সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩

নূর- লতিফুল ইসলাম শিবলী

পাঠ প্রতিক্রিয়া :

নূর- লতিফুল ইসলাম শিবলী

১৩৯ পৃষ্ঠার বইয়ের অল্প কথায় বিশাল এক ইতিহাসের মূলপাদ্য রচনা, সাথে সুক্ষ্ম মানবিক গুণগুলি নিয়ে বিশ্লেষণ, লেখকের মুন্সীয়ানার পরিচয় দেয়। ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের ধারাপাতে কত শত মর্মবেদনার কাহিনী ইতিহাসের ধুলোয় মিশে আছে তা অনুধাবন করাও কঠিন, বর্তমান এই প্রহেলিকাময় মৃত সমাজে।

 
কাহিনীতে উঠে আসে পলাশী যুদ্ধের পরবর্তী তিন দশকের ইতিহাসে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, এক দীপ্তমূর্তি "ফকির মজনু শাহ", এক মহান সুফি সাধক। তাঁর সুদৃঢ় ইমানী জজবা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমগ্র হিন্দু-মুসলিম অধিকার বঞ্চিত মূলত কৃষক মজলুমদের সংগঠিত করে এক চাদরের নিচে। ঐক্যবদ্ধ হয় হিন্দু সন্ন্যাসী ও ফকির দরবেশ।

বাংলাতে "ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ" ( ১৭৬০-১৮০০ ) যেখানে নির্যাতিত কৃষক, গরীব হিন্দু মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। ইতিহাসবিদদের মতে বিদেশি বৃটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূচনাস্থল।

বই থেকে কিছু ভাললাগা শব্দমালার উদ্ধৃত:

- "আমরা আমাদের মৃত্যুকে শ্বাস-প্রশ্বাসের হাতে তুলে দেইনি বরং আমরা আমাদের মৃত্যুকে তুলে দিয়েছি আল্লাহর হাতে। নি:শ্বাস বন্ধ হলে তোমার মৃত্যু হবে কিন্তু আল্লাহর হাতে তুলে দেয়া জীবন প্রবেশ করবে সসীম জীবন থেকে অসীম জীবনে। যারা মনে করে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়াটাই মৃত্যুর কারণ, শুধু তাদেরই মৃত্যু হবে।..."

- "দানব দেখতে চোখ লাগে, মানুষ দেখতে লাগে অন্তর"।


- "মানুষ ভুল করে অনেক কিছুর ভুল নাম দেয়, মানুষ যেটাকে ভালোবাসা বলে সেটা আসলে- মায়া"।
অবশ্য পাঠ্য।


সুখপাঠ্য।


#সাহিত্যানুশীলন
**************
বই: নূর
লেখক: লতিফুল ইসলাম শিবলী Latiful Islam Shibli
প্রকাশক: নালন্দা
Goodreads rating: 4/5
***************

মুক্ত বাতাসের খোঁজে

পাঠ প্রতিক্রিয়া:

মুক্ত বাতাসের খোঁজে
মূল- লস্ট মডেস্টি

আমরা খুব অসুস্থ সমাজে ইতোমধ্যেই আছি আর সন্তানদের জন্যে অজান্তেই, আরও জঘন্য সমাজ তৈরী করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

"পর্ণ আ্যডিকশন" মূলত সাবজেক্ট। বইতে উল্লেখিত রেফারেন্সগুলো রীতিমতোন কাঁপিয়ে দেয় ভয়ে। পর্ন সাইট ঘাঁটে, এমন প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স দশ বছরের নিচে! এর বেশি বোঝার আর কিছু লাগে না।


শুধুমাত্র মাদ্রাসা কেন্দ্রীক শিক্ষাব্যবস্থা জড়পদার্থ প্রোডিউস করে বলছি কিন্তু সাধারণ বোর্ডের, ইংলিশ মিডিয়াম আ্যন্ড অল কী তৈরী করে চলছে তা খুব ঠান্ডা মাথায় ভাববার এখনই সময়। যদিও অনেক দেরী হয়েই গিয়েছে।

আমরা সমাজ নোংরা হবার ফ্যাক্টরগুলো জানি কিন্তু সন্তর্পণে তা এড়িয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই যারা এর শিকার!

