন,
আমার কষ্টের দিন, দিনের পর দিন আর শেষ হয় না,
আমি আরো জীর্ণ আরো ক্লিষ্ট হয়ে গেলাম।

হঠাৎ আপনি আবার এলেন, এসে বললেন,
দ্যাখো, বিবেচনা করে দেখলাম, দরিদ্র শব্দটিও ভালো নয়,
তুমি হলে নিঃস্ব।

দীর্ঘ নিঃস্বতায় আমার দিন রাত্রি, গনগনে গরমে ধুঁকতে ধুঁকতে,
শীতের রাতের ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে,
বর্ষার জলে ভিজতে ভিজতে,
আমি নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে গেলাম।
আপনার কিন্তু ক্লান্তি নেই, আপনি আবার এলেন,
আপনি বললেন, তোমার নিঃস্বতার কোনো মানে হয় না,
তুমি নিঃস্ব হবে কেন,
তোমাকে চিরকাল শুধু বঞ্চনা করা হয়েছে,
তুমি বঞ্চিত, তুমি চিরবঞ্চিত।

আমার বঞ্চনার অবসান নেই,
বছরের পর বছর আধপেটা খেয়ে, উদোম আকাশের নিচে রাস্তায় শুয়ে,
কঙ্কালসার আমার বেঁচে থাকা।
কিন্তু আপনি আমাকে ভোলেননি,
এবার আপনার মুষ্টিবদ্ধ হাত, আপনি এসে উদাত্ত কণ্ঠে ডাক দিলেন,
জাগো, জাগো সর্বহারা।
তখন আর আমার জাগবার ক্ষমতা নেই,
ক্ষুধায় অনাহারে আমি শেষ হয়ে এসেছি,
আমার বুকের পাঁজর হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে,
আপনার উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে আমি তাল মেলাতে পারছি না।

ইতিমধ্যে আরো বহুদিন গিয়েছে,
আপনি এখন আরো বুদ্ধিমান, আরো চৌকস হয়েছেন।
এবার আপনি একটি ব্ল্যাকবোর্ড নিয়ে এসেছেন,
সেখানে চকখড়ি দিয়ে যত্ন করে একটা ঝকঝকে লম্বা লাইন টেনে দিয়েছেন।
এবার বড় পরিশ্রম হয়েছে আপনার,
কপালের ঘাম মুছে আমাকে বলেছেন,
এই যে রেখা দেখছো, এর নিচে, অনেক নিচে তুমি রয়েছো।
চমৎকার!
আপনাকে ধন্যবাদ, বহু ধন্যবাদ!

আমার গরীবপনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার দারিদ্র্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার নিঃস্বতার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার বঞ্চনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার সর্বহারাত্বের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আর সবশেষে ওই ঝকঝকে লম্বা রেখাটি,
ওই উজ্জ্বল উপহারটির জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

কিন্তু, ক্রমশ, আমার ক্ষুধার অন্ন এখন আরো কমে গেছে,
আমার লজ্জা নিবারণের কাপড় এখন আরো ছিঁড়ে গেছে,
আমার মাথার ওপরের আচ্ছাদন আরো সরে গেছে।
কিন্তু ধন্যবাদ,
হে প্রগাঢ় হিতৈষী,
আপনাকে বহু ধন্যবাদ!

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সাধারণ মেয়ে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমি অন্তঃপুরের মেয়ে,

চিনবে না আমাকে।
তোমার শেষ গল্পের বইটি পড়েছি, শরৎবাবু,
‘বাসি ফুলের মালা’।
তোমার নায়িকা এলোকেশীর মরণ-দশা ধরেছিল
পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে।
পঁচিশ বছর বয়সের সঙ্গে ছিল তার রেষারেষি,
দেখলেম তুমি মহদাশয় বটে —
জিতিয়ে দিলে তাকে।

