মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৯

সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী এবং সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী : একটি তুলনামূলক পাঠ (3rd Part)

~সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (১৯০৩ – ১৯৭৯) এবং সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী (১৯১৪ – ১৯৯৯): একটি তুলনামূলক পাঠ~

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মওদূদী এবং নাদভীর অভিমত এখানে পরপর সংক্ষেপে উপস্থাপন করে দুজনের চিন্তার মিল এবং অমিল খুঁজে দেখব। 

প্রসঙ্গ -- কুর’আনের মৌলিক পরিভাষার অর্থ পরিবর্তন ও বোঝাপড়া, এবং জাহিলিয়া -- এ সম্পর্কে দুজনের মতামত উপস্থাপিত হল।

লেখক: মনোয়ার শামসি সাখাওয়াত 

৩. কুর’আনের মৌলিক পরিভাষার অর্থ পরিবর্তন ও বোঝাপড়া প্রসঙ্গে

মওদূদী – কুর’আনের মৌলিক পরিভাষা যেমন ইলাহ, রব, ইবাদাত এবং দ্বীন – এই চারটি শব্দের অর্থ আরবের জাহিলিয়া এবং নবী মুহম্মদ স. এর সময়কালে যেমন অনেকের কাছে বোধগম্য ছিল পরবর্তীকালে আর তেমন ছিল না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কুর’আনের এই শব্দগুলির অর্থে পরিবর্তন ঘটেছে। এই শব্দগুলির সম্পূর্ণ অর্থ ক্ষয়ে ক্ষয়ে সেখানে আংশিক ও অস্পষ্ট অর্থ চালু হয়েছে বলে মওদূদী মনে করতেন।

এর ফলে কুর’আনের প্রকৃত অর্থ উদ্ধার করা কঠিন হয়ে গেছে। এই কারণে কুর’আনের চার ভাগের তিন ভাগ অথবা আসল চেতনাই যেন বোঝাপড়ার বাইরে থেকে গেছে। এটিই মানুষের ইমান ও আমলের সমস্যার মূল কারণ বলে মওদূদী মনে করতেন।

নাদভী – কুর’আনের পরিভাষার অর্থ পরিবর্তন প্রসঙ্গে মওদূদীর অভিমত বিষয়ে নাদভী যে গঠনমূলক সমালোচনাটি লেখেন সেখানে তিনি মূলতঃ পাঁচটি প্রতিযুক্তি উত্থাপন করেছিলেন –

ক. মওদূদীর এই বয়ান কুর’আনের অর্থ শেখা ও বোঝার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর ক্ষমতা সম্পর্কে অহেতুক সন্দেহ সৃষ্টি করে।

খ. মুসলিম উম্মাহ কখনোই কোন যুগে বা কালে সম্পূর্ণভাবে কুর’আনের অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞ ও বিভ্রান্ত হয় নি।

গ. ইসলামের রয়েছে ইসলাহ ও তাজদিদের ধারাবাহিক ইতিহাস। মওদূদীর ব্যাখ্যা মেনে নিলে ইসলামের পরম্পরায় মহান সংস্কারক ও মুজাদ্দিদদের অবদানকে খাটো করা হয়।

ঘ. কুর’আনের চার পরিভাষার মওদূদীকৃত সংজ্ঞা ভারসাম্যপূর্ণ নয় বরঞ্চ এই সংজ্ঞায়ন একপেশে ও অতিরাজনীতিকরণের শিকার।

ঙ. ইকামাতে দ্বীন বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার আলোকে মওদূদীর বয়ান দ্বীনের উদ্দেশ্য ও উপায়কে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে না। উদ্দেশ্যকে উপায় এবং উপায়কে উদ্দেশ্য রূপে উল্টো করে দেখার ফলে ইবাদাতের আধ্যাত্মিক অনুশীলনে ঘাটতি দেখা দেয়। শিরক ও বিদাত বিষয়ে অতি সংবেদনশীল হবার ফলে পর্যাপ্ত রুহানী ইরফান ও ইহসানের চর্চা অনুৎসাহিত হয়। 

৪. জাহিলিয়া প্রসঙ্গে

মওদূদী – জাহিলিয়া প্রত্যয়টিকে মওদূদী ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত ধারণা বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি জাহিলিয়া বলতে অনেক ধরণের বিশ্ববীক্ষাকে চিহ্নিত করতেন; এইসব বিশ্ববীক্ষায় রয়েছে এমনসব চিন্তা, বিশ্বাস এবং কর্মকান্ড যা আল্লাহর হাকিমিয়া বা সার্বভৌমত্ব এবং দিব্য কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে। তিনি এইধরণের জাহিলিয়ার বিরুদ্ধে হিংসাত্মক উপায় অবলম্বনের সম্ভাবনাকে উন্মোচিত রাখতে চান।

নাদভী – ইসলামী নিজামের বাইরে যা কিছু আছে সেসবকে ঢালাওভাবে জাহিলিয়া বলে আখ্যায়িত করাকে নাদভী প্রান্তিক চিন্তা বলে মনে করতেন। তিনি অন্য মতাদর্শের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করার নীতির বিপক্ষে ছিলেন। তিনি দৃঢ় ও আন্তরিকভাবে মনে করতেন যে ইসলাম একটি বিপ্লবী মতাদর্শ হিশেবে সমকালীন সমাজ ও সংস্কৃতি পরিবর্তনের ক্ষমতার অধিকারী। এক্ষেত্রে ইসলামের বর্তমান সম্ভাবনা সপ্তম শতাব্দীতে জাহেলী আরবের মতই উজ্জ্বল। তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য সংগ্রাম এবং মতাদর্শিক বিজয়ের জন্য সংগ্রামের মধ্যে স্পষ্টভাবে পার্থক্য নির্ণয় করতেন। যদিও প্রথম ধরণের সংগ্রামের ক্ষেত্রে হিংসাত্মক কর্মকান্ড অনুমোদিত হলেও দ্বিতীয় ধরণের সংগ্রাম সম্পূর্ণ অহিংস পদ্ধতিতে মানুষকে আশ্বস্ত করে পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে ইসলামে কোন জোর জবরদস্তি করা যাবে না। আর তিনি আরবদের নেতৃত্বের উপরে অনেক বেশি প্রত্যাশী ছিলেন।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...