বইটি লস্ট মডেস্টি প্রোজেক্টের। ফ্রি পিডিএফ এ্যাভেইলেবেল। বই পড়া ধৈর্য্যে না কুলালে অন্তত রেফারেন্সগুলোতে চোখ বুলালেও আশা করি ভয়াবহতা টের পাওয়া যাবে।





#সাহিত্যানুশীলন
****************
বই: মুক্ত বাতাসের খোঁজে
লস্ট মডেস্টি Lost Modesty
প্রকাশনা: ইলমহাউস পাবলিকেশন
Goodreads rating: 5/5
পৃষ্ঠা : ২২৭
*****************

বিখন্ডিত- রবিন জামান খান

পাঠ প্রতিক্রিয়া:

কাহিনীতে চমক ছিল। মোড় ঘুরিয়ে ঘটনাচক্রের বেগ, সাসপেন্স ধরে রাখার মতন।
কিন্তু বেশি কথা বলা হয়ত একটু উনার স্টাইল, যা না আ্যড করলেও হয়। মনে হয় পরিসর ইচ্ছাকৃতভাবে টেনে বাড়ানো হচ্ছে। "ব্ল্যাকবুদ্ধা" পড়ে তাই মনে হয়েছিল।



এই ডার্ক ওয়েব, বিশেষ করে "ওকাল্ট" টাইপস উপাদান বাংলাদেশের লেখকদের কলমে উঠে আসাটা বহু ক্রাইম থ্রিলার প্রেমীদের এক প্রকার স্বপ্নপূরণ। যদিও এর সাথে বিরাট দায়িত্ব কাঁধে পরে। কেননা এই ধাঁচের এক্সপেরিমেন্ট অনেক সময়ই আবেদন হারায় যদি ঠিক পেইস মেইনটেইন না করা হয়। এই ক্ষেত্রে এই লেখকের উপর আস্থা আছে, কেননা লেখার পাশাপাশি প্রচুর পড়ার অভ্যাস উনার। যা প্রশংসনীয় একবাক্যে।

"প্রফেসর জ্যাক" কে এই গল্পের মাধ্যমে চেনা। "শব্দজাল" পড়া হয়নি।
পরিশেষে,
উত্তেজনাপূর্ন পাঠ্য, সুখপাঠ্য।

#সাহিত্যানুশীলন
*************
বই: বিখন্ডিত
লেখক: রবিন জামান খান
প্রকাশনা: নালন্দা
পৃষ্ঠা :৩৬৮
Goodreads rating: 4/5

শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০২৩

আউরা- কার্লোস ফুয়েন্তেস

পাঠ প্রতিক্রিয়া :
--------------
কার্লোস ফুয়েন্তেস
জন্ম: ১১ই নভেম্বর, ১৯২৮ (পানামা সিটি, পানামা)
মৃত্যু: ১৫ই মে, ২০১২ (মেক্সিকো সিটি, মেক্সিকো)

--------------

লাতিন সাহিত্যের একজন কিংবদন্তি কার্লোস ফুয়েন্তেস। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর বন্ধু।
"আউরা" প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬১ সালে, এবং সেই থেকেই একটি স্থায়ী অসাধারণ অবদান হিসাবে মননিত।
"আউরা" উপন্যাসটি ফেলিপে মনতেরো আর ১০৯ বছরের বৃদ্ধা কনসুয়েলোর, যিনি তার স্বামীর স্মৃতিকাহিনী সম্পাদনার জন্যে কাউকে খুঁজছিলেন। কিন্তু শর্ত জুড়েছিলেন, বৃদ্ধার বাড়িতে থেকেই কাজ করে যেতে হবে।