নিজের কথা বলি।
বয়স আমার অল্প।
একজনের মন ছুঁয়েছিল
আমার এই কাঁচা বয়সের মায়া।
তাই জেনে পুলক লাগত আমার দেহে —
ভুলে গিয়েছিলেম, অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে আমি।
আমার মতো এমন আছে হাজার হাজার মেয়ে,
অল্পবয়সের মন্ত্র তাদের যৌবনে।

তোমাকে দোহাই দিই,
একটি সাধারণ মেয়ের গল্প লেখো তুমি।
বড়ো দুঃখ তার।
তারও স্বভাবের গভীরে
অসাধারণ যদি কিছু তলিয়ে থাকে কোথাও
কেমন করে প্রমাণ করবে সে,
এমন কজন মেলে যারা তা ধরতে পারে।
কাঁচা বয়সের জাদু লাগে ওদের চোখে,
মন যায় না সত্যের খোঁজে,
আমরা বিকিয়ে যাই মরীচিকার দামে।

কথাটা কেন উঠল তা বলি।
মনে করো তার নাম নরেশ।
সে বলেছিল কেউ তার চোখে পড়ে নি আমার মতো।
এতবড়ো কথাটা বিশ্বাস করব যে সাহস হয় না,
না করব যে এমন জোর কই।

একদিন সে গেল বিলেতে।
চিঠিপত্র পাই কখনো বা।
মনে মনে ভাবি, রাম রাম! এত মেয়েও আছে সে দেশে,
এত তাদের ঠেলাঠেলি ভিড়!
আর তারা কি সবাই অসামান্য —
এত বুদ্ধি, এত উজ্জ্বলতা।
আর তারা সবাই কি আবিষ্কার করেছে এক নরেশ সেনকে
স্বদেশে যার পরিচয় চাপা ছিল দশের মধ্যে।

গেল মেলের চিঠিতে লিখেছে
লিজির সঙ্গে গিয়েছিল সমুদ্রে নাইতে —
বাঙালি কবির কবিতা ক’ লাইন দিয়েছে তুলে
সেই যেখানে উর্বশী উঠছে সমুদ্র থেকে —
তার পরে বালির ‘পরে বসল পাশাপাশি —
সামনে দুলছে নীল সমুদ্রের ঢেউ,
আকাশে ছড়ানো নির্মল সূর্যালোক।
লিজি তাকে খুব আস্তে আস্তে বললে,
‘এই সেদিন তুমি এসেছ, দুদিন পরে যাবে চলে;
ঝিনুকের দুটি খোলা,
মাঝখানটুকু ভরা থাক্‌
একটি নিরেট অশ্রুবিন্দু দিয়ে —
দুর্লভ , মূল্যহীন। ‘
কথা বলবার কী অসামান্য ভঙ্গি।
সেইসঙ্গে নরেশ লিখেছে, ‘কথাগুলি যদি বানানো হয় দোষ কী,
কিন্তু চমৎকার —
হীরে-বসানো সোনার ফুল কি সত্য, তবুও কি সত্য নয়। ‘
বুঝতেই পারছ
একটা তুলনার সংকেত ওর চিঠিতে অদৃশ্য কাঁটার মতো
আমার বুকের কাছে বিঁধিয়ে দিয়ে জানায় —
আমি অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে।
মূল্যবানকে পুরো মূল্য চুকিয়ে দিই
এমন ধন নেই আমার হাতে।
ওগো, নাহয় তাই হল,
নাহয় ঋণীই রইলেম চিরজীবন।

পায়ে পড়ি তোমার, একটা গল্প লেখো তুমি শরৎবাবু,
নিতান্তই সাধারণ মেয়ের গল্প —
যে দুর্ভাগিনীকে দূরের থেকে পাল্লা দিতে হয়
অন্তত পাঁচ-সাতজন অসামান্যার সঙ্গে —
অর্থাৎ, সপ্তরথিনীর মার।
বুঝে নিয়েছি আমার কপাল ভেঙেছে,
হার হয়েছে আমার।
কিন্তু তুমি যার কথা লিখবে
তাকে জিতিয়ে দিয়ো আমার হয়ে,
পড়তে পড়তে বুক যেন ওঠে ফুলে।
ফুলচন্দন পড়ুক তোমার কলমের মুখে।

