সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯

সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী এবং সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী : একটি তুলনামূলক পাঠ (5th Part)

পর্ব-৫

~সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (১৯০৩ – ১৯৭৯) এবং সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী (১৯১৪ – ১৯৯৯): একটি তুলনামূলক পাঠ~


লেখক: মনোয়ার শামসি সাখাওয়াত

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মওদূদী এবং নাদভীর অভিমত এখানে পরপর সংক্ষেপে উপস্থাপন করে দুজনের চিন্তার মিল এবং অমিল খুঁজে দেখব আমরা। লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকবে।


এই তুলনামূলক পাঠের চারটি পর্বে ইতিমধ্যে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রসঙ্গে উস্তাদ মওদূদী এবং মওলানা নাদভীর চিন্তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্র, কুর’আনের চারটি মৌলিক ধারণা ও জাহিলিয়া প্রসঙ্গে বিংশ শতাব্দীর এই দুজন চিন্তক ও লেখকের বয়ানের মূলসূত্র ও উদ্ধৃতিসহ বিশ্লেষণ ইতিমধ্যে সন্নিবেশিত হয়েছে।


আজকের পর্বে আবার সারসংক্ষেপ পদ্ধতিতে ফেরত যাচ্ছি। অর্থাৎ কোন রকম উদ্ধৃতি না দিয়ে দুই মনীষীর অভিমতকে সংক্ষেপে নিজের ভাষায় উপস্থাপন করছি। এর একটি কারণ হল গত পর্বটিতে দুজনের রচনা থেকে উদ্ধৃতি দেবার পরে তা কিছু পাঠকের জন্য বুঝতে কঠিন হয়ে গিয়েছিল বলে আমাকে জানানো হয়েছে। তাই আবার প্রথম পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন করছি। এভাবে কয়েক পর্ব লিখবার পরে আবার দ্বিতীয় পদ্ধতি অর্থাৎ উদ্ধৃতি পদ্ধতি নিয়ে আসব, ইনশাআল্লাহ।


৬. জিহাদ প্রসঙ্গে

মওদূদী – তিনি শুধু প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের পক্ষে ছিলেন না। যেহেতু, তার মতে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন বা ঐহিক-পারলৌকিক ব্যবস্থা, সেহেতু ইসলামের রাষ্ট্র শুধু মুসলিম দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি সমগ্র বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য। জিহাদ অনৈসলামিক শাসন দূর করার জন্য ব্যবহৃত হবে এবং সমগ্র বিশ্বে ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী জিহাদ ততক্ষণ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্ব ইসলামের শাসনাধীনে না আসবে।


মওদূদীর জিহাদ বিষয়ক চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন মিশরের সাইয়েদ কুতুব। তিনি মওদূদীর প্রভাবে সবাইকে একটি বিপ্লবী অস্ত্রসজ্জায় প্রস্তুতির আহবান জানিয়েছিলেন। কুতুব মনে করতেন যে যেসব সরকারগুলি যথেষ্ট ইসলামী নয় সেগুলিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য প্রয়োজনে যেকোন ধরণের হিংসাত্মক কর্মকান্ডের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। কুতুব প্রথম পর্যায়ে জিহাদ প্রশ্নে অনেক কোমল ছিলেন কিন্তু পরবর্তীকালে তার জিহাদ বিষয়ক চিন্তা ক্রমাগত কঠোর হয়েছে। অবশ্য তার জিহাদ চিন্তার লক্ষ্য ছিল প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি নয়।


নাদভী – তিনি মওদূদীর সঙ্গে জিহাদের বেশ কিছু অনুষঙ্গ নিয়ে একমত ছিলেন। দুজনই একথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে জিহাদ প্রতিটি মুসলিমের উপরে একটি অপরিহার্য দায়িত্ব অর্পণ করেছে। তবে নাদভীর সঙ্গে জিহাদ প্রশ্নে মওদূদীর একটি মৌলিক পার্থক্য ছিল। সেটি হল নাদভী জিহাদের অতিরাজনীতিকরণের বিপক্ষে ছিলেন। তিনি এটিকে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের সমতুল্য মনে করাকে সমর্থন করেন নি।



৭. শারিয়া প্রসঙ্গে

মওদূদী – তার মতে শারিয়া আইন হল আল্লাহর আইন যা রাসুল সা. এর মাধ্যমে এই দুনিয়ায় আল্লাহ পাঠিয়েছেন। এর বাইরে বিদ্যমান যে কোন ধরণের আইন হল মানব-রচিত; সুতরাং সেসব আল্লাহর আইন ও হাকিমিয়্যা বা সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।

মওদূদীর প্রভাব বলয়ে থেকে সাইয়েদ কুতুব শারিয়া ব্যতীত অন্য যে কোন আইনের প্রতি আনুগত্যকে শিরক মনে করতেন। তিনি শারিয়া আইনের ভিত্তিতে ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য হিংসাত্মক পন্থা অবলম্বনকে ন্যায্য বলে মনে করতেন।


নাদভী – তিনিও শারিয়া আইনের একজন উৎসাহী প্রচারক ছিলেন। তিনি মওদূদীর মতই বলেছিলেন যে শারিয়া আইন হল আল্লাহর আইন। তিনি একে সব রকমের মানব রচিত আইনের উপরে স্থান পাবার অধিকারী বলে মনে করতেন। শারিয়া আইন দিয়ে ইসলামের প্রতিটি রাষ্ট্র পরিচালিত বা শাসিত হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করতেন।


এছাড়াও শারিয়া আইন বিষয়ক আরো কিছু অনুষঙ্গে নাদভী অন্য দুজন অর্থাৎ মওদূদী ও কুতুবের সঙ্গে একমত ছিলেন। কিন্তু নাদভীর সঙ্গে অন্য দুজনের যেখানে মৌলিক পার্থক্য ছিল তা হল এই যে, নাদভী মনে করতেন যে প্রতিটি মুসলিম যে দেশে বসবাস করে, সেই দেশকে যেন নিজ দেশ মনে করে এবং সেই দেশের একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিশেবে যেন নিজের ভূমিকা ও দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে। তবে এর পাশাপাশি সে যদি সবরকম বৈধ পন্থা অবলম্বন করে শারিয়া আইন ভিত্তিক ন্যায়ানুগ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করে তবে সেটি কোন দোষের বিষয় নয়।



(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...