বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৩

"অশ্বযোনি".....বাণী বসু....


"এ এক নায়িকার উপাখ্যান। জীবনের প্রতি পদে যার বাঁধন.......এক পরিবার তত্ত্ব তাকে শয়ন-স্বপনে-জাগরণে অশরীরী এক ইচ্ছাশক্তির মত তাড়া করে বেড়ায়। এই অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে পাথেয় করে সে চায় এগিয়ে চলতে।............তার সামনে নতজানু হতে বাধ্য হয় অন্যরা, যারা এতদিন ক্রমাগত তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে আসছে।"
 
ভেঙ্গে ভেঙ্গে ভূমিকার কিছুর কথা তুলে ধরলাম।


"নিপুন দক্ষতার সঙ্গে এই উপাখ্যান বুনেছেন এ-সময়ের প্রথম সারির লেখিকা বাণী বসু। এ কোনও ইচ্ছাপূরণের রূপকথা নয়। তবে এ-কাহিনির প্রতি ছত্রে পাঠক হয়তো খুঁজে পাবেন নিজেকে...।"

বাণী বসু...অনেকেরই চেনা নাম। এ কালের একজন শক্ত লেখিকা। জন্ম কলকাতায় ১১ ই মার্চ ১৯৩৯। 
আমার পড়া প্রথম বই ‍"অষ্টম গর্ভ" তারপর "মৈত্রেয় জাতক"। "মৈত্রেয় জাতক" লেখা বুদ্ধের জীবনের উপর...যাক গে এখানে সেটা আর কপচাবোনা। কথা হোক্ শুধুই "অশ্বযোনি" নিয়ে। মজার কথা হচ্ছে আমার এক সখী নাক কুচকে বলেই ফেলে..."এ আবার কেমন নাম!" বৎস এ যে বাণী বসু!!
 
এর লেখার স্টাইলটা বড্ড নজর কাড়ে। দুরদেশের লাইব্রেরীতে দেশীয় বই দেখে মনটা আনন্দে ভরে যায়...আর চোখ জুড়ায় বাণী বসু কে দেখে। ভালো লাগে কেননা... লেখেন এমনভাবে যেন ......হুমম.. ঠিক যেন ধূলোর আস্তর সরিয়ে কোন ছবির স্পষ্টতা ফুটিয়ে তোলা। বর্তমানে কথা বলতে বলতে অতীতের এক ফ্ল্যাশব্যাক।
বইটি শুরু হয় এমনভাবে....

"যখন বাড়ি ফিরছিলুম আমি একা হলেও একা ছিলুম না। আমার সঙ্গে ছিল চোখের ও শরীরের ভঙ্গি সব, শিল্প যাদের স্থির করে দিয়েছে কিন্তু তাদের জঙ্গম জীবনময় চরিত্রকে পাল্টাতে পারেনি। জঙ্গমকে ধরতে পারাই বোধহয় শিল্পের কঠিনতম সাধনা।"

যে নায়িকা কে নিয়ে লেখা তার অতীত জীবন বড্ড অবহেলিত। বেড়ে উঠার পরিবেশ ছিল বদ্ধময়। সব থেকেও কিছু নেই। মহর্ষির মতন একজন পিতা, আর মোনালিসার মতন ধোঁয়াটে একজন মা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় কতনা কালচার্ড পরিবেশ। ভেতরে... জটিল-কুটিল স্বার্থসর্বস্ব কিছু জীবের বসবাস। সেই পরিবেশে বেড়ে উঠা এক শিশুর মনে ছিল জ্ঞানের তীব্র আকাঙ্খা। যে যার স্বার্থের চিন্তায় মত্ত। কোনরকমভাবে দাদাভাই বাগে এনে স্কুলে ভর্তির হবার মধ্য দিয়ে ছোট্ট সেই শিশুটি শিখে যায়....
"যেটা চাই, নিজে নিজে আমায় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।"

