মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০

আমি পুরুষ!! আমি পুরুষ!! -সাবিহা রুমি

-সাবিহা রুমি


আজীবন আমি এমন 

অপরিপক্ব আমার বালক মন, 

এক বুক হাহাকার,

অশান্ত আমার প্রাণ,

অফুরন্ত লোভ, 


ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিতে গোপন লেলিহান লালাক্ষরণ, 

অতৃপ্তিতে ভরা আত্মা , 

আমার বিকারগ্রস্থ যৌবন, 

বেশিমাত্রায় উদার চিন্তাজগৎ।

 

ঘোলাটে প্রেমিক চোখ,

সব বুঝেও চুপচাপ ঘুমন্ত বিবেক,

সদা জাগ্রত চাহিদা চিত্তরস

হা হা হা.....


অশালীন চনমন এই মন।

জরাগ্রস্ত শরীরে নিস্তেজ ঘোড়া তবুও 

টগবগ আবেগ লাগামহীন, 

আহহহ....

 

পঁচে যাওয়া পুঁজের মতো নোংরা চাহিদা,

মুখ ভরতি আমার জমে শুধুই লালা,

উফফফ এ এক ক্লান্তিহীন পরিক্রমা।


ওরে, এ কেমন কঠোর বাস্তবতা!

আমিতো শুধুই কিছুটা বেচারা! 

যুবক কিংবা বৃদ্ধ 

আমি সর্বদা শুদ্ধ!


আমি শ্রেষ্ঠ, আমি বলবান,

তাই সদা চলে আমার নেত্রীত্বদান।

যুবক কিংবা বৃদ্ধ 

আমি সর্বদা শুদ্ধ!

বিচক্ষণ বা শ্রেষ্ঠ মানুষ 

হুম, আমি পুরুষ!! আমি পুরুষ!!

বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

রাত ভরে বৃষ্টি- বুদ্ধদেব বসু

 


রাত ভরে বৃষ্টি- বুদ্ধদেব বসু

শেষ করলাম, পাশাপাশি থেকেও সম্পর্কগুলো কখন যে মলিন হয়ে যায় বোঝা দায়। আমরা নিজেদের জন্যে এক বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্বের মানদন্ড তৈরি করে কখন যে তা নিজেরাই প্রতিনিয়ত লংঘন করি, টেরও পাইনা। অথচ সময় গড়ায় হাতের থেকে বালু পরে যাবার মতন, নিঃস্ব করে। পাশাপাশি থেকেও অন্যের মনের গভীরতাটা ঠিক আর ছোঁয়া হয়ে উঠেনা। অপর পক্ষের মনের কথা বুঝে নেবার জন্যে চলে, এক মিথ্যে প্রতারনা। নিজস্ব চিন্তায় আমরা ঘোর লাগানো কিছু শব্দের বেড়াজাল কল্পনা করে নেই, নিজেদের সেই আত্ম-অহমিকাকে তৃপ্ত করতে।

সম্পর্কে শারীরিক না মানসিক, কোন যোগটার বেশি আধিপত্য তা ঠিক ধোঁয়াটে এক রহস্য। অথচ, মহাকালের নির্দয় কোপে ভেঙে পরা সেই শারীরিক যোগকে তুচ্ছ মনে করলে, দিনশেষে বোঝা যায়, পূজনীয় "মানসিক"যোগে তার সে কি ভীষন আঘাত!

দিন শেষে "বিবাহ" এর দ্বারা অর্জিত সম্পর্কের দাবিটাই থাকে সত্যি। বাকি সব এক দমকা হাওয়ার মতন, খানিক এলোমেলো করে সময়ের অতলে হারিয়ে যায়।

আমরা খেলাটা খেলি আসলে কার সাথে?


P.S. The novel Raat Bhore Brishti was published in 1967 and was banned by a lower court for vulgarity after a case was filed by a college student in 1969. The case was dismissed and ban reversed in 1973.

মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০

নিয়তি আমাকে দেয় নি সুযোগ - সাবিহা রুমি

নিয়তি আমাকে দেয় নি সুযোগ - সাবিহা রুমি


নিয়তি আমাকে দেয় না সুযোগ,
এ এক অন্তহীন পথ...
কোন সীমান্তে হবে সমাপ্তি জানা নাই আমার ।

যেন আমি এক অপরাধী আসামী আবার
আমি নিজেই কিন্তু নিজের বিচারক
শাস্তি বা মুক্তি যা দিব সবই আমার।
ক্ষত বা অক্ষত অবস্থান সবই তো আমার !
অভাগী বা ভাগ্যবান সবই আমি
নিয়তি আমায় সব উজাড় করে দিয়েও যেন দিলো না কিছুই ।
এ এক অন্য রকম খেলা যেন,
আমি খেলোয়াড় আবার আমিই দর্শক
আমি জিতি আবার আমিই হেরে যাই।
মাঝেমাঝে নিজেকে অনেক উদার এক দাতা মনে হয়
ঠিক যেন ওই আকাশের মতন,
আবার মাঝেমাঝে মনে হয় ,একটু খানি ত্রানের আশায়..
সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেও খালি হাতে ঘরে ফিরা
এই আমি এক অসহায় সম্বলহীনা ।

এ এক নাম না জানা অন্তবিহীন পথ ,
ক্লান্ত হয়ে পথচলা ধীর হবে কিন্তু থামা যাবে না।
আমি চলছি. . . .

মাগো, তোমার কি কখনো সেই ছোট্ট বালিকা হতে ইচ্ছে করে?

মাগো, তোমার কি কখনো সেই ছোট্ট বালিকা হতে ইচ্ছে করে?
- সাবিহা রুমি


মাগো, তোমার কি কখনো সেই ছোট্ট বালিকা হতে ইচ্ছে করে আমার মতন ?

আমার চুড়ি ফিতা আর রিবন দিয়ে সাঁজতে ইচ্ছে করে ?
প্রজাপতির পাখা আর নানান রঙের পুরনো কাপড়ে বানানো পুতুল দিয়ে খেলতে ইচ্ছে করে?

ঋণ মুক্ত দায়ভারহীন অবুঝ একটি বালিকার মতন,
হাহা হি হি কলকল হাসির জোয়ারে ভাসতে ইচ্ছে করে?

মাগো, তোমার কি কখনো সেই ছোট্ট বালিকা হতে ইচ্ছে করে আমার মতন ?

আমার মতন সেই ছোট্ট বেলার পড়ার ঘরটিতে বসে আকাশ, বৃষ্টির জল ছুঁতে ইচ্ছে করে?

মা, তোমারও কি কখনো কখনো সব ছেড়ে ছুঁড়ে এক দৌড়ে তোমার বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পরতে ইচ্ছে করে ?
মা, মাগো ,তোমারও কি
ঠিক আমাদের মতনই একটি দুঃখিনী মা ছিল?

মা,তোমারও কি
ঠিক আমার মতন হারিয়ে ফেলা একটা একটা ছোট্ট বেলা ছিল?

সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

ফিরে আসিস আবার যদি পারিস.. Sabiha Rumi

ফিরে আসিস আবার যদি পারিস
তোর সাথে আবার দেখা হবে এই আশায় কেটে গেল অনেকটা কাল।
তোর সাথে আবার দেখা হলে
বলে দিবো সব হারানোর কথা ,
ফিরিয়ে নেবো সেই ভুলে ভরা ওয়াদা,
বলে দেবো সব না বলা কষ্ট
ভাংগা গড়ার বেদনা গাঁথা
শুনিয়ে দেব বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখা স্বপ্ন কথা,
তোর সাথে দেখা হলেই হয়ে যাব সেই বাইশ ছেরে তেইশে পরা ফরিং ,
কল্পনার নদ না
সত্যিকারের বালুর পথ,
 লাল হলুদ নীলচে শাড়ির রং,
আর শান্ত ধোয়াটা মেঘজাল
আমরা হাটবো ওই সেই নদীর পার।
চুকিয়ে দেবো সব দেনা
চেয়ে নিবো আমার পাওনা
ভোরের কুয়াশা , দুপুর এর তাপ ,
বিকেলে হলদেটে রোঁদ,
সন্ধে বেলার আকাশ আর
শেষ সীমন্তে  আঁকা ময়ূরকন্ঠি নীলরং ,
আবার নতুন করে ছুঁয়ে নেবো সব
তোর হাতে রেখে হাত ।
তোর সাথে দেখা হবে আবার ,এই আশায় কাটিয়ে দিবো আরো অনেকটা কাল
ফিরে আসিস আবার যদি পারিস
তোর সাথে দেখা হবে আবার ,
এই আশায় কেটে যাচ্ছে অনন্তকাল

বুধবার, ৩ জুন, ২০২০

মাগো, ওরা বলে – আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

‘কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর, আমি ডালের বড়ি
শুকিয়ে রেখেছি—
খোকা তুই কবে আসবি!
কবে ছুটি?’

চিঠিটা তার পকেটে ছিল,
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।

‘মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা, তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরী হচ্ছে।
তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না বাড়ী ফিরবো।
লক্ষ্মী মা রাগ ক’রো না,
মাত্রতো আর কটা দিন।’



‘পাগল ছেলে’ ,
মা পড়ে আর হাসে,
‘তোর ওপরে রাগ করতে পারি!’

নারকেলের চিঁড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে
এটা সেটা আরো কত কি!
তার খোকা যে বাড়ী ফিরবে!
ক্লান্ত খোকা!

কুমড়ো ফুল
শুকিয়ে গেছে,
ঝ’রে প’ড়েছে ডাঁটা;
পুঁইলতাটা নেতানো,—
‘খোকা এলি?’

ঝাপসা চোখে মা তাকায়
উঠোনে, উঠোনে
যেখানে খোকার শব
শকুনিরা ব্যবচ্ছেদ করে।

এখন,
মা’র চোখে চৈত্রের রোদ
পুড়িয়ে দেয় শকুনিদের।
তারপর,
দাওয়ায় ব’সে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে,
খোকা তার
কখন আসে! কখন আসে!