লেখক আধুনিকতার সাথে ক্লান্তিপূর্ণ পুরোনো জগতের মধ্যে মেশানো রহস্যময় ধাঁধা রেখে দিয়েছেন। চমৎকার লেখার সাথে মহাকালের ঘোরের মিশেল পাঠকদের বাধ্য করে ডুবে যেতে সেই বিভ্রান্তে।
.......
"...তুমি তাই আর ঘড়ির দিকে তাকাও না। এই অপ্রয়োজনীয় জিনিসটা শুধু মানুষের অহমিকা প্রকাশ করার জন্যে ক্লান্তিহীনভাবে সময় মেপে যাচ্ছে।..... প্রকৃত সময় তো আসলে মরণশীল, যার কাজ হলো ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে চলা, একে পরিমাপ করা কোনো ঘড়ির পক্ষেই সম্ভব নয়। এক জীবন, এক শতাব্দী, পঞ্চাশ বছর: অর্থাৎ ওই বানোয়াট মাপকাঠি দিয়ে তুমি আসল সময়কে কখনো কল্পনাও করতে পারবেনা। সময় নামে ঐ অশীরীরী ধূলিকণা তুমি হাত দিয়ে কোনো দিন ধরেও রাখতে পারবে না।"

অনুবাদক আলীম আজিজকে ধন্যবাদ। "আউরা" পড়ার পর বোঝা যায় অনুবাদকের সেই অস্থিরতা "আউরা"কে ঘিরে। আমারও বলতে ইচ্ছে করে ফুয়েন্তেসের মতন..

"-অথচ কিছু অবশ্যম্ভাবী শব্দ আছে, যা শোনা না গেলেও তাদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায়।"

বইয়ের শেষে লেখকের উত্তর-কথন সংযোজিত, যা রীতিমতোন আরেক অধ্যায়। সেখানে লেখকের মনস্তত্ত্ব পুরোপুরি উপলব্ধ না হলেও একটা সুক্ষ্ম ধারনা পাওয়া যায়, হেয়ালির আড়ালে তার ইন্দ্রিয়ানুভূতির গভীরতা।
 
-".. তুমি তোমার অন্য অর্ধেককে খুঁজছো, যে দ্বিতীয় সত্তার জন্ম হয়েছে গত রাতের ওই নিস্ফলা কল্পনার গর্ভে।"

সুখ পাঠ্য।
***************
বই: আউরা (Aura)
লেখক: কার্লোস ফুয়েন্তেস
অনুবাদক: আলীম আজিজ
প্রকাশক: প্রথমা
****************
#বইপরিচিতি #bookreview #bookworm #aura #CarlosFuentes #latinliterature


মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩

অন্তিম- লতিফুল ইসলাম শিবলী

পাঠ প্রতিক্রিয়া:

"প্রকাশ্য যুদ্ধের আগে এখন এই গোপন যুদ্ধটাই-

The Beginning of the End."..........

-------------
আমি রীতিমতোন বলা চলে গুণমুগ্ধ পাঠক হয়ে পড়েছি লেখকের। "দারবিশ" ছিল উনাকে লেখক হিসেবে জানার প্রথম ধাপ, "আসমান" দ্বিতীয়।

ধর্মকে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে অনুধাবণ করার যে প্র‍য়াস উনার কলমে উঠে আসছে, তাতে বরকত বারুক এই দোয়া।

AI, মিডিয়ার জগতে ম্যানুপুলেটেড চিন্তাধারা নিয়ে আমরা এতটাই অন্ধ যে ভাল-মন্দের বিচারের বোধ কখন হারিয়েছে সেটাও অজ্ঞাত।

"The fiction based on fact"
টপিকটাই এমন যে আমাদের গতানুগতিক চিন্তার, চলনের বাইরে মনে হয় বিধায়, আমরা এর একটা এলিট নাম দেই, "Conspiracy theory"! আসলেই কী তাই!!