তাকে নাম দিয়ো মালতী।
ওই নামটা আমার।
ধরা পড়বার ভয় নেই।
এমন অনেক মালতী আছে বাংলাদেশে,
তারা সবাই সামান্য মেয়ে।
তারা ফরাসি জর্মান জানে না,
কাঁদতে জানে। কী করে জিতিয়ে দেবে।
উচ্চ তোমার মন, তোমার লেখনী মহীয়সী।
তুমি হয়তো ওকে নিয়ে যাবে ত্যাগের পথে,
দুঃখের চরমে, শকুন্তলার মতো।
দয়া কোরো আমাকে।
নেমে এসো আমার সমতলে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাত্রির অন্ধকারে
দেবতার কাছে যে অসম্ভব বর মাগি —
সে বর আমি পাব না,
কিন্তু পায় যেন তোমার নায়িকা।
রাখো-না কেন নরেশকে সাত বছর লণ্ডনে,
বারে বারে ফেল করুক তার পরীক্ষায়,
আদরে থাক্‌ আপন উপাসিকামণ্ডলীতে।
ইতিমধ্যে মালতী পাস করুক এম . এ .
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে,
গণিতে হোক প্রথম তোমার কলমের এক আঁচড়ে।
কিন্তু ওইখানেই যদি থাম
তোমার সাহিত্যসম্রাট নামে পড়বে কলঙ্ক।
আমার দশা যাই হোক
খাটো কোরো না তোমার কল্পনা।
তুমি তো কৃপণ নও বিধাতার মতো।
মেয়েটাকে দাও পাঠিয়ে য়ুরোপে।
সেখানে যারা জ্ঞানী, যারা বিদ্বান, যারা বীর,
যারা কবি, যারা শিল্পী, যারা রাজা,
দল বেঁধে আসুক ওর চার দিকে।
জ্যোতির্বিদের মতো আবিষ্কার করুক ওকে —
শুধু বিদুষী ব’লে নয়, নারী ব’লে।
ওর মধ্যে যে বিশ্ববিজয়ী জাদু আছে
ধরা পড়ুক তার রহস্য, মূঢ়ের দেশে নয় —
যে দেশে আছে সমজদার, আছে দরদি,
আছে ইংরেজ জর্মান ফরাসি।
মালতীর সম্মানের জন্য সভা ডাকা হোক-না, বড়ো বড়ো নামজাদার সভা।
মনে করা যাক সেখানে বর্ষণ হচ্ছে মুষলধারে চাটুবাক্য,
মাঝখান দিয়ে সে চলেছে অবহেলায় —
ঢেউয়ের উপর দিয়ে যেন পালের নৌকো।
ওর চোখ দেখে ওরা করছে কানাকানি,
সবাই বলছে ভারতবর্ষের সজল মেঘ আর উজ্জ্বল রৌদ্র
মিলেছে ওর মোহিনী দৃষ্টিতে।
( এইখানে জনান্তিকে বলে রাখি
সৃষ্টিকর্তার প্রসাদ সত্যই আছে আমার চোখে।
বলতে হল নিজের মুখেই,
এখনো কোনো য়ুরোপীয় রসজ্ঞের
সাক্ষাৎ ঘটে নি কপালে। )
নরেশ এসে দাঁড়াক সেই কোণে,
আর তার সেই অসামান্য মেয়ের দল।

আর তার পরে?
তার পরে আমার নটেশাকটি মুড়োল,
স্বপ্ন আমার ফুরোল।
হায় রে সামান্য মেয়ে!
হায় রে বিধাতার শক্তির অপব্যয়!

