বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সাধারণ মেয়ে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমি অন্তঃপুরের মেয়ে,

চিনবে না আমাকে।
তোমার শেষ গল্পের বইটি পড়েছি, শরৎবাবু,
‘বাসি ফুলের মালা’।
তোমার নায়িকা এলোকেশীর মরণ-দশা ধরেছিল
পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে।
পঁচিশ বছর বয়সের সঙ্গে ছিল তার রেষারেষি,
দেখলেম তুমি মহদাশয় বটে —
জিতিয়ে দিলে তাকে।

নিজের কথা বলি।
বয়স আমার অল্প।
একজনের মন ছুঁয়েছিল
আমার এই কাঁচা বয়সের মায়া।
তাই জেনে পুলক লাগত আমার দেহে —
ভুলে গিয়েছিলেম, অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে আমি।
আমার মতো এমন আছে হাজার হাজার মেয়ে,
অল্পবয়সের মন্ত্র তাদের যৌবনে।

তোমাকে দোহাই দিই,
একটি সাধারণ মেয়ের গল্প লেখো তুমি।
বড়ো দুঃখ তার।
তারও স্বভাবের গভীরে
অসাধারণ যদি কিছু তলিয়ে থাকে কোথাও
কেমন করে প্রমাণ করবে সে,
এমন কজন মেলে যারা তা ধরতে পারে।
কাঁচা বয়সের জাদু লাগে ওদের চোখে,
মন যায় না সত্যের খোঁজে,
আমরা বিকিয়ে যাই মরীচিকার দামে।

কথাটা কেন উঠল তা বলি।
মনে করো তার নাম নরেশ।
সে বলেছিল কেউ তার চোখে পড়ে নি আমার মতো।
এতবড়ো কথাটা বিশ্বাস করব যে সাহস হয় না,
না করব যে এমন জোর কই।

একদিন সে গেল বিলেতে।
চিঠিপত্র পাই কখনো বা।
মনে মনে ভাবি, রাম রাম! এত মেয়েও আছে সে দেশে,
এত তাদের ঠেলাঠেলি ভিড়!
আর তারা কি সবাই অসামান্য —
এত বুদ্ধি, এত উজ্জ্বলতা।
আর তারা সবাই কি আবিষ্কার করেছে এক নরেশ সেনকে
স্বদেশে যার পরিচয় চাপা ছিল দশের মধ্যে।

গেল মেলের চিঠিতে লিখেছে
লিজির সঙ্গে গিয়েছিল সমুদ্রে নাইতে —
বাঙালি কবির কবিতা ক’ লাইন দিয়েছে তুলে
সেই যেখানে উর্বশী উঠছে সমুদ্র থেকে —
তার পরে বালির ‘পরে বসল পাশাপাশি —
সামনে দুলছে নীল সমুদ্রের ঢেউ,
আকাশে ছড়ানো নির্মল সূর্যালোক।
লিজি তাকে খুব আস্তে আস্তে বললে,
‘এই সেদিন তুমি এসেছ, দুদিন পরে যাবে চলে;
ঝিনুকের দুটি খোলা,
মাঝখানটুকু ভরা থাক্‌
একটি নিরেট অশ্রুবিন্দু দিয়ে —
দুর্লভ , মূল্যহীন। ‘
কথা বলবার কী অসামান্য ভঙ্গি।
সেইসঙ্গে নরেশ লিখেছে, ‘কথাগুলি যদি বানানো হয় দোষ কী,
কিন্তু চমৎকার —
হীরে-বসানো সোনার ফুল কি সত্য, তবুও কি সত্য নয়। ‘
বুঝতেই পারছ
একটা তুলনার সংকেত ওর চিঠিতে অদৃশ্য কাঁটার মতো
আমার বুকের কাছে বিঁধিয়ে দিয়ে জানায় —
আমি অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে।
মূল্যবানকে পুরো মূল্য চুকিয়ে দিই
এমন ধন নেই আমার হাতে।
ওগো, নাহয় তাই হল,
নাহয় ঋণীই রইলেম চিরজীবন।