লেখার গাথুনি, গতি অসাধারণ। খুব সেনসিটিভ অথচ অনেক সহজ, তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। উনি এমন সব সেনসিটিভ বিষয়গুলোতে আলোকপাত করছেন, যেখানে অনেকেই বর্তমান সো কলড "প্রগতিশীল" সমাজে জাত যাবার ভয়ে ধারের কাছেও ঘেঁষে না।

"ইমাম ইউসুফ মাহমুদের" মতন হবার স্বাদ জাগে। কেননা কোথায় যেন নিজের জীবনের মিল খুঁজে পাই।


বইয়ের খানিক অংশ...

"ইমাম স্মিত হেসে বললেন-
নবী (সা:) এর অবমাননা হলে মুসলিমরা জীবন দেয়। কিন্তু নবীর কথা বিশ্বাস করে না। মুসলিমরা পারমানবিক যুদ্ধ বোঝে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বোঝে। কিন্তু নবী (সা:) এর বলা "মালহামা" বোঝে না। মুসলিমরা অবৈধ নবীন রাস্ট্র ইজরাইলের শক্তিমত্তা, বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব এবং গুরুত্ব ঠিকই বোঝে। কিন্তু বোঝেনা সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে নবী (সা:) এর ভবিষ্যৎবাণীর মর্ম -

"কেয়ামতের আগে মদিনার গুরুত্ব কমে যাবে। জেরুজালেমের গুরুত্ব বেড়ে যাবে"।
- (আবু-দাউদ)

আমাদের জানা আর বিশ্বাসের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। আমরা জানি কিন্তু বিশ্বাস করি না, আমাদের জীবনযাত্রা বিশ্বাসের অনুগামী নয়। কিন্তু অন্যরা যা বিশ্বাস করে সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করে বলেই লিডারশীপ তাদের হাতে।"................


অবশ্য পাঠ্য।

#সাহিত্যানুশীলন

*************


বই: অন্তিম
লেখক: লতিফুল ইসলাম শিবলী
প্রকাশক: নালন্দা
Goodreads rating: 4/5
************
#বইপরিচিতি #bookreview #bookworm #অন্তিম #পাঠপ্রতিক্রিয়া #বাংলাসাহিত্য

মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০২৩

অল্প কিছু আলো-দেবেশ রায়

#পাঠপ্রতিক্রিয়া

অল্প কিছু আলো-দেবেশ রায়
"আমাদের ভালো থাকা নিয়ে বলা কথা"
------------
দেশভাগোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যে কিংবদন্তিতূল্য একজন, পশ্চিম বঙ্গের দেবেশ রায়।
এই প্রবন্ধ গ্রন্থে দেবেশ রায় কথা পেড়েছেন অনেক বিষয়েই। আমাদের ভালো থাকা নিয়ে, কখনওবা খুব মশকরার ছলে 'আমরা যে আসলে ভালো নেই' বা পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চে ভালো থাকার অভিনয় সং সেজে করে যাই, তারই চিত্রায়ণ করেছেন।


৬০ এর দশকে, "কী বলবো" আর "কীভাবে বলবো" নিয়ে এক তর্ক উঠে। দেবেশ রায়, "কীভাবে বলবো" এই শর্ত মাথায় নিয়েই হয়ত স্টাইলে এতো ভিন্নতা নিয়ে খেলেছেন। শব্দ, বাক্যগঠনে ভাষাকে যে ভারে ভারী করেছেন, আমার কতক জায়গায় দু'তিন বার পড়তে হয়েছে এর গুরার্থ উদ্ধার করতে।
তারই সমসাময়িক এই বাংলার কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক তাই বলেছেন....
"ভাবনার চিত্রণ, অনুভবের চিত্রণ, উপলব্ধির চিত্রণ, বোধের চিত্রণ! এত দায় কি ভাষা নিতে পারবে? ভাষাকে দিয়েই তিনি এই অসাধ্য সাধন করিয়ে নেবার চেষ্টার করেন।.....

