শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭

মহা ভাবনা..."A philosophy of Astronomy" Summary

আস্সালামু আলাইকুম,


আজ শেয়ার করব .... "মহান ভাবনা" এই বইটি থেকে। এমন কিছু কথা, যা সত্যিই কেমন যেন এক নতুন করে ভাবনাগুলোকে নাড়িয়ে দেয়। আশা করি ভালো লাগবে। 


PART : 1

এ বিশ্বে একমাত্র মানুষই তার স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবতে পারে, এর জন্যে প্রথমেই তার জানা উচিৎ তার ভাবনাশক্তি কতটুকু এবং তার ভাবনার "সত্ত্বা" সেই মহাস্রষ্টার পরিচয় কি?

মানুষ ছোট হোক বা বড় হোক, মহাজ্ঞানী হোক বা ক্ষুদ্র জ্ঞানী, সে নিজেকে যা ভাবে বা নিজেকে যতটুকু যোগ্য মনে করে সেকি আসলেই তাই? মানুষের জ্ঞানের দৌঁড় এবং যোগ্যতার সীমা জানতে হলে মহাবিশ্ব নিয়ে যদি একটু ঘাটাঘাটি করি তবে দেখা যাবে, মানুষ নামে আমরা যে এত দম্ভ দেখাই, আমাদের আসলে কোন অস্তিত্বই নেই।

সংক্ষিপ্তভাবে মহাবিশ্বের আলোচনা: পৃথিবীর পরিধি (বেড়) হচেছ ২৫০০০ মাইল। আর ব্যাস হচ্ছে ৮ হাজার মাইল। এবং ওজন ৬ এর পর ২১ টি শূন্য বসালে যা হয় তাই। আর সূর্য হচ্ছে পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুন বড়। ওজন পৃথিবীর চেয়ে তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার গুন বেশি। এই সূর্য তার ৯টি গ্রহ ও ৪৪ টি উপগ্রহ নিয়ে সৌরজগত গঠন করেছে। এই সৌরজগত আবার একটি মহাজগতের ভেতর আছে, যার নাম হচ্ছে ছায়াপথ (Milky way) এই ছায়াপথটিকে একটি এমন বিশ্ব বলা হয়, যা কল্পনা করতেও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে। আর এই রকমই মহাবিশ্ব আছে অসংখ্য, যার সংখ্যা বিজ্ঞানীরা এই অব্দি বের করতে পারেনি।

বিজ্ঞনীরা বলে কালো গহবর বলতে মহাশূন্যে একটি ভয়াবহ এবং অন্ধকারতম জায়গা আছে। এর আকর্ষন ক্ষমতা এত বেশী যে, কোন নক্ষত্র তার কাছ দিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা আলোও তার ছোবল থেকে রেহাই পায় না, সেই আলোকেও শুষে নেয়। যদি কোন নক্ষত্র তার আকর্ষন ব্যাসার্ধের মধ্যেও আসে তাহলে কালো গহবরের আকর্ষণে নক্ষত্রটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে এবং বিচ্ছিন্ন অংশগুলোকে কালো গহবর নিমিষেই গ্রাস করে ফেলে।

বিজ্ঞনীরা আরোও একটি আশ্চর্য ঘটনার কথা বলছে যা মহাবিশ্বে মহাসৃষ্টির আদি থেকে অদ্যাবধি চলছে। সেটা হচ্ছে, মহাবিশ্বের কোটি কোটি নীহারিকা বিশ্ব, যার প্রত্যেকটার ভেতর প্রায় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি নক্ষত্র আছে। সৃষ্টির পর থেকেই এর মহাপ্রচন্ড গতিতে এক অজানা লক্ষ্যের দিকে বিরামহীনভাবে ছুটছে। এরা একদিকেই শুধু ছুটছে আর কোন দিন ফিরে আসে নি।