পায়ে পড়ি তোমার, একটা গল্প লেখো তুমি শরৎবাবু,
নিতান্তই সাধারণ মেয়ের গল্প —
যে দুর্ভাগিনীকে দূরের থেকে পাল্লা দিতে হয়
অন্তত পাঁচ-সাতজন অসামান্যার সঙ্গে —
অর্থাৎ, সপ্তরথিনীর মার।
বুঝে নিয়েছি আমার কপাল ভেঙেছে,
হার হয়েছে আমার।
কিন্তু তুমি যার কথা লিখবে
তাকে জিতিয়ে দিয়ো আমার হয়ে,
পড়তে পড়তে বুক যেন ওঠে ফুলে।
ফুলচন্দন পড়ুক তোমার কলমের মুখে।

তাকে নাম দিয়ো মালতী।
ওই নামটা আমার।
ধরা পড়বার ভয় নেই।
এমন অনেক মালতী আছে বাংলাদেশে,
তারা সবাই সামান্য মেয়ে।
তারা ফরাসি জর্মান জানে না,
কাঁদতে জানে। কী করে জিতিয়ে দেবে।
উচ্চ তোমার মন, তোমার লেখনী মহীয়সী।
তুমি হয়তো ওকে নিয়ে যাবে ত্যাগের পথে,
দুঃখের চরমে, শকুন্তলার মতো।
দয়া কোরো আমাকে।
নেমে এসো আমার সমতলে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাত্রির অন্ধকারে
দেবতার কাছে যে অসম্ভব বর মাগি —
সে বর আমি পাব না,
কিন্তু পায় যেন তোমার নায়িকা।
রাখো-না কেন নরেশকে সাত বছর লণ্ডনে,
বারে বারে ফেল করুক তার পরীক্ষায়,
আদরে থাক্‌ আপন উপাসিকামণ্ডলীতে।
ইতিমধ্যে মালতী পাস করুক এম . এ .
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে,
গণিতে হোক প্রথম তোমার কলমের এক আঁচড়ে।
কিন্তু ওইখানেই যদি থাম
তোমার সাহিত্যসম্রাট নামে পড়বে কলঙ্ক।
আমার দশা যাই হোক
খাটো কোরো না তোমার কল্পনা।
তুমি তো কৃপণ নও বিধাতার মতো।
মেয়েটাকে দাও পাঠিয়ে য়ুরোপে।
সেখানে যারা জ্ঞানী, যারা বিদ্বান, যারা বীর,
যারা কবি, যারা শিল্পী, যারা রাজা,
দল বেঁধে আসুক ওর চার দিকে।
জ্যোতির্বিদের মতো আবিষ্কার করুক ওকে —
শুধু বিদুষী ব’লে নয়, নারী ব’লে।
ওর মধ্যে যে বিশ্ববিজয়ী জাদু আছে
ধরা পড়ুক তার রহস্য, মূঢ়ের দেশে নয় —
যে দেশে আছে সমজদার, আছে দরদি,
আছে ইংরেজ জর্মান ফরাসি।
মালতীর সম্মানের জন্য সভা ডাকা হোক-না, বড়ো বড়ো নামজাদার সভা।
মনে করা যাক সেখানে বর্ষণ হচ্ছে মুষলধারে চাটুবাক্য,
মাঝখান দিয়ে সে চলেছে অবহেলায় —
ঢেউয়ের উপর দিয়ে যেন পালের নৌকো।
ওর চোখ দেখে ওরা করছে কানাকানি,
সবাই বলছে ভারতবর্ষের সজল মেঘ আর উজ্জ্বল রৌদ্র
মিলেছে ওর মোহিনী দৃষ্টিতে।
( এইখানে জনান্তিকে বলে রাখি
সৃষ্টিকর্তার প্রসাদ সত্যই আছে আমার চোখে।
বলতে হল নিজের মুখেই,
এখনো কোনো য়ুরোপীয় রসজ্ঞের
সাক্ষাৎ ঘটে নি কপালে। )
নরেশ এসে দাঁড়াক সেই কোণে,
আর তার সেই অসামান্য মেয়ের দল।

আর তার পরে?
তার পরে আমার নটেশাকটি মুড়োল,
স্বপ্ন আমার ফুরোল।
হায় রে সামান্য মেয়ে!
হায় রে বিধাতার শক্তির অপব্যয়!