এখন,
মা’র চোখে শিশির ভোর,
স্নেহের রোদে
ভিটে ভরেছে।

ক্ষেতমজুরের কাব্য - নির্মলেন্দু গুণ

মুগুর উঠছে মুগুর নামছে
ভাঙছে মাটির ঢেলা,
অাকাশে মেঘের সাথে সূর্যের
জমেছে মধুর খেলা।
ভাঙতে ভাঙতে বিজন মাঠের
কুয়াশা গিয়েছে কেটে,
কখন শুকনো মাটির তৃষ্ণা
শিশির খেয়েছে চেটে।
অতটা খেয়াল রাখে নি কৃষক
মগ্ন ছিল সে কাজে,
হঠাৎ পুলক পবনে হৃদয়
পুস্পিত হলো লাজে।
ফিরিয়া দেখিল বধূটি তাহার
পেছনে অালের 'পরে
বসে অাছে যেন ফুটে অাছে ফুল
গোপনে চুপটি করে।
সামনে মাটির লাল সানকিটি
জরির অাঁচলে বাঁধা,
অাজ নিশ্চয় মরিচে রসুনে
বেনুন হয়েছে রাঁধা।
হাসিয়া কৃষক মরাল বাঁশের
মুগুর ফেলিয়া দিয়া
কামুক অাঁখির নিবিড় বাঁধনে
বাঁধিল বধূর হিয়া।
বরুণ গাছের তরুণ ছায়ায়
দু'জনে সারিল ভোজ,
বধূর ভিতরে কৃষক তখন
পাইল মনের খোঁজ।
মেঘ দিল ছায়া, বনসঙ্গমে
পুরিল বধূর অাশা-;
মনে যা-ই থাক, মুখে সে বলিল:
'মরগে' বর্গা চাষা।'
শব্দটি তার বক্ষে বিধিল
ঠিক বর্শার মতো,
'এই জমিটুকু অামার হইলে
কার কী- বা ক্ষতি হতো ?'
কাতর কন্ঠে বধূটি শুধাল:
অাইছ্যা ফুলির বাপ,
অামাগো একটু জমিন অবে না?
জমিন চাওয়া কি পাপ ?'
'খোদার জমিন ধনীর দখলে
গেছে অাইনের জোরে,
অামাগো জমিন অইব যেদিন
অাইনের চাকা ঘোরে।'
অসহায় বধূ জানে না নিয়ম
কানুন কাহারে বলে-;
স্বামীর কথায় চোখ দু'টি তার
সূর্যের মতো জ্বলে।
'বলদে ঘোরায় গাড়ির চাক্কা
নারীর চাক্কা স্বামী-;
অাইনের চাকা অামারে দেখাও
সে- চাকা ঘুরামু অামি।'
কৃষক তখন রুদ্র বধূর
জড়ায় চরণ দু'টি,
পা- তো নয় যেন অন্ধের হাতে
লঙরখানার রুটি।
যতটা অাঘাত সয়ে মৃত্তিকা
উর্বরা হয় ঘায়ে,
ততটা অাঘাত সইল না তার
বধূর কোমল পায়ে।
পা দু'টি সরিয়ে বধূটি কহিল:
'কর কী? কর কী? ছাড়ো,
মানুষে দেখিলে জমি তো দেবি না
দুন্যাম দেবি অারো।'
পরম সোহাগে কৃষক তখন
বধূর অধর চুমি,
হাসিয়া কহিল: 'ভূমিহীন কই?
অামার জমিন তুমি।'
অাকাশে তখনো সূর্যের সাথে
মেঘেরা করিছে খেলা,
মুগুর উঠছে মুগুর নামছে
ভাঙছে মাটির ঢেলা।

শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০

Lives of the Khulafaa: Abu Bakr al-Siddiq - Ali's Oath & the Army of Usama ibn Zayd (Part 4)

Abu Bakr and Ali b. Abi Talib two great companions of the Prophet (S). While one is the noble father-in-law of the Messenger of Allah, the other is the noble son-in-law. 


In this episode, Shaykh Dr. Yasir Qadhi discusses the facts and myths surrounding the issue of Ali (R) giving the oath of allegiance to Abu Bakr (R), and how Usama ibn Zayd became the leader of the army of the Muslims. 

Join Shaykh Dr. Yasir Qadhi as he continues with the life and times of Abu Bakr al-siddiq - The Successor of the Prophet! 


Khilafa of Abu Bakr As-Siddiq, who was given the title "Khalifatu Rasulullah". Also discussed is the incident of the "army of Usama ibn Zayd" and Ali not giving his bayyah (allegiance) to Abu Bakr [r] until some time later. 


Incident of "Army of Usama ibn Zayd": 

-2.5 days before the Prophet (saw) passed away, while sick with fever, one of the final commands was to fight in the direction of Tabuk (towards the Roman empire). 

-Usama ibn Zayd was appointed to lead the army by the Prophet [s] but the people questioned it. The Prophet [s] then said: "If you are talking about his appointment, you also spoke about his father's appointment, wallahi he (father/zayd) was worthy of being a leader (battle of Mu'ta), and he was one of the most beloved to me, and he (Usama) is one of the most beloved to me in the world."

-Usama ibn Zayd was the son of Zayd ibn Harith (the adopted son of the Prophet [s]) and Umm Ayman (Habishiya - a gift from Abdullah to Amina and a caretaker to the Prophet [s]). He was born in the house of Khadija [r] and his nickname was "Hibb al Rasulullah." -Abu Bakr's [r] first decision as the Khalifa was to deal with the army of Usama ibn Zayd, and settle the tension among the sahaba who questioned his age and maturity. 