এই মহাবিশ্বের এবং মহাশূন্যকাশের বিশালতার তুলনায় মানুষ কতটুকু!! স্রষ্টা বলেন, "লিল্লাহি মাফিছ ছামাওয়াতি ওমা ফিল আরদ" (আল-কুরআন)-- ("আসমান সমূহে যা কিছু আছে এবং যা কিছু আছে পৃথিবীতে সবই আমার।") 
"ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আ'লীউল আজীম"- (এই মহাসৃষ্টি হেফাজত করতে আমার মোটেও বেগ পেতে হয় না। এবং সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তিনি উচ্চ, সুমহান এবং সবার উপরে বড় ও সর্বশক্তিমান।)


এখন শুধু আমাদের এই সূর্যকে নিয়েই ভাবি। সূর্য যদি ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরত্ব কমিয়ে ৪ কোটি মাইল হতো তবে, পৃথিবী বলতে কোন অস্তিত্বই থাকত না।
আবার সূর্য যদি তার বর্তমান অবস্থান থেকে একটু অধিক দূরত্বে অবস্থান করত, তবে পৃ্থিবীতে এমন শীতলতা সৃষ্টি হতো যে মানুষ তো দূরের কথা কোন প্রাণীরই অস্তিত্ব কল্পনা করা যেত না। আল্লাহ পাক সূর্যকে মাটির পৃথিবীর জীবনীশক্তির প্রধান শক্তি হিসাবে সৃষ্টি করেছে।

সূর্যের ভেতরে বিপুল পরিমান অনু বিস্ফোরণ হওয়ার কারণে, সহজ কথায় সূর্যের যে ক্ষতি হয়, তার পরিমান প্রতি সেকেন্ডে ৪০ লক্ষ টন অর্থাৎ সূর্যের আলো এবং তাপ (মনে করি একটি জলন্ত চুলো) জ্বালিয়ে রাখতে প্রতি সেকেন্ডে ৪০ লক্ষ টন লাকড়ি সূর্যের ভেতর ঠেলতে হয়। এই ভাবে দিনরাত ২৪ ঘন্টায়, ৩৫ হাজার কোটি টন লাকড়ি সূর্যের মধ্যে দিলেই একমাত্র তার আগুন ঠিক থাকবে, এবং আমাদের সকলের এবং গাছপালার জীবনও বেঁচে থাকবে। মহান স্রষ্টা প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ টন লাকড়ি ঠেলে সূর্যকে জ্বালিয়ে  আমাদের জ্ঞানের অজান্তে অলক্ষ্যভাবেই পৃথিবীর সকল জীবনীশক্তি বাঁচিয়ে রেখেছেন।  এই যে ২৪ ঘন্টায়, সেকেন্ডে সেকেন্ডে এত কোটি কোটি টন লাকড়ি ঠেলছেন, কখনো কি প্রতিদান চেয়েছেন?? আমরা "সুবহানাল্লাহ", "আলহামদুল্লিল্লাহ", আল্লাহু আকবার" কতবার বলি??

এই মহাবিশ্বের এবং মহাশূন্যকাশের বিশালতায় মানুষ কতটুকু? এই মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুন সূর্যের কোন অস্তিত্বই নাই। সেই সূর্যের কাছে পৃথিবী কতটুকু? সেই পৃথিবীর আবার কতটি মহাদেশ! সেই মহাদেশের মধ্যে আবার কতগুলো দেশ চীন, জাপান, রাশিয়া, ভারত। সেই ভারতবর্ষেরই আরো একটি ক্ষুদ্র অংশ বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের কতগুলো বিভাগ, সেই বিভাগগুলোর মধ্যে আমরা আছি, তাও কোন একটি ছোট ছোট শহরের, ছোট কোন অংশের, কোন একটি ঘরের ভেতর, কোন একটি কামরা তে,,,, এই ক্ষুদ্র আমরা "মানুষ"!! আর সেই মহান সৃষ্টিকর্তা বলেন, আমি তোমার ঘাড়ের শিরার চেয়েও অতি নিকটে আছি!!