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

ঠাকুরবাড়ীর আঙিনায়-জসীম উদ্দীন


 "যে সব কবিতায় এই আলো-আঁধারীর ছায়া থাকে, বোধহয় সেগুলোতে রস-উপভোগের একটি অপূর্ব আস্বাদ থাকিয়া যায়।"



রবীবাবুর লেখা পড়ে এই উক্তি ছিল, জসীম উদ্দীন এর। "ঠাকুরবাড়ির আঙিনায়" জসীম উদ্দীন দেখেছেন রবীবাবু আর অবনীন্দ্রনাথকে এক ঘরোয়া চোখে। আরও অনেক ব্যক্তিবর্গের কথাও উঠে এসেছে সযতনে। বইয়ের শেষে বিদ্রোহী কবিকে নিয়েও লেখা আছে, স্বাভাবিকভাবেই কেঁদেছি।
বিদ্রোহী কবির জীবনের অনেক বাঁকগুলো কান্না করতে বাধ্য করে। জসীম উদ্দীন লিখেছেন, কবি নজরুল যখন তার প্রথম ছেলে বুলবুলকে হারান, শত চিহ্ন জড়িত ঘর থেকে পালিয়ে কবি যেতেন ডি. এম লাইব্রেরীর কোলাহলের মাঝে, পল্লী কবির ভাষায়,


"যদি তিনি মনের সুখে 'সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে' লিখিতে পারিতেন, তবে সেই লেখা আরও কত সুন্দর হইতে পারিত।"


আমি "সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে" আবারও আওড়াই, কি করে পেরেছিলেন কবি তা লিখতে। ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয় নিয়ে এই রচনা সম্ভব!
সম্ভব, এদের দ্বারাই সম্ভব।
পল্লী কবি লিখেছেন,

"অপর কাহাকেও প্রশংসা করিতে পারিলে তিনি যেন কৃতার্থ হইয়া যাইতেন। অপরকে হেয় করিয়া নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করিতে তিনি কোনদিনই প্রয়াস পান নাই।"

বিদ্রোহী কবির বেদনাবহুল কিছু ঘটনাও জসীম উদ্দীন বর্ণনা করেছেন। যা পাঠককে নিজের মতন পড়ে নিয়ে ভাবতে হবে। কতই না অমানুষ হয়ে যাই আমরা কখনো কখনো। কষ্ট লাগে বিদ্রোহী কবির মাতৃতুল্য সেই হিন্দু রক্ষণশীল শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে। সমাজ তাকে ভালোই মূল্যায়ন করেছিল!

ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের কথা জানতে গিয়ে কিছু জানলাম পল্লী কবির জীবনের গানও, বিশেষ করে তার কৈশরের সেই ছোট্ট মনের কত স্বপ্ন, হতাশা, অপমান, কষ্ট। ঠাকুরবাড়ির অন্দর মহলে যাতায়াত শুরু হয় তার বন্ধুবর মোহনলালের হাত ধরে। জসীম উদ্দীনের লেখা পড়ে রবীঠাকুর মোহনলালকে চিঠিতে জানান,

"জসীম উদ্দীনের কবিতার ভাব ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। প্রকৃত হৃদয় এই লেখকের আছে। অতি সহজে যাদের লেখবার শক্তি নেই, এমনতর খাঁটি জিনিস তারা লিখতে পারে না।"


একটা চমতকার কথার উল্লেখ আছে, পল্লী কবি লিখেছেন, রবিঠাকুর খুব কষ্ট নিয়ে বলেন, তাকে নিয়ে অনেকেই যা খুশি, যখন তখন লিখেন। পল্লী কবির উত্তর ছিল,

"আপনি কবি, সাহিত্যিক, - আপনাকে নিন্দা করেও সাহিত্য তৈরী হয়। তাই আপনার নিন্দা করা সহজ।"


রবিঠাকুরের আক্ষেপ, লোকে মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে তো নিন্দে করে না।
পল্লী কবির উত্তর,

"মহাত্মা গান্ধী বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেও তাকে নিন্দে করে সাহিত্য তৈরী হয় না। আপনার সঙ্গে আপনার নিন্দুকেরাও কিছুদিন বেঁচে থাকতে চায়।"

এই স্থানে পড়ে আনমনেই হাসলাম, বাপুজীকে ভারতের মাটিতে এখন যা শুনতে হয়, রবিবাবু বাকহীন হয়ে যেতেন। আক্ষেপ করবার তো প্রশ্নই উঠেনা।