.....লেখকজীবনে দেবেশ যতই এগোচ্ছেন ততই তাঁর লেখা ঘোর জটিল হয়ে উঠছে। সরল বাক্যও তাঁর সহজতার সীমানা পার হয়ে প্রায় অবোধ্য একটা জটিলতার দিকে চলে যাচ্ছে। কখনো কখনো মনে হয় দেবেশ রায়ের একে একটি বাক্য যা ধরতে পারে, তার অতিরিক্ত ভার নিয়ে অনেক সময় টলমল করতে থাকে। আমার নিজের ধারণা, এটাকেই হয়তো আয়েশি পাঠক ভারাক্লিষ্টতা বলে মনে করে।"

"সামান্য অমান্যতা"য় তার হাসান ভাইয়ের উদ্দেশ্যে চিঠিও ছিল। "নামায আমার আদায় হইল না" এ ব্যক্ত ছিল "সেলিম আল দীন"কে হারাবার বেদনা।
"আধুনিকতা, আমাদের আধুনিকতা ও অন্য আধুনিকতা" প্রবন্ধে পোষ্টমর্ডানিজমকে নিয়ে ছিল প্রশ্ন।

... "আধুনিকতার পরের যে নতুন আধুনিকতার কথা আমি ভাবছি- তা কোন খোঁড়া তত্ত্ব নয়, তা কেন্দ্রিকতাকে অস্বীকার করা এক পরিধিকে সত্য করে তোলার সক্রিয়তা। কেন্দ্রহীন পরিধি- এমন কল্পনার মধ্যে স্ববিরোধীতা আছে। সেই স্ববিরোধী দ্বন্দ্বকেই আমি খুঁজছি। আমাদের এই এখনকার, এই বর্তমানের দ্বান্দ্বিকতা।"

সুখ পাঠ্য।

#সাহিত্যানুশীলন

**************
বই: অল্প কিছু আলো
লেখক: দেবেশ রায়
প্রকাশনা: অভিযান পাবলিশার্স
**************


বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

নরকে এক ঋতু- র‍্যাঁবো

নরকে এক ঋতু (Une saison enfer)

-অনুবাদ: লোকনাথ ভট্টাচার্য


৩৭ বছর জীবনে কবিত্ত্বের সময় মাত্র পাঁচ বছর। আর তাতেই দাপটে প্রশ্ন করে গিয়েছেন, প্রশ্ন রেখে গিয়েছেন গভীর জীবনবোধের সব প্রহেলিকার।

উনিশ শতকের কবিদের মধ্যে যারা এই একবিংশতেও সাড়া জাগান দোর্দন্ডপ্রতাপে, তাদেরই একজন এই ফরাসী কবি "জাঁ আর্তুর র‍্যাঁবো"। "নরকে এক ঋতু" একমাত্র কবিতার বই, সাতটি অধ্যায় নিয়ে।



সাহিত্যের এই বিচিত্র শাখা "কবিতা"য় আমার অক্ষরজ্ঞান খুবই নগন্য। শশুড়বাবার পাঠাগারে ঘুরপাকের ফলেই হয়তবা আগ্রহ জমতে শুরু হচ্ছে।

র‍্যাঁবোর স্বল্প পরিসরের জীবনে মাত্র ১৪ বছরে কবিতার শুরু যার সমাপ্তি ২০ গিয়ে। আমার আকর্ষনের হেতু হয়তবা এটাই, যে সেই অল্প বয়সেই কলমের ধারে উঠে এসেছে বিদ্রোহ, বিপ্লব, সামাজিক সংস্কৃতি, আচারের উপর ছুঁড়ে দেয়া প্রশ্ন, অথচ লেখনীতে পরিপক্কতা। কোন উদ্ধত নাস্তিকের প্রশ্ন নয় বরং এ যেন নিজেকেই বার বার দহনে জালিয়ে ফিনিক্স পাখি হবার প্রয়াস।
"পবিত্রতা!
জাগরণের এই ক্ষণটিই আমাকে দেখালো সেই পবিত্রতার আলো- আত্মাই মানুষকে টানে ঈশ্বরের পথে!..
কী মর্মভেদী দুর্ভাগ্য!"