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

ঠাকুরবাড়ীর আঙিনায়-জসীম উদ্দীন


 "যে সব কবিতায় এই আলো-আঁধারীর ছায়া থাকে, বোধহয় সেগুলোতে রস-উপভোগের একটি অপূর্ব আস্বাদ থাকিয়া যায়।"



রবীবাবুর লেখা পড়ে এই উক্তি ছিল, জসীম উদ্দীন এর। "ঠাকুরবাড়ির আঙিনায়" জসীম উদ্দীন দেখেছেন রবীবাবু আর অবনীন্দ্রনাথকে এক ঘরোয়া চোখে। আরও অনেক ব্যক্তিবর্গের কথাও উঠে এসেছে সযতনে। বইয়ের শেষে বিদ্রোহী কবিকে নিয়েও লেখা আছে, স্বাভাবিকভাবেই কেঁদেছি।
বিদ্রোহী কবির জীবনের অনেক বাঁকগুলো কান্না করতে বাধ্য করে। জসীম উদ্দীন লিখেছেন, কবি নজরুল যখন তার প্রথম ছেলে বুলবুলকে হারান, শত চিহ্ন জড়িত ঘর থেকে পালিয়ে কবি যেতেন ডি. এম লাইব্রেরীর কোলাহলের মাঝে, পল্লী কবির ভাষায়,


"যদি তিনি মনের সুখে 'সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে' লিখিতে পারিতেন, তবে সেই লেখা আরও কত সুন্দর হইতে পারিত।"


আমি "সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে" আবারও আওড়াই, কি করে পেরেছিলেন কবি তা লিখতে। ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয় নিয়ে এই রচনা সম্ভব!
সম্ভব, এদের দ্বারাই সম্ভব।
পল্লী কবি লিখেছেন,

"অপর কাহাকেও প্রশংসা করিতে পারিলে তিনি যেন কৃতার্থ হইয়া যাইতেন। অপরকে হেয় করিয়া নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করিতে তিনি কোনদিনই প্রয়াস পান নাই।"

বিদ্রোহী কবির বেদনাবহুল কিছু ঘটনাও জসীম উদ্দীন বর্ণনা করেছেন। যা পাঠককে নিজের মতন পড়ে নিয়ে ভাবতে হবে। কতই না অমানুষ হয়ে যাই আমরা কখনো কখনো। কষ্ট লাগে বিদ্রোহী কবির মাতৃতুল্য সেই হিন্দু রক্ষণশীল শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে। সমাজ তাকে ভালোই মূল্যায়ন করেছিল!

ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের কথা জানতে গিয়ে কিছু জানলাম পল্লী কবির জীবনের গানও, বিশেষ করে তার কৈশরের সেই ছোট্ট মনের কত স্বপ্ন, হতাশা, অপমান, কষ্ট। ঠাকুরবাড়ির অন্দর মহলে যাতায়াত শুরু হয় তার বন্ধুবর মোহনলালের হাত ধরে। জসীম উদ্দীনের লেখা পড়ে রবীঠাকুর মোহনলালকে চিঠিতে জানান,

"জসীম উদ্দীনের কবিতার ভাব ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। প্রকৃত হৃদয় এই লেখকের আছে। অতি সহজে যাদের লেখবার শক্তি নেই, এমনতর খাঁটি জিনিস তারা লিখতে পারে না।"


একটা চমতকার কথার উল্লেখ আছে, পল্লী কবি লিখেছেন, রবিঠাকুর খুব কষ্ট নিয়ে বলেন, তাকে নিয়ে অনেকেই যা খুশি, যখন তখন লিখেন। পল্লী কবির উত্তর ছিল,

"আপনি কবি, সাহিত্যিক, - আপনাকে নিন্দা করেও সাহিত্য তৈরী হয়। তাই আপনার নিন্দা করা সহজ।"


রবিঠাকুরের আক্ষেপ, লোকে মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে তো নিন্দে করে না।
পল্লী কবির উত্তর,