আল্লাহপাক বলেন, "নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি আর দিবারাত্রির বৈপরিত্যের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে অকাট্য নিদর্শনসমূহ।"- আল-কুরআন।

মানুষের ভেতর যে অাত্মা বা রুহ আছে তাকে জাগাতে হয়, এই রুহের অসীম শক্তি। একে জাগাতে পারলে তার শ্রবণ, দর্শন, অনুধাবন শক্তির উন্নতি হয়, তখন সে সেই মহান স্রষ্টা আল্লাহু রাব্বুল আলামিন কে উপলব্ধি করতে পারে এবং আল্লাহ বলে যে একজন মহান স্রষ্টা আছেন, তা অর্ন্তদৃষ্টি দ্বারা বিশ্বাস করতে পারে....আল্লাহ পাক্ বলেন, "ফাজকুরুনী আজকুরুকুম"- অর্থাৎ "তুমি আমাকে ডাক, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব।"

Part 2:

লেখক বলেন, জ্ঞানী ব্যক্তিরা কোনদিনও ক্ষণিকের লাভের বর্শীভুত হয়ে দীর্ঘস্থায়ী স্বার্থকে বিসর্জন দেয় না। আর দুনিয়া হচ্ছে ক্ষণিকের, আখেরাত চিরস্থায়ী। আর এই চিরস্থায়ী জীবনের উদাহরণ সম্পর্কে নবীজী (সা:) যে বাণী অাছে তা জানলে অনুধাবন করা যায়, চিরস্থায়ী জীবন কি!!
"এই সমগ্র পৃথিবীকে খালি করে তা যদি আসমান বরাবর সরিষার দানা দিয়ে ভরিয়ে ফেলা হয়, এবং অন্য কোন দুনিয়া থেকে একটি পাখি পাঁচশ বছর পর পর এসে, একটি করে দানা নিয়ে যায়, তবে কখনো না কখনো সেই সব সরিষার দানা ফুরিয়ে অাসবে, কিন্তু মরণের পর যে জীবন শুরু হয় সেই সময় কখনোও শেষ হবে না।"
আমরা যদি পূর্বে উল্লেখিত মহাকাশের ব্যাপ্তি নিয়ে ভাবি তবে, বোঝা যাবে, অনন্ত জীবন কি!

হযরত মা আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা:) বলেছেন, "যে ব্যক্তি দিনে বিশ বার মরণকে স্মরণ করে, তার শহীদের চেয়েও বেশী নেকী হয়।" (বুখারী শরীফ)
আর আমরা তো জানি, যখন আপনি আপনার এই দিনটিকে শেষ দিন মনে করবেন তখন আপনার আচরণ আপনার বাবা-মা, স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে, সন্তানদের সঙ্গে, প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে, বন্ধু-কাজের কলিগদের সঙ্গে কিংবা বাইড়ের কোন মানুষের সঙ্গে কেমন হবে!! ভাবুন শেষ কেমন আচরণ করবেন!! তারা আপনার কোন আচরণ মনে রাখবে??
অবশ্যই আমরা ভালো আচরণ করার চেষ্টা করব, যাতে কেউ না বলে "যাক্, মরেছে শেষ অব্দি!! বেঁচেছি!!"
আর এতে আমাদের নিজেদেরই আত্মা শান্ত থাকবে, আমরা নিজেরাই কোন অশান্তিতে বাঁচব না। (মনে রাখবেন, আপনার মনের অশান্তি, রাগ, দু:খ-কষ্ট একমাত্র আপনিই কিন্ত বুঝতে পারছেন, আর কেউ পারছে না।)