লেখিকা যেন গল্প বলতে বলতে কোথাও হারিয়ে যান...সাথে আমিও হারাই। কঠিন বাস্তবতার সাথে সংঘাত, তবুও প্রকৃতির সাথে একাত্মতায় খুঁজে নেন ক্ষণিকের সাত্বনা।
মন ছুঁয়ে যায়...
"জানালা দিয়ে চৈত্রের প্রথম বৃষ্টির সুগন্ধ ভিজে হাওয়া হু হু করে ঢুকছে, সর্বাঙ্গ যেন জুড়িয়ে যাচ্ছে মায়ের আদরে।"

এমন করে কখনো ভাবিনি.....।
একটা কথা অনেক মজার লেগেছে....
"একজন বিশ্রী আলগা অসংযমী মানুষ যেমন অপমানকর, অসহ্য, একজন আটকাঠ বন্ধ করা লোকও তেমনই অসহ্য হতে পারে।"


সত্যিই কিন্তু!
ঘটনাগুলো এমনভাবে বিচরন করতে থাকে যে অনেক কিছু মনে হয়..নাহ্, লেখিকা বড্ড বেশি অতিরঞ্জিত করছেন আবার মনে হয় নাহ্, এমনতো হয়েই থাকে। তুমি, আমি, আপনি...কতটাইবা দেখেছি, পলেস্তারের নিচে চাপা পরা মানুষের জীবন।যান্ত্রিকতার কর্কশ শব্দের ভারে হারিয়ে যাওয়া হাজারো কান্না...চিৎকার।
 
নায়িকার মোনালিসার মত মায়ের কথা কিছু বলতে চাইছিনা। পাঠক নিজেই পড়ে জেনে নেবেন। উনি নিজেই এক দুর্দান্ত সাসপেন্স নায়িকার কাহিনীতে।
লেখিকা এক বিদেশীর আবির্ভাব ঘটায় কাহিনীতে, তার সাথে এক দর্শনেরও। আর এই দর্শন, মনের আগোচরেই আমাদের জীবনে তার ছাপ রাখছে। বিদেশী 'নীল' বলে...
"এই পৃথিবীতে পরিবার পরিবারে জন্মায় না। বাবা, মা, ভাই-বোন, দাদা, দিদি এই সমস্ত সম্পর্কগুলো ছড়িয়ে থাকে সারা জগৎ জুড়ে, তাদের খুঁজে পেতে হয়।"

প্রায় প্রতিটি পাতায় অদ্ভুত ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়েছি.....কখনো কখনো সত্যিই হারিয়েছি। প্রেমে পড়েছি "বাণী বসু"র বলতে দ্বিধা নেই। আজ আর বেশি ঘাঁটবোনা। শেষের পাতার কিছু লাইন.....

"মাত্রই তিনজন। সেই তারা ভরা রাত। আমরা সেই তারাভরা আকাশের দিকে ঊর্ধ্বমুখ। কত না আলোকবর্ষ পার হয়ে আমাদরে স্পর্শ করতে আসছে ওরা। এখন হয়তো আর নেই, পুড়ে শেষ হয়ে অনন্তে মিলিয়ে গেছে। কিন্তু যতক্ষণ ছিল জ্বলজ্বলে হয়ে বেঁচেছে। এখনও যখন আমাদের চোখে বেঁচে আছে, তখন নিশ্চয় একরকম করে বেঁচেই আছে। কে বলবে সেই বেঁচে থাকার মানে কী? বিজ্ঞান হয়তো কোনওদিন আয়ুর অন্য কোনও সংজ্ঞা বার করবে। এখন সকলই গুহায় নিহিত।.............এ সেই আসল অশ্বিনীর আকাশ ভরা হ্রেষা। সে ছুটছে, তীব্র নীল জিজীবিষায় ছুটে যাচ্ছে অরণ্যের পর অরণ্য নক্ষত্রের পর নক্ষত্র, আরোও ছায়াপথ আরও নীহারিকার রুপোলি নির্জন, দশ দিকে দিঙ্নাগেদের উদ্ধত তর্জন বিশাল বিশাল লাফে পার হয়ে ...ছুটছে।"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...