"মহাত্মা গান্ধী বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেও তাকে নিন্দে করে সাহিত্য তৈরী হয় না। আপনার সঙ্গে আপনার নিন্দুকেরাও কিছুদিন বেঁচে থাকতে চায়।"

এই স্থানে পড়ে আনমনেই হাসলাম, বাপুজীকে ভারতের মাটিতে এখন যা শুনতে হয়, রবিবাবু বাকহীন হয়ে যেতেন। আক্ষেপ করবার তো প্রশ্নই উঠেনা।


রবিবাবুকে নিয়ে পল্লী কবির উক্তি,

"কবির কাছ হইতে যখন ফিরিয়া আসিতাম, মনে হইত কোন মহাকাব্য পাঠ করিয়া এই ক্ষণে উঠিয়া আসিতেছি। সেই মহাকাব্যের সুরলহরী বহুদিন অন্তরকে সুখস্বপ্নে ভরিয়া রাখিত।"

 

"কবির মৃত্যু নাই একথা সত্য কিন্তু কবির সংস্পর্শে আসার সুযোগ যাহাদের হইয়াছে, তাহাদের মনের শূন্যতা কেহ কোনদিন পূরণ করিতে পারিবে না।"


পল্লী কবি অবনঠাকুরের সেই অনবদ্য চিত্রশিল্প "শাহাজাহনের মৃত্যু" তৈরি হবার কাহিনীও বর্ণনা করেছেন। বলা বাহুল্য পড়বার পর, নতুন করেই যেন সেই চিত্রকে আবিস্কার করি। মহান এই শিল্পীরা কী করে পারতেন! তাদের শিল্প তাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণের উপর নির্মাণ বলেই কি অমর!

পল্লী কবি, ঠাকুরবাড়ির কাহিনীর যবনিকা ঘটান এই শেষ কথাগুলো দিয়ে,


"প্রদীপ নিবিয়া গিয়াছে, মহানাটকের চরিত্রগুলি আজ একে একে বিদায় লইতেছেন। এ কাহিনী আর দীর্ঘ করিব না। যে নিয়োগ-ব্যথা আমার অন্তরের অন্ত:স্থলে মোহময় কান্নার বাঁশী বাজইয়া সেই অতীতকাল হইতে ছবির পর ছবি আনিয়া আমার মানসপটে দাঁড় করায়, তাহা আমরই নিজস্ব হইয়া থাকুক। লোকালয়ে টানিয়া আনিয়া আর তাহা ম্লান করিব না।"

পড়ছিলাম, পল্লী কবির "ঠাকুরবাড়ির আঙিনায়"।

রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

তোমাকে লেখা চিঠি - সাদিয়া রাশিদ

তোমাকে লেখা চিঠি - সাদিয়া রাশিদ

প্রিয় অর্ক

আজ অনেক দিন পর তোমাকে লিখছি।তোমার কথা  খুব একটা মনে পড়ে না আমার।মনে করার আর সময় পাই কই!সকালে উঠেই  রান্নাঘরে দৌড়...।উনার আবার প্রতিদিন পরোটা না হলে হয় না।শশুড় শাশুড়ির জন্যে রুটি আর বাচ্চাদের স্কুল টিফিন।সব যোগাড় যন্তর করে আবার নিজের অফিসে দৌড়! ৯ টার মধ্যে অফিসে না ঢুকলে বসের অগ্নিদৃষ্টি তো আছেই।আর ঢাকা শহরের যা অবস্থা এখন, উন্নতির জোয়ারে দেশ ভাসছে। সব পন্থাই তো প্রয়োগ হলো..এবার তোমার পছন্দের বামপন্থা টাই বা বাদ থাকবে কেন! আদর্শিক কমিউনিজম টা একটু এসে শিখিয়ে দিয়ে যাওতো সবাই কে! কি.দেশ.. রাজনীতি নিয়ে আগের মতোই ক্ষ্যাপা আছো? নাকি রিসার্চ আর নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত?