আল্লাহর অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে হলে বুঝতে হবে আমরা আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যাবতীয় জ্ঞান আহরন করি, চোখ, কান, নাক, ত্বক এবং জিহবা। কিন্তু এ ছাড়াও আরো এক ইন্দ্রিয় আছে তা হচ্ছে আত্মা বা রুহ। এই আত্মা দ্বারাই আল্লাহপাক কে বোঝা যায়, উপলব্ধি করা যায়, তার বিশালত্ব। ঈমান এখানেই পরিনত হয়।
আত্মাকে পরিস্কার করতে হলে বুঝতে হবে, এর অবস্থান কোথায়, নবীজি (সা:) বলেন, "মানব দেহের ভিতর এক টুকরো গোস্ত খন্ড আছে, যেটা পরিস্কার হলে গোটা দেহটাই পরিস্কার হয়ে যায়, আবার যেটা নাপাক বা অপরিস্কার হলে সম্পূর্ণ মানব দেহই অপরিস্কার হয়ে যায়। মনে রেখো, এরই নাম হচ্ছে কলব্। আর আল্লাহপাক তো মানবের কলব্ এর মধ্যেই বাস করেন।"

কালেমা "লা ইলাহা"র ভেতরে ধারনাতীত শক্তি আছে। প্রতিনিয়ত এটি পাঠ করলে কলব্ কে পরিস্কার করা যায় অনেক দ্রুত। খুব খেয়াল করে ভাবুন, এই দেহ,....... বাহ্যিক দেহ সূর্যের আলোর কাছ থেকে শক্তি নিয়ে যেমন বেঁচে থাকে ঠিক তেমনি যত বেশি কালেমা পাঠ করব, তত বেশি "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ র" শক্তি আমরা আমাদের কলব্ এর মধ্যে পাবো।



প্রতিদিন রোজ চেষ্টা করুন, কালেমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" ৫০০ বার পড়া, সম্ভব না হলে, ১০০ বার অন্তত পড়া। রোজ ১০০ বার "আসতাগফিরুল্লাহ" পড়া।
সম্ভব হলে প্রত্যেক নামাযের পর একবার করে পড়া... "আসতাগফিরুল্লাহ হিল্লাজি, লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া তুবু ইলাইহে লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম" (চেষ্টা করলে সবই সম্ভব!!)

আর প্রতিদিন ১০০ বার করে "সোবহানাল্লাহ"
"আলহামদুলিল্লাহ" আর "আল্লাহু আকবর" পড়া।

আর দুরুদ শরীফ তো আছেই। যে যত বেশি দুরুদ শরীফ পড়ে, নবিজীর প্রতি ভালোবাসা ততই বৃদ্ধি পায়। এর ফযিলত তো অগণিত...অগণিত।
যেমন, ১/ দরুদ পাঠ করার সময়, সকল ফেরেশতারা দোয়া করে।
২/  জীবনে অভাব অনটন দূর হয়ে যায়, পাপ পরিস্কার হতে থাকে, 
৩/ দরুদ শরীফ পাঠকারী রোজ হাশরের ময়দানে আল্লাহ আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে /
৪/ দুরুদপাঠকারীর মনোবাসনা পূরণ হয়।
৫/ দুরুদপাঠকারীর ইহকাল অার পরকালের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ পাক নিয়ে নেন।

(বলুন তো আর কি চাই আমাদের??? আর আমাদের এমন কিসের ব্যস্ততা যে আমরা দুরুদ পাঠ করার সময় পাবো না!! কিংবা এমন কি কাজের চাপ যে রোজ দুরুদ শরীফ পাঠ করতে বেমালুম ভুলেই যাবো!!!)


তো এই ছিল "মহা ভাবনা", "A Philosophy of Astronomy" লেখক অধ্যাপক মাওলানা অাযহারুর ইসলাম সিদ্দিকী এর সংক্ষিপ্ত "Book Summary"। এর থেকে আপনারা যদি বিন্দু মাত্র উপকৃত হন, তো সেটা আমার পরম পাওনা, আর আপনাদের সাড়া দেয়া আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার অনুপ্রেরণা। এরমই পাশে থাকবেন, অনুপ্রাণিত করবেন। আর অামারও প্রচেষ্টা থাকবে, বিভিন্ন ধরনের বই এর জগতে আপনাদের ডানা মেলবার পথ করে দেয়া।


ভালো থাকুন, দেখা হবে আগামী বুধবার অন্য কোন একটি বই নিয়ে.....
keep reading....







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...