বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১২

মেমসাহেব....ও মেমসাহেব....


There are two tragedies in life.
One is to lose your heart's desire,
The Other is to gain it.
-G. B. S.
কিছু কিছু বই থাকে যা নতুন করে হাতে নেয়া মানেই,টিস্যু পেপারের বক্স সামনে রাখা। হাসির মনে হলেও ঘটনা কিন্তু সত্যি। আমার ক্ষেত্রে সেরকম কালেকশনগুলোর মাঝে উপরের পর্যায়েই আছে...এই "মেমসাহেব"। প্রেম প্রেম কাহিনী আমার খুব যে ভালো লাগে তা নয় বরং উল্টোটাই হয়। কিন্ত "মেমসাহেব"!! আমার কাছে অসাধারণ ছিল,আছে এবং থাকবে।
যখন পড়ছিলাম প্রথমবার নিজেকে নিমাইয়ের পাঠক বলেই মনে হয়েছিল...কিন্তু পরের বার মনে হলো ওর দৌলাবৌদি যেন আমিই। আঁচল দিয়ে চোখের কোণ মুছে পড়ছি এক পাগলের প্রলাপ। চোখ পরিস্কার করার জন্য এর চেয়ে মোক্ষম মেডিসিন আমার কাছে আর কি হতে পারে! "মেমসাহেব.. মেমসাহেব"... অস্ফুট আওয়াজে আনমনে আমিও যেন কখন ডেকে উঠি!
আপন মনে আমি ভেবে যাই আর নিজেকেই প্রশ্ন করতে থাকি....
ওর "বিশ্বাস" নাকি "আত্মবিশ্বাস"!!
"আমাদের দেখা হবে,একথা আপনি জানলেন কি করে?
-কি করে জানলাম তা জানি না,তবে মনের মধ্যে স্থির বিশ্বাস ছিল যে আপনার সঙ্গে দেখা হবেই।
-শুধু মনের বিশ্বাস?
-হ্যাঁ।"
পাগলের কি কথা!!
"সব মেয়েদের মনেই ঐ এক ভয়,এক সন্দেহ,কেন বলতে পারো?পৃথিবীর ইতিহাস কি শুধু পুরুষদের বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনীতেই ভরা?"
তা কেন হতে যাবে রে বোকা!
ওমনই যদি হতো...তাহলে এটা তো আর বলতে পারতে না....
"মহব্বত জিসকো দেতে হ্যায়,
উসে ফির কুছ নেহি দেতে।
উসে সাব কুছ দেতা হ্যায়,
জিসকো ইস কাবিল নেহি সমঝা।
- জীবনে যে ভালোবাসা পায়,সে আর কিছু পায় না;যে জীবনে আর সবকিছু পায়,সে ভালোবাসা পায় না।"
নিজের জীবনের অপর নামই যার নাম তাকে নিয়ে যে কোন বর্ণে আঁকা সহজ নয়,তা জানি...আরোও টের পেলাম তোমার আকূলতায়...হাহাকারে....
"তোমাকে আমি বোঝাতে পারব না,লিখতে পারব না,আমার মেমসাহেবের সবকিছু। জানাতে পারব না আমার মনের ভাব,ভাষা,অনুভূতি।"
"একজনকেও পেলাম না যে আমার কাছে আমার মেমসাহেবের স্মৃতি ম্লান করে দিতে পারে।"
কী করে পারবে কেউ ম্লান করে দিতে তোমার মেমসাহেব কে!! এতই সহজ!! আমিও ভাবি....
"আমি জানি তুমি আর কাউকে কোনদিন ভালবাসতে পারবে না।
-জানো?
-একশ'বার,হাজারবার জানি।
-কেমন করে জানলে?
-সে তুমি বুঝবে না?
দৌলাবৌদি,তুমি তো মেয়ে। তাই বুঝবে কত গভীরভাবে সারা অন্তর দিয়ে ভালবাসলে এসব কথা বলা যায়।"
যখন কাউকে খুব করে চাওয়া হয়...তখন তার কথা কাউকে বলতে গেলে মন আপনাতেই কখন যেন তার কাছে চলে যায়৷ তার সেই মুখের হাসি চোখে ভাসলে একাই হাসি আসে, কখনো বা লজ্জা লাগে...এক পার্থিব ভালোলাগায় মনটা ভরে যায়৷ দিন, কাল, পাত্র সব ফিকে হয়ে, ফেলে আসা অতীত বাস্তব হয়ে দাঁড়ায়৷ হয়ত একমাত্র এভাবেই মানুষ অতীতকে ফিরে পায়!! আমার বড় ভুল হয়েছে...কেন যে জানতে চাইছিলাম৷ কতটা কষ্টই না হয়েছে তোমার, কতটা দগ্ধই না হয়েছো বারে বারে....