ক'দিন আগে তমাল এসেছিলো।তোমার খুব প্রশংসা করলো।বললো... ক্যামব্রিজে খুব ভালো একটা বিষয়ে রিসার্চার হিসেবে আছো,,মন প্রান দিয়ে কাজ করছো,, চশমা পড়া শুরু করেছো,চুলও খানিকটা সাদা হয়েছে। ওর কাছ থেকেই তোমার ঠিকানা চেয়ে নিলাম।এখনো বিয়ে করনি..এ খবরে কিঞ্চিৎ আহত হয়েছি ..এবং নিজেকে দোষারোপ করেছি। এখনো সেই রাগ অভিমান বয়ে বেড়াচ্ছ? বিয়ে করে..এবার একটু সংসারী হও। সারাজীবন একা থাকার দুঃসাহস ভুলেও করো না যেন!


আজ ক'দিন ধরে আমার বড় মেয়ে  মিনির জ্বর।মিনি ১০ বছরে পা দিলো এবার।অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি.. এক প্রকার জোর করেই।বস খুব নাখোশ ! প্রায় এটা ওটার জন্যে লাগাতার ছুটি নিয়েই যাচ্ছি।ক'দিন আগে ননদের বিয়ে,তার আগে শাশুড়ির অপারেশন, এর আগে উনার অফিসের সবাই কে দাওয়াত...আরো হাজারো সামাজিকতা তো আছেই.....................

চাকরি টা মনে হয় আর বাঁচানো গেলো না! 

সংসার নামক জাল টা একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে।ছেঁড়ার সাধ্য নেই আর! এই পৃথিবীময় আয়োজনের মাঝখানে তোমার চেনা সেই মৃন্ময়ী হারিয়ে গেছে।সেই মৃন্ময়ী, যাকে তুমি সেরা বিতার্কিক হিসেবে চিনতে.. আসর মাতানো আর হুল্লোড় করা যার সহজাত ছিলো... যার গানের মুগ্ধ শ্রোতা ছিলে তুমি.. যার লেখা কবিতায় তোমার ঘরের দেয়াল ভরে উঠতো...সেই মৃণ্ময়ী এখন মিনির মা কিংবা মিসেস রহমান কিংবা বউমা হয়ে....সংসারের বিভিন্ন ধাপে উত্তীর্ন!


 তুমি বলতে লেখালেখি টা ছেড়োনা কখনো..লিখতে থাকো...নাইবা দিলে সংবাদ পত্রে  ছাপতে ..তবু লেখাটা ছেড়োনা..লিখো নিজের জন্যে.. যা খুশি..যেটা খুশি.. ওটাই তোমার মনের শূন্যস্থান..বিরান জায়গা গুলোকে ভরিয়ে তুলবে...ওটাই তোমার জিরোবার জায়গা। তুমি ঠিক বলেছিলে..এই একটা মাত্র জায়গায় শান্তি মিলে যায়..!.যেদিন খুব মন খারাপ থাকে সেদিন খুব লিখি..এটা ওটা.. কবিতা..নিজের ভাবনা..স্বপ্ন.. দেশ,রাজনীতি... লিখে আমার ডায়েরীর পাতার পর পাতা ভরে তুলি।

আর মন খারাপ হলে "বোঝাপড়া" কবিতা টা আরো দশবার পড়ে নেই। 

মনটা ভালো নেই আজ।মেয়েটার জ্বর,অফিসের ঝামেলা,শশুড়ালয় ঘটিত সমস্যা.. সব মিলিয়ে

তো...আজ আমার মন খারাপের উপশম হলো--- তুমি...দেখি তোমাকে চিঠি লিখতে লিখতে মন কোথায় গিয়ে পৌঁছালো....! যে কলম টা দিয়ে লিখছি এটা হলো আমার সোনার কাঠি.. রুপোর কাঠি....