-Shia's and Sunnis differ on certain details.

-Abu Bakr gave Usama some powerful advice: "Do not be treacherous, do not steal booty, do not break promises, do not mutilate, do not cut off trees, do not kill animals unless you will eat them when you come across those worshipping in their homes, leave them alone in their worship. Say Bismillah when people give you food and fight the army when you see it." 



Incident of Ali not giving his bayaa (allegiance) immediately: 

-It is human nature that there may have been minor differences of opinion and friction even between sahaba. This does not impact theology. -Dwelling on the past, it is unnecessary and unhealthy. Allah will judge on what happened not us. 

-The minor opinion is (Ibn Kathir) says that Ali (r) initially gave an oath, but then AB had asked him to give it a second time for the sake of the people.

-Ali (ra) overall approved and accepted the khilafa of Abu Bakr, Omar and Uthman [r]. Yet Ali (ra) was still a major player in the government system. Even shi'a agree on this point. 

-Abbas (ra) said to Ali (ra) "let's go ask the Prophet (s) who shall be the leader next? If it is amongst us (Banu Hashim), we shall know. If it is to other than us, we shall know..." Ali (ra) said, "If I were to ask the Prophet (s) now and he does not give it to us, then the people will later not give it to us either. Therefore I will not ask.." 

-It is said that Ali (r) didn't give the oath of allegiance for 6 months. 

-Mainstream opinion is that AB noticed it, and asked Ali to give eventually. 


• Yet another hadith in Sahi Muslim says: Ali [r] told Abu Bakr [r] that "we do not deny any of your blessings, but perhaps you have taken this matter from us. Abu Bakr [r] began to cry and then swore by Allah and remarked: "It is more beloved to me that I treat the family of the Prophet [s] more nicely than my own family. Ali (r) then agreed to give the bayyah the next day and they both publicly resolved the matter.

• Hadith mentions Abu Bakr [r] was sitting in mimbar and didn't see Ali [r], so he asked for Ali [r] to come forward. He asked, "do you wish to disunite the ummah?" Ali [r] said no, and had given the oath.

• Sahih Muslim mentions Aisha [r] saying that Ali [r] hadn't given oath until after Fatima [r] died.

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

প্রত্যাঘাত


অভিশপ্ত কাল পর্ব:

-"দামিনী, কোন কিছুর বিসর্জন দিতে পারাও শক্তির পরিচয় দেয়। অাজ নি:সার্থভাবে তোমাকে বিসর্জন দিচ্ছি বলে ভেবনা আমি কাপুরুষ, ভীতু। একবার ভাবো প্রতিদিন নিজের ফ্যাকাশে , নি:স্বাড় রুপ আয়নায় দেখে, কতবার দগ্ধ হবো! এই মনের অাগুনে জ্বলতে, ক'জন দেখবে অামাকে? ক'জন বুঝবে রোজ কতবার মৃত্যু হচ্ছে আমার!"

-"নি:স্বার্থ ত্যাগ করে মহান হতে চাও! আমি তবুও তোমায় কাপুরুষ বলব। সমর্পিত একজনের হাত ধরার সাহস করতে পারলেনা!! তোমার জন্যে বদ্ধ দুয়ারে রোজ ঠুকরে ঠুকরে মরাই শ্রেয়, প্রাপ্য।"

-"দামিনী! অভিশাপ দিলে!"

-"তোমাকে অভিশাপ দেব! নাহ! কিন্তু মনে রেখো, কারোর বোবা কান্নাও অভিশাপ হয়ে ফেরে। ভালো থেকো...."

