রবিবার, ১৩ মে, ২০১২

ইস্পাত....How the Steel was Tempered....


এই ভরদুপুরে লোডশেডিং এর অত্যাচারে অতিষ্ট। ঠান্ডা পানি গলায় ঢালার তীব্র ইচ্ছে অবদমিত হচ্ছে...মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটায়। ভাবছি, ইচ্ছে করলেই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি দুপুরটা। কিন্তু আজকাল মনে হয় যতটুকু সময় জীবনের আছে...সেন্স নিয়ে বাতাসগুলো শুষে নিয়ে সময়ের কাছ থেকে নিগ্রে নিতে থাকি না কেন...যখন যা পাই!!
পা ঘোরালাম লাইব্রেরীর দিকে, হাত বাড়াচ্ছি ডিটেকটিভ টাইপের একটা বইয়ের দিকে কিন্তু নজর চলে গেল..."ইস্পাত" এর দিকে। "ইস্পাত"...সাহিত্যের বাস্তব ঘরানার সবচেয়ে শিক্ষনীয়, সবচেয়ে উজ্জ্বল, সবচাইতে মর্মস্পর্শী একটি সাহিত্য যার স্রষ্ঠা "নিকোলাই অস্ত্রভস্কি", "Nikolai Ostrovsky" (জন্ম ১৯০৪- মৃত্যু ১৯৩৬)। আমার বাস্তব ঘরানোর সাহিত্য শিক্ষার প্রথম ধাপগুলোর মধ্যে, এই অমর সৃষ্টি একটি। বইটি হাতে নিয়ে নতুন করে পাতা উল্টাতে খুব মন চাইলো।





নিকোলাই অস্ত্রভস্কি এমন এক অমর জীবনসাহিত্যিক যার জীবনকাল ছিল মাত্র ৩২ বছর। এই স্বল্পকালীন জীবনাবস্থায় জীবন থেকে কতটুকু শেখা যায় সেটা তো পরিস্কার! কিন্ত কতটা অবর্ণনীয় কষ্টকর জীবন অধ্যায় ছিল, তা তিনি একেঁ গিয়েছেন তার জীবনবাদী সাহিত্য "ইস্পাত" এ।
তার জীবনের যে চিত্র তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন...সেখানে কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে কোন ইতিবাচক চিন্তা করা তো দূরের কথা, জীবনকে বাঁচার জন্য যে ধৈর্য্য দরকার তাই ধরে রাখা দুস্কর। কিন্তু নিকোলাই শিখিয়ে গিয়েছেন...বেঁচে থাকতে হয় কিভাবে।
"ইস্পাত"... ধাতুর একটি কঠিনরুপ। আর এটি আরো মজবুত, দৃঢ় কঠিন হয় আগুনে পুড়ে পুড়ে। মানবজীবন ঠিক তেমনিই এক উদাহরণ। মানুষ তত বেশি কঠিন, দৃঢ়, সক্ষম, শুদ্ধ, উজ্জ্বল এবং সুন্দর হয় যত বেশি জীবনের আগুনে সে দগ্ধ হয়।
অল্প বয়স থেকেই নিকোলাই জীবনের চরম বাস্তবতার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হতে থাকেস। এক সময় রাশিয়ার বলশেভিক পার্টির নিবেদিত কর্মী হিসাবে শুরু করেন আরেক অধ্যায়। যোগ দেন রাশিয়ার রেড আর্মিতে। গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, অংশ নেন। কিন্তু সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মারাত্মক ভাবে আহত হোন। হারান দৃষ্টিশক্তি, হারান চলৎশক্তি। কিন্তু হারান নি যা...তা তার ইস্পাতের ন্যায় দৃঢ় মনোবল।
তিনি বলেছেন,
"জীবন মানুষের সবচাইতে প্রিয়। এই জীবন সে পায় মাত্র একবার বাঁচবার জন্য। এমনভাবে বাঁচতে হবে তাকে যাতে বছরের পর বছর লক্ষ্যহীন জীবন যাপন করার জন্য পরে যন্ত্রনাভরা অনুশোচনায় ভুগতে না হয়, যাতে বিগত জীবনের গ্লানিভরা হীনতার জন্য লজ্জার দগ্ধানি তাকে সইতে না হয়। এমনভাবে বাঁচতে হবে যাতে মৃত্যুর মুহুর্তে সে যেন বলতে পারে: আমার সমস্ত জীবন, সমস্ত শক্তি আমি ব্যয় করেছি এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আদর্শের জন্য- মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামের আদর্শ"

আর তাই তো বলেছিলেন যখন অস্ত্রপাচারের জন্য তাকে হাসপাতালে থাকতে হয় এবং ডাক্তারেরা তাকে বলেছিলেন তিনি এখন সম্পূর্ণরুপে অক্ষম।

"এরা আমার অসুখ সম্বন্ধে যা যা বলছেন, সবই সত্যি। কিন্তু যখন এরা আমাকে কাজের সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত বলে রায় দেবার চেষ্টা করেছেন, তখনই এদের মস্ত বড় ভুল হচ্ছে। এ সম্বন্ধে দেখা যাবে এখন।"
বলেছিলেন,
"কেউ কেউ আছে কুকুরের মতো অপমান সয়ে অসম্মানের মরণ মরে।"


তিনি এমনটা কখেনোও চান নি।
নিকোলাই যতদিন বাঁচতে চেয়েছিলেন, বাঁচার মত বাঁচতে চেয়েছিলেন। রেখে যেতে চেয়েছিলেন এমন কিছু যা পরবর্তী প্রজন্মকে, সংগ্রামী সাথীদের, জীবনের মূল্যবোধ শেখাতে হবে সহায়ক।

"মানুষ যখন লড়াই করবার মতো একটা আদর্শ খুঁজে পায়, তখন সে যেকোন কষ্ট সইবার মত বলিষ্ঠতা অর্জন করে।"


"মরবার মতো একটা সত্যিকারের আদর্শ থাকলে মানুষ মরতে ভয় পায় না। আদর্শই মানুষকে শক্তি জোগায়। যা করছো ঠিকই করছো- এটা জানা থাকলে তুমি হাসি মুখে মরতে পারো। এভাবেই লোকে বীর হয়ে উঠে।"



১৯৩৬ সালে প্রথম বই আকারে "ইস্পাত" মূল নাম "How the Steel was Tempered" প্রকাশিত হয়। মোট ৪৮ টি ভাষায় এটি অনুদৃত হয় এবং খোদ সোভিয়েত ইউনিয়নেই ৪৯৫টি সংস্করণ হয়।
বই পড়া মানে শুধুই যে বিনোদন তা তো নয়, জীবনের মুল্যবোধ বোঝার পাথেয় হচ্ছে এই বই। আর "ইস্পাত" এর মতন মহান সৃষ্টি তার একটি উপাদান।
************************************************************************
খরখরে রোদে তপ্ত পৃথিবীতে হঠাৎই দমকা হাওয়া...তারপর একপশলা বৃষ্টি। রোদরুপী আগুনে দগ্ধ হয়ে, হিমেল শীতল আবেশে আচ্ছন্ন শুধু এই পৃথিবী নয়, আমিও। হঠাৎই আবিস্কার করলাম তৃঞ্চা নেই। এটাই হয়তবা পৃথিবীর নিয়ম। জীবনের ক্ষরায় বৃষ্টির অপেক্ষা। আর আমার?? "ইস্পাত" হবার ইচ্ছে নিয়ে ইতি টানলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...