শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১

অনু গল্প: রূপকথার শেষটুকু..#সাদিয়া রশিদ

অনু গল্প: রূপকথার শেষটুকু..#সাদিয়া রশিদ


রূপকথায় যেমন থাকে--"অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বাস করিলো"- এমনি একটা স্বপ্নের ঘোরে বসবাস সেমন্তীর। শিশিরে পা ভিজিয়ে,ফুলের গন্ধ বুকে নিয়ে সকাল হয় তার। প্রজাপতির পেছনে ছুটে ক্লান্ত হয়ে অপরাহ্ন হয়। সোনাঝরা বিকেলে সূর্য টাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সন্ধ্যে গড়ায়। বাবা-মার রাজকন্যা,আহ্লাদী-অভিমানী সেমন্তীর তারপরও কিসের এতো উদাসীনতা, কোথা হতে মেঘ কালো করা বিষণ্ণতা এসে গ্রাস করে নিয়ে যায় তাকে! আহারে মেয়ে !  -এক বুক ভাঙা কষ্ট আছে বৈকি তার! দেখি আমার এই গল্প একটু খানিক হলেও সেমন্তীর কষ্টে সুখের প্রলেপ দিতে পারে কিনা!!

কোন একদিন......
একদিন ঝুম বৃষ্টি দুপুরে দরজায় ঠক ঠক শব্দ। সেমন্তী দরজা খুললে ভেজা শরীরে দেখতে পেলো নিলয় কে। দুই জোড়া চোখ একে অন্য কে দেখছে। সেমন্তীর বড় মায়া হলো...বেচারা কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 
"আমি নিলয়.. এটা কি ৩৭/এ?" 
সেমন্তী : না,আপনি ভুল বাসায় এসেছেন...ভেতরে আসুন...ভিজে যাচ্ছেন..দাঁড়ান টাওয়েল নিয়ে আসি।

একপ্রকার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভেতরে ঢুকলো নিলয়। 
নিলয়: এভাবে স্ট্রেঞ্জার বাসায় ঢুকানো কি ঠিক হলো? খারাপ মানুষ ও তো হতে পারি আমি!! 

সেমন্তী চুপ করে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে। নিলয় খুব খেয়াল করে দেখছে সেমন্তীকে। সাধারন চেহারার শ্যামা মেয়ে..কি যেন আছে তবু..,,,,, চোখ দুটো মায়াকাড়া.. বিষন্ন.. কাছে টানে খুব.. বোঁচা নাক চেহারার মিষ্টি ভাব টা বাড়িয়ে দিয়েছে, বাঙালী শারীরিক গড়ন.. জলপাই রঙের সালোয়ার কামিজ পরনে। কি স্নিগ্ধ লাগছে? 
সেমন্তী চা এগিয়ে দিলো। 

নিলয়: ধন্যবাদ চায়ের জন্য। বৃষ্টি থেমে গেছে। আজ তাহলে আসি। সবকিছুর জন্য অনেক ধন্যবাদ।আপনার নাম টা জানা হলো না। 
সেমন্তী : আমি সেমন্তী... 
নিলয়: বাহ..সুন্দর নাম। মানে সাদা গোলাপ? 

সেমন্তী দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিলয়ের চলে যাওয়া দেখলো। 
সেমন্তী -নিলয় কাহিনীর এখানেই সূত্রপাত। তারপর যা হয়... নিলয়-সেমন্তীর ভালোবাসার দিবস-রজনী।মাঝে মাঝে সেমন্তী কে খুব আনমনা লাগে... নিলয় জানতে চায়.

"এতো কি ভাবো তুমি সেমন্তী?
"সেমন্তী হাসে শুধু!চুপ করে থাকে। 
নিলয়: কিছু লুকিও না আমার কাছে। কষ্ট থাকলে বলো আমাকে..শুষে নিবো সব কষ্ট তোমার। 
সেমন্তী : নিলয়.. আমাদের খুব সুখের সংসার হবে দেখে নিও.. খুব ফুটফুটে একটা মেয়ে বাবুও থাকবে আমাদের। নাম রাখবো... "নয়নতারা" 
নিলয়: আর বাবুর নাক তোমার মতো বোঁচা হবে, কারনে-অকারনে অভিমানে গাল ফুলাবে..আর মা-মেয়ে মিলে আমার জীবনের বারোটা বাজাবে। 

আজ তাদের ভালোবাসার তিন বছর পূর্তি। 
নিলয় দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে নয়নতারা ফুটে আছে। সেমন্তীর কবরে নিলয় নিজ হাতে অনেক নয়ন তারা গাছ লাগিয়েছে। এক বছর হলো সেমন্তী চলে গেছে তাকে ছেড়ে.. রক্তের খারাপ অসুখ টার সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেছে মেয়েটা। নিলয়ের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। সেমন্তী কে হারানোর বেদনা সহ্য করার মতো ক্ষমতা বিধাতা তাকে দেয়নি। 

পুনশ্চ: গল্পের শেষটা এমনও হতে পারতো..সেমন্তী সুস্থ হয়ে গেলো। তাদের কোল জুড়ে "নয়নতারা".. তাদের জীবনটা রূপকথার গল্পের মতো কেটে গেলো! চারিদিকে হাসি আনন্দ রাশি রাশি। কিন্তু জীবন তো গল্প নয়!

©সাদিয়া রশিদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...