অবশেষে....
"এই মনোহর মজুরগণের তরে,
ব্যাবিলনিয়ার অধীশ্বরের দাস হয়ে থাকে যারা।

ভেনাস, তোমার অনুরাগীদের ত্যাগ করো ক্ষণতরে।
যাদের হৃদয় চেনে নি কিছুই মুকুট ছাড়া।"



#সাহিত্যানুশীলন


*****************
বই: নরকে এক ঋতু

লেখক: র‍্যাঁবো (Jha Artur Rabo)

অনুবাদক: লোকনাথ ভট্টাচার্য

প্রকাশক: সঞ্জয় সামন্ত, এবং মুশায়েরা (কলকাতা)
****************

বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩

আল্লামা ইকবালের মেটাফিজিকস


ইকবালের আধ্যাত্মবাদ

প্রতীচ্য ও প্রাচ্য, প্রাচীন ও সাম্প্রতিক, অতীন্দ্রিয় ও ইন্দ্রিয়বাদী জ্ঞানের সম্মিলনস্থল হিসেবে আল্লামা ইকবালকে পাঠ করার যে প্রয়োজনীয়তা আমাদের জ্ঞানতত্ত্বে তীব্র হচ্ছে, এ বই সে প্রয়োজনীয়তার প্রতি একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ।

লেখক ইকবালের দর্শনের অধিবিদ্যা নিয়ে যে আলোচনা এবং উপস্থাপনা তাই নিয়েই ঘেঁটেছেন, যা মূলত তার "Metaphysics in Persia" & "Reconstruction of religious thoughts in Islam" বইকেই ভিত্তি বানিয়ে উপস্থাপন করা। 

ইকবাল বার্গস, নিটশে, ম্যাকটাগার্টকে অধ্যয়ন করে মূলত আত্মার প্রকৃতি ও ইচ্ছাশক্তি মূল ধরে অনুপ্রাণিত হয়েছে চিন্তার ক্ষেত্রে কিন্তু পরিপূর্ণ তৃপ্ত হতে পারেন নি। ইকবাল স্রষ্টার জ্ঞান, আত্মার জ্ঞান ও অমরত্বের জ্ঞানকে দৃঢ়তার সাথে সামনে নিয়ে এসেছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দর্শনের সাথে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে। 

ব্যক্তিগত মতামত, অনুবাদের সময় স্বাভাবিকভাবেই মূল কিছুটা ব্যহত হয়, তা মাথায় রেখেই হয়ত শব্দচয়ন, উপস্থাপনে আরও কিছুটা পারদর্শিতা দেখানো যেত। যেহেতু লেখক এতে আল্লামা ইকবাল ও অন্যান্য দার্শনিকদের তুলনামূলক আলোচনা সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন, এবং বইয়ের শেষে পাদটীকায় ইকবাল ও অন্যান্য বইয়ের তালিকা সংযুক্ত করে দিয়েছেন, আশা করা যায় অনুসন্ধিৎসু পাঠক সেখান থেকে গভীর জ্ঞান আহরনের রসদ পাবে। 

আমার স্বল্প জ্ঞানের দ্বারা এই কথার মর্মকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি.....