রবিবাবুকে নিয়ে পল্লী কবির উক্তি,

"কবির কাছ হইতে যখন ফিরিয়া আসিতাম, মনে হইত কোন মহাকাব্য পাঠ করিয়া এই ক্ষণে উঠিয়া আসিতেছি। সেই মহাকাব্যের সুরলহরী বহুদিন অন্তরকে সুখস্বপ্নে ভরিয়া রাখিত।"

 

"কবির মৃত্যু নাই একথা সত্য কিন্তু কবির সংস্পর্শে আসার সুযোগ যাহাদের হইয়াছে, তাহাদের মনের শূন্যতা কেহ কোনদিন পূরণ করিতে পারিবে না।"


পল্লী কবি অবনঠাকুরের সেই অনবদ্য চিত্রশিল্প "শাহাজাহনের মৃত্যু" তৈরি হবার কাহিনীও বর্ণনা করেছেন। বলা বাহুল্য পড়বার পর, নতুন করেই যেন সেই চিত্রকে আবিস্কার করি। মহান এই শিল্পীরা কী করে পারতেন! তাদের শিল্প তাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণের উপর নির্মাণ বলেই কি অমর!

পল্লী কবি, ঠাকুরবাড়ির কাহিনীর যবনিকা ঘটান এই শেষ কথাগুলো দিয়ে,


"প্রদীপ নিবিয়া গিয়াছে, মহানাটকের চরিত্রগুলি আজ একে একে বিদায় লইতেছেন। এ কাহিনী আর দীর্ঘ করিব না। যে নিয়োগ-ব্যথা আমার অন্তরের অন্ত:স্থলে মোহময় কান্নার বাঁশী বাজইয়া সেই অতীতকাল হইতে ছবির পর ছবি আনিয়া আমার মানসপটে দাঁড় করায়, তাহা আমরই নিজস্ব হইয়া থাকুক। লোকালয়ে টানিয়া আনিয়া আর তাহা ম্লান করিব না।"

পড়ছিলাম, পল্লী কবির "ঠাকুরবাড়ির আঙিনায়"।

রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

তোমাকে লেখা চিঠি - সাদিয়া রাশিদ

তোমাকে লেখা চিঠি - সাদিয়া রাশিদ

প্রিয় অর্ক

আজ অনেক দিন পর তোমাকে লিখছি।তোমার কথা  খুব একটা মনে পড়ে না আমার।মনে করার আর সময় পাই কই!সকালে উঠেই  রান্নাঘরে দৌড়...।উনার আবার প্রতিদিন পরোটা না হলে হয় না।শশুড় শাশুড়ির জন্যে রুটি আর বাচ্চাদের স্কুল টিফিন।সব যোগাড় যন্তর করে আবার নিজের অফিসে দৌড়! ৯ টার মধ্যে অফিসে না ঢুকলে বসের অগ্নিদৃষ্টি তো আছেই।আর ঢাকা শহরের যা অবস্থা এখন, উন্নতির জোয়ারে দেশ ভাসছে। সব পন্থাই তো প্রয়োগ হলো..এবার তোমার পছন্দের বামপন্থা টাই বা বাদ থাকবে কেন! আদর্শিক কমিউনিজম টা একটু এসে শিখিয়ে দিয়ে যাওতো সবাই কে! কি.দেশ.. রাজনীতি নিয়ে আগের মতোই ক্ষ্যাপা আছো? নাকি রিসার্চ আর নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত?

ক'দিন আগে তমাল এসেছিলো।তোমার খুব প্রশংসা করলো।বললো... ক্যামব্রিজে খুব ভালো একটা বিষয়ে রিসার্চার হিসেবে আছো,,মন প্রান দিয়ে কাজ করছো,, চশমা পড়া শুরু করেছো,চুলও খানিকটা সাদা হয়েছে। ওর কাছ থেকেই তোমার ঠিকানা চেয়ে নিলাম।এখনো বিয়ে করনি..এ খবরে কিঞ্চিৎ আহত হয়েছি ..এবং নিজেকে দোষারোপ করেছি। এখনো সেই রাগ অভিমান বয়ে বেড়াচ্ছ? বিয়ে করে..এবার একটু সংসারী হও। সারাজীবন একা থাকার দুঃসাহস ভুলেও করো না যেন!