সাদা কাগজ ভরে উঠেছে কালো কালিতে আর আমার মনের ভার টাও কমে যাচ্ছে ক্রমশ।

অর্ক..শুধু আমার কথাই বলে যাচ্ছি...!দেখো..কেমন বদলে গেছি..এখন সারাটাক্ষন খালি "আমি.. আমি..আমার..আমার" করে বেড়াই...! ভাবতে পারো.. চারপাশের মানুষের চিন্তায় যার ঘুম হতো না..সেই মৃন্ময়ী এখন চার দেয়ালের বাইরে চিন্তাই করতে পারে না..??

অর্ক..!!জানি.. এ চিঠি তোমাকে ভীষন ভাবে ভাবিয়ে তুলবে..মন খারাপ হয়ে যাবে তোমার..

থাক না হয়...তোমাকে লেখা চিঠি আমার কাছেই রয়ে যাক... কোনদিন যদি ভুলে দেখা হয়ে যায়..সেদিন না হয় একশ একটা চিঠি একবারে নিয়ে নিও।

ভালো থেকো।

তোমার----

মৃন্ময়ী

পাঠ: বিনোদিনী

সোমবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২১

যখন মারা যাবো - মূল – মওলানা মুহাম্মদ জালালুদ্দিন রুমি

যখন মারা যাবো

মূল – মওলানা মুহাম্মদ জালালুদ্দিন রুমি

ভাষান্তরঃ – রহমান লতিফ
—————————-

যখন আমি মারা যাবো
যখন আমাকে কফিনে আটকে নাও,
কখনোই মনে করো না’গো তুমি –
হারিয়ে যাচ্ছি পৃথিবী থেকে আমি।

একফোঁটা চোখের জল ফেলো না’গো তুমি
করো না’গো আর্তনাদ কিংবা দুঃখ অনুভব—
আমি’তো পতিত হচ্ছি না কোন দানবের নরকে।

যখন দেখো আমার লাশ বহন করা হচ্ছে
আমার চলে যাওয়ায় ফেলো না’গো অশ্রু’
আমিতো যাচ্ছি না’গো সব ছেড়েছুড়ে,
আমি যে পৌঁছে যাচ্ছি— শ্বাশত প্রেমে...

আমাকে যখন কবরে রেখে যাও
বলো না’গো তুমি- চিরবিদায়
মনেরেখো কবর’তো কেবল একটিমাত্র পর্দা- যার পেছনে অনন্ত স্বর্গোদ্যান

আমাকে কেবল কবরে নামাতেই দেখবে
এখন আমাকে উঠে আসতে দেখো
কিভাবে ওখানেই হবে তার যবনিকা
যখন সূর্য অস্তমিত অথবা চাঁদ ডুবে যায়

মনে হয় যেন এখানেই শেষ
যা অনেকটা সূর্যাস্তের মতো
কিন্তু বাস্তবে,এটা কেবলই প্রভাত
যখন কবর তোমাকে আটকে দেয়
এটা সেই মুহূর্তই -যখন আত্মা চির-স্বাধীন

তুমি কি কখনো দেখেছো—
পৃথিবীতে রোপিত হয়েছে একটা বীজ
যেটা জেগে ওঠেনি নতুন জীবন নিয়ে,
কেন তবে তোমার সন্দেহ – মানুষ নামক বীজের উঠে আসাতে

তুমি কি দেখছো কখনো !
কু’পে নোয়ানো কোন বালতি
এসেছে ফিরে খালি,
একটা আত্মার জন্য তবে কেন ও’গো বিলাপ
যদি তা আবার আসিতে পারে ফিরে
যেভাবে ফিরে এসেছে ইউসুফ কু’প থেকে!

যখন শেষবারের মতো
তুমি তোমার মুখ বন্ধ করো,
তোমার শব্দ এবং আত্মা
এমন এক জগতে যুক্ত হবে—
যার নেই কোন সময়- যার নেই কোন ঠিকানা।

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...