বুধবার, ৩ জুন, ২০২০

ক্ষেতমজুরের কাব্য - নির্মলেন্দু গুণ

মুগুর উঠছে মুগুর নামছে
ভাঙছে মাটির ঢেলা,
অাকাশে মেঘের সাথে সূর্যের
জমেছে মধুর খেলা।
ভাঙতে ভাঙতে বিজন মাঠের
কুয়াশা গিয়েছে কেটে,
কখন শুকনো মাটির তৃষ্ণা
শিশির খেয়েছে চেটে।
অতটা খেয়াল রাখে নি কৃষক
মগ্ন ছিল সে কাজে,
হঠাৎ পুলক পবনে হৃদয়
পুস্পিত হলো লাজে।
ফিরিয়া দেখিল বধূটি তাহার
পেছনে অালের 'পরে
বসে অাছে যেন ফুটে অাছে ফুল
গোপনে চুপটি করে।
সামনে মাটির লাল সানকিটি
জরির অাঁচলে বাঁধা,
অাজ নিশ্চয় মরিচে রসুনে
বেনুন হয়েছে রাঁধা।
হাসিয়া কৃষক মরাল বাঁশের
মুগুর ফেলিয়া দিয়া
কামুক অাঁখির নিবিড় বাঁধনে
বাঁধিল বধূর হিয়া।
বরুণ গাছের তরুণ ছায়ায়
দু'জনে সারিল ভোজ,
বধূর ভিতরে কৃষক তখন
পাইল মনের খোঁজ।
মেঘ দিল ছায়া, বনসঙ্গমে
পুরিল বধূর অাশা-;
মনে যা-ই থাক, মুখে সে বলিল:
'মরগে' বর্গা চাষা।'
শব্দটি তার বক্ষে বিধিল
ঠিক বর্শার মতো,
'এই জমিটুকু অামার হইলে
কার কী- বা ক্ষতি হতো ?'
কাতর কন্ঠে বধূটি শুধাল:
অাইছ্যা ফুলির বাপ,
অামাগো একটু জমিন অবে না?
জমিন চাওয়া কি পাপ ?'
'খোদার জমিন ধনীর দখলে
গেছে অাইনের জোরে,
অামাগো জমিন অইব যেদিন
অাইনের চাকা ঘোরে।'
অসহায় বধূ জানে না নিয়ম
কানুন কাহারে বলে-;
স্বামীর কথায় চোখ দু'টি তার
সূর্যের মতো জ্বলে।
'বলদে ঘোরায় গাড়ির চাক্কা
নারীর চাক্কা স্বামী-;
অাইনের চাকা অামারে দেখাও
সে- চাকা ঘুরামু অামি।'
কৃষক তখন রুদ্র বধূর
জড়ায় চরণ দু'টি,
পা- তো নয় যেন অন্ধের হাতে
লঙরখানার রুটি।
যতটা অাঘাত সয়ে মৃত্তিকা
উর্বরা হয় ঘায়ে,
ততটা অাঘাত সইল না তার
বধূর কোমল পায়ে।
পা দু'টি সরিয়ে বধূটি কহিল:
'কর কী? কর কী? ছাড়ো,
মানুষে দেখিলে জমি তো দেবি না
দুন্যাম দেবি অারো।'
পরম সোহাগে কৃষক তখন
বধূর অধর চুমি,
হাসিয়া কহিল: 'ভূমিহীন কই?
অামার জমিন তুমি।'
অাকাশে তখনো সূর্যের সাথে
মেঘেরা করিছে খেলা,
মুগুর উঠছে মুগুর নামছে
ভাঙছে মাটির ঢেলা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...