আজ ক'দিন ধরে আমার বড় মেয়ে  মিনির জ্বর।মিনি ১০ বছরে পা দিলো এবার।অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি.. এক প্রকার জোর করেই।বস খুব নাখোশ ! প্রায় এটা ওটার জন্যে লাগাতার ছুটি নিয়েই যাচ্ছি।ক'দিন আগে ননদের বিয়ে,তার আগে শাশুড়ির অপারেশন, এর আগে উনার অফিসের সবাই কে দাওয়াত...আরো হাজারো সামাজিকতা তো আছেই.....................

চাকরি টা মনে হয় আর বাঁচানো গেলো না! 

সংসার নামক জাল টা একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে।ছেঁড়ার সাধ্য নেই আর! এই পৃথিবীময় আয়োজনের মাঝখানে তোমার চেনা সেই মৃন্ময়ী হারিয়ে গেছে।সেই মৃন্ময়ী, যাকে তুমি সেরা বিতার্কিক হিসেবে চিনতে.. আসর মাতানো আর হুল্লোড় করা যার সহজাত ছিলো... যার গানের মুগ্ধ শ্রোতা ছিলে তুমি.. যার লেখা কবিতায় তোমার ঘরের দেয়াল ভরে উঠতো...সেই মৃণ্ময়ী এখন মিনির মা কিংবা মিসেস রহমান কিংবা বউমা হয়ে....সংসারের বিভিন্ন ধাপে উত্তীর্ন!


 তুমি বলতে লেখালেখি টা ছেড়োনা কখনো..লিখতে থাকো...নাইবা দিলে সংবাদ পত্রে  ছাপতে ..তবু লেখাটা ছেড়োনা..লিখো নিজের জন্যে.. যা খুশি..যেটা খুশি.. ওটাই তোমার মনের শূন্যস্থান..বিরান জায়গা গুলোকে ভরিয়ে তুলবে...ওটাই তোমার জিরোবার জায়গা। তুমি ঠিক বলেছিলে..এই একটা মাত্র জায়গায় শান্তি মিলে যায়..!.যেদিন খুব মন খারাপ থাকে সেদিন খুব লিখি..এটা ওটা.. কবিতা..নিজের ভাবনা..স্বপ্ন.. দেশ,রাজনীতি... লিখে আমার ডায়েরীর পাতার পর পাতা ভরে তুলি।

আর মন খারাপ হলে "বোঝাপড়া" কবিতা টা আরো দশবার পড়ে নেই। 

মনটা ভালো নেই আজ।মেয়েটার জ্বর,অফিসের ঝামেলা,শশুড়ালয় ঘটিত সমস্যা.. সব মিলিয়ে

তো...আজ আমার মন খারাপের উপশম হলো--- তুমি...দেখি তোমাকে চিঠি লিখতে লিখতে মন কোথায় গিয়ে পৌঁছালো....! যে কলম টা দিয়ে লিখছি এটা হলো আমার সোনার কাঠি.. রুপোর কাঠি....

সাদা কাগজ ভরে উঠেছে কালো কালিতে আর আমার মনের ভার টাও কমে যাচ্ছে ক্রমশ।

অর্ক..শুধু আমার কথাই বলে যাচ্ছি...!দেখো..কেমন বদলে গেছি..এখন সারাটাক্ষন খালি "আমি.. আমি..আমার..আমার" করে বেড়াই...! ভাবতে পারো.. চারপাশের মানুষের চিন্তায় যার ঘুম হতো না..সেই মৃন্ময়ী এখন চার দেয়ালের বাইরে চিন্তাই করতে পারে না..??

অর্ক..!!জানি.. এ চিঠি তোমাকে ভীষন ভাবে ভাবিয়ে তুলবে..মন খারাপ হয়ে যাবে তোমার..

থাক না হয়...তোমাকে লেখা চিঠি আমার কাছেই রয়ে যাক... কোনদিন যদি ভুলে দেখা হয়ে যায়..সেদিন না হয় একশ একটা চিঠি একবারে নিয়ে নিও।

ভালো থেকো।

তোমার----

মৃন্ময়ী

পাঠ: বিনোদিনী

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...