শব্দহীন মুর্হুতগুলো কখনো কখনো স্বর্গের মতন হয়, যখন প্রেয়সীর দিকে নির্বাক অপলক ভালোবাসার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকা যায়। ঠিক একিই শব্দহীন মুহুর্ত জ্বলন্ত নরক হয়, যখন প্রেয়সীর দৃষ্টিতে থাকে ঘৃণার, ধিক্কারের নিষ্পলক চাহনি।

দামিনী ঘুরে চলে যেতে থাকে... বাতাসে ভাসে বোবা কান্না।

***********************


- এমন চটজলদি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? তাও আবার এত বড় বিষয় নিয়ে? এমন হুটহাট কিছু করবার মানুষ তো আপনি নন সুব্রতদা?
- সবকিছু অত সময় নিয়ে ভেবেও দেখা যায় না, বিনোদ।
- কিন্ত তাই বলে এই! সম্পর্কের এই বেড়াজাল থেকে নিজেকে পারবেন এত দ্রুত মুক্ত করতে? আর, এতো প্রতিজ্ঞা, শপথ! সেসব কি তাহলে ? শুধুই কি আবেগের তোড়ে ভেসে যাওয়া কিছু স্তুতি বাক্য?

- বিনোদ! মাফ কর আমাকে। তুমিও কি এমন ভাবছো আমাকে? তুমিও? তুমি জানো কতটা নি:স্বার্থ, নির্মোহ আমার ভালোবাসা। সে আমার প্রেম নয়, বরং প্রার্থনায় পাওয়া বর। দোহাই, অন্তত তুমি এমন নিষ্ঠু র কথা বলে, আমার ক্ষতকে আরও রক্তাক্ত কর না।

- দু:খিত সুব্রত বাবু, আমি মানতে পারছি না। ক্ষমা করবেন আমাকে। হয়ত নিজেও মেয়ে বলে বুঝতে পারছি। আপনার সিদ্ধান্ত চরম, দূর্দান্ত বলতেই হয় সুব্রত বাবু! আপনি যা করতে চলছেন, তা কোন বড় ত্যাগ নয় মনে রাখবেন। বাহ। যখন মনে হলো, কোন দাবী খাটাতেই পারবেন না, কোন স্বার্থই যখন আর হাসিলও হচ্ছে না, তখন একদম নি:স্বই না হয় করে দেই তাকে! তাই নয় কি?

- বিনোদিনী?

- চুপ। একদম চুপ। আপনি কখনোই প্রেমিক হতে পারেন না। আপনি প্রতারক। নাহ, তার চাইতেও নিকৃষ্ট আপনি। আপনি একজন খুনি। দামিনীকে জীবন্ত হত্যা করলেন সুব্রতদা। জীবন্ত একটি লাশ বানিয়ে দিলেন তাকে, বাহ। ওর জীবন্ত মৃত্যদেহের উপর দিয়ে শুরু করুন আপনার যাত্রা। ভালো থাকবেন। আর হ্যা, প্রার্থনা করি, আপনার ঐ মুখ যেন কখনোই আমার সামনে না আসে।

ঝড়ের বেড়ে এক রাশ ঘৃণা নিয়ে বিনোদিনী দরজার দিকে এগোয়। যাবার বেলায় তার শাড়ির আঁচলে সাথে পড়ার টেবিলে থাকা, দামিনীর দেয়া স্মৃতি, একটি ছবির ফ্রেম গড়িয়ে পরে। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ, এই আবদ্ধ ঘরে যেন বিনোদিনীর অব্যক্ত কান্নার প্রতিধ্বনি।
বিনোদিনী থেমে যায়। ঝুঁকে বসে, আলতো করে কাঁচ সরিয়ে ভাঙা ফ্রেম হতে ছবিটি হাতে তুলে নেয়, দামিনীর হাতের আঁকা ছোট্ট একটি তৈল চিত্র। সে জানে, কারণ এই ফ্রেমটিতো তারই এনে দেয়া। সুব্রত এগিয়ে আসে নেবার জন্যে কিন্ত থমকে দাঁড়ায় বিনোদিনীর অগ্নিঘৃণা ঝরানো দৃষ্টির সামনে। বিনোদিনী ছবিটি বুকে নিয়ে সশব্দে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।