"এই চিঠি লিখতে বসেই আবার মনের রিভলবিং স্টেজ ঘুরে যায়, দৃশ্য বদলে যায়৷ আমার চোখটা ঝাপসা হয়ে উঠে৷ কলম থেমে যায়৷ একটু পরে দুচোখ বেয়ে জল নেমে আসে৷"
পাগলগুলো... কেন ওতো ভাবতে যেতে!! তোমাদের মন, কি এতটাই সমর্পিত ছিল যে ভূতভবিষ্যত পর্যন্ত দেখতে, বুঝতে পেত! যার জন্যে বারে বারে ওমন কেঁপে ওঠতো!!

"জীবনে চলতে গিয়ে বার বার পিছনে পড়ে গেছি৷ তাই তো ভবিষ্যতেরর কথা ভাবতে, ভবিষ্যত্‍ জীবনের স্বপ্ন দেখতে ভয় হয়৷
ও হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে বললো- না না, ভয়ের কথা বলো না৷ ভয় কি?
একটু আতঙ্কে, একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে জানতে চাইল, - আমি কি তোমার হবো না?
এবার আমি ওর মুখটা চেপে ধরে বললাম- ছি ছি, ওসব আজেবাজে কথা ভাবছ কেন? তুমি তো আমারই৷"
এটা তো সত্য ভালোবাসায়.. সেটা যে সম্পর্কের সাথেই হোক না কেন...তা যদি টিকে তবে শুধুমাত্র "শ্রদ্ধাবোধ" এর শক্তিতে...এই একটা জোরেই টিকে যায় সম্পর্ক। তুমি জানতে, বুঝতে সেটা.. আর তাই বললে..
মেমসাহেব শুধু আমাকে ভালবাসত না, শ্রদ্ধা করত, ভক্তি করত। সোনায় যেমন একটু পাত মিশিয়ে না নিলে গহনা মজবুত হয় না, সেই রকম ভালবাসার সঙ্গে একটু শ্রদ্ধা, ভক্তি না মিশালে সে ভালবাসাও দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
মেমসাহেবের কথা আমাকে যতই জানাচ্ছিলে ততই বুকের ভেতর চাপে অস্থির হয়ে ছটফট করছিলাম দম নেবার জন্যে, আর যখন তোমার সেই মেজদিদি এসে জানালো যে............................
আমার নি:শ্বাস ক্ষণিকের জন্যে আটকে গিয়েছিলো। নাহ সে বর্ণনা পুনরায় আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ আমি যে তুমি না!
তুমি কিভাবে আছো বেঁচে....??
নিদ আয়ে তো খোয়াব আয়ে,
খোয়াব আয়ে তো তুম আয়ে।
পার তুমহারি ইয়াদ মে,
না নিদ আয়ে না খোয়াব আয়ে....।
গজাননটাও কত পাগল হয়েছে তোমার সাথে!! সেও পর্যন্ত মুখে আনে না একটিবার তোমার বিয়ের কথা!! ঘর বাঁধবার কথা!! ঘর তো বেঁধেছোই...তোমার বিশে ফাল্গুন, ৬ই মার্চ এ..তোমার মেমসাহেবের দেয়া ধুতি-পাঞ্জাবী পরে। তোমার চোখের জল মুছতে মুছতে তোমার মেমসাহেবের ছবিতে মালা চড়িয়ে...সিঁদুর পরিয়ে।
তোমার চিঠি শেষ করলে...

"Time marches on but
memories stays.
Torturing silently the rest
of our days"
সেই স্মৃতির জ্বালা বুকে নিয়েই বোধহয় আমার বাকি দিনগুলো কাটবে। তাই না?


**জানি না বাচ্চুর দৌলাবৌদি চিঠি শেষ করে কি করেছিল! হয়তবা অঝরে কেঁদেছে..হয়তবা নিজেকে কষেছে!!...কিন্তু আমি দেখি... এক প্রচন্ড হাহাকার বুক জুড়ে...বোবা কান্নায়, অসহনীয় কষ্ট নিয়ে আমার রাত কখন যেন পেরিয়ে গেছে। অনেকদিন পর এটা হাতে নিয়েছিলাম..ভেবেছিলাম শুধুই পড়ব...কিন্তু একবার ভাবিনি একে ঘিরে থাকা সেই অনুভূতি... আজোও এতটুকুও বদলায় নি। তাই এই স্মৃতিচারণ "বাচ্চুর" উদ্দেশ্যে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...