"চিন্তার দ্বারা অর্জিত সকল জ্ঞানই আপেক্ষিক। আবার এটা কেবল আভাসও বটে। কিন্তু স্বজ্ঞার দ্বারা হৃদয়ে উদিত জ্ঞান দিয়ে আমরা পরম পর্যন্ত পৌঁছতে পারি।"


#সাহিত্যানুশীলন

***********************************
বই: আল্লামা ইকবালের মেটাফিজিকস
লেখক: ড. ইশরাত হাসান ইনভার
অনুবাদ: মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি
প্রকাশক: আদর্শ (২০২২)
Goodreads: 4/5 
***********************************

মসলার যুদ্ধ....

#সাহিত্যানুশীলন

#পাঠপ্রতিক্রিয়া

মসলার লোভে ইউরোপীয় শক্তির অভ্যূত্থান। এরপর উপনিবেশ স্থাপনের রক্তাক্ত নীল নকশা।
"মসলার যুদ্ধ", সত্যেন সেন এর লেখা ক্ষুদ্র পরিসরের এক ইতিহাস, যার হাত ধরে উপনিবেশবাদ, ক্রুসেডের বিষ, দেশীয় শক্তি, স্বাধীনতা সংগ্রাম এর বীজ বোঝা যায়।

কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরলাম....

"আন্তর্জাতিক আইন? সে তো ইউরোপের জাতিগুলোর নিজেদের ভেতরকার ব্যাপার। লন্ডন বা প্যারিসে যা বর্বরতা বলে আখ্যা পায়, পিকিং এর বুকে তাকেই সভ্যজনোচিত আচার বলে ব্যাখা করা যেতে পারে।"
--------------
"গোয়া দখল করবার পর অ্যালবুকার্ক পর্তুগাল-রাজ ডোম ম্যানুয়েলের কাছে এ সম্পর্কে যে সংবাদ পাঠিয়েছিলেন, তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি লিখেছিলেন...
'গোয়ায় যে সমস্ত আরবীয় ছিল, আমরা তাদের সবাইকে হত্যা করেছি, আমাদের হাতে কেউ রেহাই পায়নি। আমরা তাদের মসজিদের মধ্যে আটকে রেখে, শেষে সেই মসজিদ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি।'............"

--------------
"মানবতাবিরোধী অতি জঘন্য কাজের সাথে যদি কোনোমতে ধর্মকে সংশ্লিষ্ট করে রাখা যায়, তবে তার সব দোষ কেটে যায়। শুধু দোষ কেটে যাওয়াই নয়, সময় সময় তা অতি মহৎ ও পবিত্র কাজ বলেও কীর্তিত হয়ে থাকে।"

---------------
"এই সমাজের এই তো রীতি। যারা উৎপাদন করে, অভার ও অনশন তাদেরই প্রাপ্য। আর তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গেলে দমন-নীতির হিংস্র আক্রমণ তাদের উপরেই নেমে আসে। যুগ যুগ ধরে এই রীতিই চলে আসছে। আজও কি চলছে না?"
----------------
"এই মসলার যুদ্ধ রক্তাক্ত, হিংস্র, বীভৎস! আবার এই মসলার যুদ্ধ প্রাচ্যের পরিবর্তনহীন পশ্চাৎমুখী সমাজের সামনে বৃহৎ বিশ্বের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বদ্ধ জীবনের উপরে দুরন্ত ঝটিকার আলোঢ়ন জাগিয়েছে, প্রচন্ড অত্যাচারের শক্তি স্বপ্ন-দেখা ঘুমন্ত মানুষকে চুলের ঝুঁটি ধরে টেনে তুলেছে!
ওটাও সত্য! এটাও সত্য! কোনটাই মিথ্যা নয়।"
________________________________
বই: মসলার যুদ্ধ
লেখক: সত্যেন সেন
________________________________
#bookreview #bengaliliterature #বাংলাসাহিত্য #সত্যেনসেন #মসলারযুদ্ধ #history #indianhistory #colonialism

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...