পাশের ঘর থেকে রমা সব শুনে যাচ্ছিল। মুখে আঁচল চেপে নি:শব্দে কেঁদেই যাচ্ছিল। জানে, তার দাদার বুকে বিনোদির বলা প্রতিটি শব্দ কেমন ছুরির ফলার মতন বিধঁছে। কিন্ত, তাতে তার কিছুই করবার নেই।

রমা এসে দাঁড়ায়, তার দাদার সামনে। বজ্রাহতের ন্যায় দাঁড়িয়ে সুব্রত।

- দাদা, কেন? কেন বলছো না কিছু। অন্তত বিনোদিকে তো সব খুলে বলতে পারো! কেন সইছো এই অপমান, এই মিথ্যে অপবাদ!

সুব্রত ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়, চোখ শুস্ক, পাথর। অথচ কত করুন সে দৃষ্টি। কতো অপারগতা। এক কষ্টমাখা স্বরে ভেসে আসে...

- নাহ, সম্ভব নয়। ও একটা পশু। ও একটা নরপশু রমা! ও বিনোদকে ছাড়বে না।

************************************************

সেদিন সুব্রতর বাড়ি থেকে বের হয়ে এক প্রকার দৌড়েই যেন যাচ্ছিল বিনোদিনী। তার সমগ্র বুদ্ধি চিন্তা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বুকফাটা চিতকার গলার কাছে শক্ত দলার মতন আঁটকে আছে। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে এখুনি বুঝি মারা যাবে। এখন মাতালের মতন টলতে টলতে বাড়ি ফিরছে, তার বুকে কষ্টের পাল্লাটা কার দিকে ভারি, কার জন্যেই বা ভেবে সে বেশি কষ্ট পাচ্ছে, সে জানে না।

এক দিকে দামিনী, তার ছোট্ট বেলার সঙ্গি। তাদের দু'জনকে সবাই বলে এই আত্মা। এই দামিনীর কাছে সুব্রত তার পৃথিবী, তার ধ্যান, জ্ঞান সব। সুব্রতকে সে ভক্তি করে।
আবার অপর দিকে সুব্রতদা! বয়সে দু'বছর বড় হলেও, সুব্রতদা তার পরম পূজোনীয়, খুব কাছের, ভালোবাসার একজন। নিজের আপন দাদাও কখনো এতটা ভালবাসা, এতটা স্নেহ দেয় নি তাকে, যা পেয়েছে সে সুব্রতর কাছে। সে জানে, সুব্রতর প্রতিটি নি:শ্বাসে দামিনী, তার কল্পনা, স্বপ্ন, ইচ্ছে, আকাঙ্খা, বাসনা সকলটা জুড়েই শুধু দামিনী। দামিনীকে ছাড়া সুব্রতদা কখনোই সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পারবে না। তবে কেন সেই ব্যক্তি আকস্মিক সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল! যেখানে জানে সুব্রতর কাছে তা বিষপানের সমান! তবুও কেন?

বিনোদিনী টলছে, বুকের কাছটায় অসম্ভব এক চাপ অনুভব করছে। দামিনীর সামনে কি করে দাঁড়াবে! কি করে ওকে সাত্বনা দেবে! জানে এত বড় আঘাত কতটা ভয়ংকরভাবেই না ওকে ভেঙ্গে দিয়েছে। কাকাবাবুকেই বা কি বলবে, কি করে সামলাবে সব!
বাড়ির উঠোনে চলে এসেছে কোনরকম, আর পারছে না। চারপাশ হঠাতই অন্ধকার হয়ে এলো। পেছন থেকে দুটো শক্ত পুরষালি হাত বিনোদিনীকে ধরবার আগেই, সে মাথা ঘুরিয়ে উঠোনে পরে গেল, সিড়ির কোঠায় মাথাটা শব্দ করে ঠুকে গেল।


**************************************************************










সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...