রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

তোমাকে লেখা চিঠি - সাদিয়া রাশিদ

তোমাকে লেখা চিঠি - সাদিয়া রাশিদ

প্রিয় অর্ক

আজ অনেক দিন পর তোমাকে লিখছি।তোমার কথা  খুব একটা মনে পড়ে না আমার।মনে করার আর সময় পাই কই!সকালে উঠেই  রান্নাঘরে দৌড়...।উনার আবার প্রতিদিন পরোটা না হলে হয় না।শশুড় শাশুড়ির জন্যে রুটি আর বাচ্চাদের স্কুল টিফিন।সব যোগাড় যন্তর করে আবার নিজের অফিসে দৌড়! ৯ টার মধ্যে অফিসে না ঢুকলে বসের অগ্নিদৃষ্টি তো আছেই।আর ঢাকা শহরের যা অবস্থা এখন, উন্নতির জোয়ারে দেশ ভাসছে। সব পন্থাই তো প্রয়োগ হলো..এবার তোমার পছন্দের বামপন্থা টাই বা বাদ থাকবে কেন! আদর্শিক কমিউনিজম টা একটু এসে শিখিয়ে দিয়ে যাওতো সবাই কে! কি.দেশ.. রাজনীতি নিয়ে আগের মতোই ক্ষ্যাপা আছো? নাকি রিসার্চ আর নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত?

ক'দিন আগে তমাল এসেছিলো।তোমার খুব প্রশংসা করলো।বললো... ক্যামব্রিজে খুব ভালো একটা বিষয়ে রিসার্চার হিসেবে আছো,,মন প্রান দিয়ে কাজ করছো,, চশমা পড়া শুরু করেছো,চুলও খানিকটা সাদা হয়েছে। ওর কাছ থেকেই তোমার ঠিকানা চেয়ে নিলাম।এখনো বিয়ে করনি..এ খবরে কিঞ্চিৎ আহত হয়েছি ..এবং নিজেকে দোষারোপ করেছি। এখনো সেই রাগ অভিমান বয়ে বেড়াচ্ছ? বিয়ে করে..এবার একটু সংসারী হও। সারাজীবন একা থাকার দুঃসাহস ভুলেও করো না যেন!


আজ ক'দিন ধরে আমার বড় মেয়ে  মিনির জ্বর।মিনি ১০ বছরে পা দিলো এবার।অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি.. এক প্রকার জোর করেই।বস খুব নাখোশ ! প্রায় এটা ওটার জন্যে লাগাতার ছুটি নিয়েই যাচ্ছি।ক'দিন আগে ননদের বিয়ে,তার আগে শাশুড়ির অপারেশন, এর আগে উনার অফিসের সবাই কে দাওয়াত...আরো হাজারো সামাজিকতা তো আছেই.....................

চাকরি টা মনে হয় আর বাঁচানো গেলো না! 

সংসার নামক জাল টা একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে।ছেঁড়ার সাধ্য নেই আর! এই পৃথিবীময় আয়োজনের মাঝখানে তোমার চেনা সেই মৃন্ময়ী হারিয়ে গেছে।সেই মৃন্ময়ী, যাকে তুমি সেরা বিতার্কিক হিসেবে চিনতে.. আসর মাতানো আর হুল্লোড় করা যার সহজাত ছিলো... যার গানের মুগ্ধ শ্রোতা ছিলে তুমি.. যার লেখা কবিতায় তোমার ঘরের দেয়াল ভরে উঠতো...সেই মৃণ্ময়ী এখন মিনির মা কিংবা মিসেস রহমান কিংবা বউমা হয়ে....সংসারের বিভিন্ন ধাপে উত্তীর্ন!


 তুমি বলতে লেখালেখি টা ছেড়োনা কখনো..লিখতে থাকো...নাইবা দিলে সংবাদ পত্রে  ছাপতে ..তবু লেখাটা ছেড়োনা..লিখো নিজের জন্যে.. যা খুশি..যেটা খুশি.. ওটাই তোমার মনের শূন্যস্থান..বিরান জায়গা গুলোকে ভরিয়ে তুলবে...ওটাই তোমার জিরোবার জায়গা। তুমি ঠিক বলেছিলে..এই একটা মাত্র জায়গায় শান্তি মিলে যায়..!.যেদিন খুব মন খারাপ থাকে সেদিন খুব লিখি..এটা ওটা.. কবিতা..নিজের ভাবনা..স্বপ্ন.. দেশ,রাজনীতি... লিখে আমার ডায়েরীর পাতার পর পাতা ভরে তুলি।

আর মন খারাপ হলে "বোঝাপড়া" কবিতা টা আরো দশবার পড়ে নেই। 

মনটা ভালো নেই আজ।মেয়েটার জ্বর,অফিসের ঝামেলা,শশুড়ালয় ঘটিত সমস্যা.. সব মিলিয়ে

তো...আজ আমার মন খারাপের উপশম হলো--- তুমি...দেখি তোমাকে চিঠি লিখতে লিখতে মন কোথায় গিয়ে পৌঁছালো....! যে কলম টা দিয়ে লিখছি এটা হলো আমার সোনার কাঠি.. রুপোর কাঠি....

সাদা কাগজ ভরে উঠেছে কালো কালিতে আর আমার মনের ভার টাও কমে যাচ্ছে ক্রমশ।

অর্ক..শুধু আমার কথাই বলে যাচ্ছি...!দেখো..কেমন বদলে গেছি..এখন সারাটাক্ষন খালি "আমি.. আমি..আমার..আমার" করে বেড়াই...! ভাবতে পারো.. চারপাশের মানুষের চিন্তায় যার ঘুম হতো না..সেই মৃন্ময়ী এখন চার দেয়ালের বাইরে চিন্তাই করতে পারে না..??

অর্ক..!!জানি.. এ চিঠি তোমাকে ভীষন ভাবে ভাবিয়ে তুলবে..মন খারাপ হয়ে যাবে তোমার..

থাক না হয়...তোমাকে লেখা চিঠি আমার কাছেই রয়ে যাক... কোনদিন যদি ভুলে দেখা হয়ে যায়..সেদিন না হয় একশ একটা চিঠি একবারে নিয়ে নিও।

ভালো থেকো।

তোমার----

মৃন্ময়ী

পাঠ: বিনোদিনী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...