বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭

Mazlish Ghazzali by Imam Al Ghazzali (rh.)

বৃষ্টির প্রচন্ড আলস্যের আসক্তি থেকে আপনারা নিরাসক্ত হতে পারেন, আমি ঠিক পারি না!! আর তাই তো গতকাল মিস করে গিয়েছি পোষ্ট দেয়াটা...

আসুন একটা ভিন্ন ধর্মের বই ঘাঁটি আজ, একদম ছোট্ট, মোদ্দা কথাগুলো তুলে ধরব।

পর্ব ১

ইমাম গাজ্জালীকে অনেকেই চেনেন। তাঁকে "হুজ্জাতল ইসলাম" বলা হয়। ছোট্ট করে তাঁর সম্পর্কে বলতে গেলে, আবু হামিদ মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ আল-গাজ্জালি, ১০৫৮ সালে ইরানের খোরাসানের তুশ নগরীতে জন্মগ্রহণ এবং মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পিতার নামটিও ছিল তাঁর নামের অনুরূপ, মুহাম্মদ। মৃত্যুবরণ করেন ১১১১ সালে।

গাজল অর্থ সূতা, নামকরনের এই সামঞ্জস্যতা তাই তাঁর বংশকে গাজ্জালী নামে পরিচিত করেছে।


ইমাম গাজ্জালি (রহ•) ৪০০ ও অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তার অধিকাংশ বইগুলোতে ধর্মতত্ব, দর্শণ ও সুফিবাদ আলোচনা করেছেন।

আজকের যে বইটি থেকে সামারি দেব, সেটি হচ্ছে "মাজলিসে গাজ্জালী" এটা তাঁর বিশেষ মজলিসে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্যে দেয়া কিছু "নসিহত" বা "উপদেশের" সমষ্টি।

বইটির অনুবাদক এর নাম জানি না। (বড়ই লজ্জিত!)

আমি বইটি থেকে কিছু কিছু মূল্যবান উক্তিগুলো তুলে ধরেছি, আসুন পড়ি, চিন্তা করি এবং বোঝার চেষ্টা করি।

১) চারটি কাজ বেশি বেশি করতে পারলে আমাদের আত্মিক উন্নতি খুব দ্রুত সম্ভব।
যা হচ্ছে, ক) কম খাওয়া। খ) কম কথা বলা। গ) কম ঘুমানো এবং ঘ) কম মেলামেশা করা।

২) কেউ যদি "এলেম" বা "জ্ঞান" সম্পর্কিয় কোন প্রশ্ন করে তবে তার (প্রশ্নকারীর) অবস্থা এবং হাল-হাকিকত বুঝে উত্তর দিতে হবে। (কারণ সবাই সব কথা বোঝেনা।)

৩) "সফর" চার প্রকার হওয়া চাই, ক) হজ্জের উদ্দেশ্যে (যার উপর ফরজ)। খ) মদিনা শরীফ যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে। গ) বায়তুল মোকাদ্দাস যিয়ারতের উদ্দেশ্যে। ঘ) ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্যে।

৪) মানুষকে দুনিয়াতেই দুনিয়ার আসক্তি ত্যাগ করা উচিৎ।

৫) আল্লাহ্তালা কখনো কখনো তাঁর প্রেমিকদের উপর রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন আবার কখনো কখনো বিপদ। কিন্তু প্রেমিকরা জানেন ভাল-মন্দ তো সব আল্লাহর পক্ষ থেকেই। তাই সুখ-দু:খ সব কিছু্কেই তারা আনন্দের সাথে বরণ করে।

৬) "রুহ" দুইভাবে বের হয়। এক, সম্পূর্ণভাবে যেটাকে বলে মৃত্যু, আরেকটি নিদ্রায় গেলে। কারণ যখন সে নিদ্রায় যায়, তখন তো সে নিশ্চুপ থাকে, তার সামনে কোন কথা-বার্তা হলে সে জানে না। কাজেই এটা আংশিক মৃুত্যু। (এর সর্ম্পকে আল্লাহপাক কোরানে বলেছেন, যে কারো কারো রুহ ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি নিয়ে নেন।)

৭) এবার একটা মজার ঘটনা উল্লেখ করব, ইমাম গাজ্জালী আরেক বড় জ্ঞানী আউলিয়া হযরত জোনায়েদ বাগদাদী (রহ:) কথা বলছিলেন, একবার জোনায়েদ (রহ:), এক বিশিষ্ট ইহুদী অালেম ব্যক্তির মজলিসে যান এবং সেখানে সেই ইহুদি অালেম ছিলেন অনেক সমাদৃত। তার কথাকেই সমাজের সবাই এক বাক্যে মেনে চলত। তো সেই ইহুদি আলেম জোনায়েদ বাগদাদী (রহ:) কে তিনটি প্রশ্ন "ইসলাম" ধর্মের উপর জিজ্ঞেস করেন যা সে কোনভাবেই বুঝতে পারেন না। জোনায়েদ (রহ:) শর্ত দেন যদি সে এর উত্তর দিতে পারে তবে তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। ইহুদি আলেম রাজি হয়ে প্রশ্ন করেন,
ক) বেহেশতে এতো পানাহারের পরও কেন প্রসাব-পায়খানার প্রয়োজন হবে না। কিভাবে ??
খ) বেহেশতে এমন একটি বৃক্ষ আছে যার শাখা-প্রশাখা বেহেশতের সকল ঘরের উপর বিস্তার করবে। কিভাবে সম্ভব?
গ) বেহেশতের নিয়ামত যতই খাওয়া হোক না কেন তাহার ঘাটতি হবে না!! কিভাবে??

জোনায়েদ (রহ:) উত্তর দেন,
ক) প্রথম প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, সন্তান যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন সে পানাহার করে, তখন কি তার প্রসাব-পায়খানা প্রয়োজন হয়!!
খ) দ্বিতীয়, পৃথিবীতে সূর্য একটাই অথচ এর আলো সকল গৃহের উপরই পতিত হয়। ভিন্ন ভিন্ন দেশের জন্যে কি ভিন্ন ভিন্ন সূর্যের প্রয়োজন হয়??
গ) তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, "কোরআন শরীফ"। অগণিত লোক উহা তেলায়াত করে, শ্রবণ করে এবং তার দ্বারা উপকৃত হয় অথচ এর স্বাদ এবং মাধুর্যে কখনোও কোন পরিবর্তন আসে নাই এবং আসবেও না।

(সুবহান্নাল্লাহ..... এই ধরনের অযথা কু-যুক্তি আজোও বহু মানুষ করে অথচ আল্লাহপাক প্রতিটা বাণীর নিদর্শন আমাদের জন্যে দুনিয়াতে রেখেছেন, এই জন্যেই কোরআনে বার বার বলা হয়েছে পড় এবং চিন্তা কর। কোরআন জ্ঞানীদের জন্যে।)

জোনায়েদ বাগদাদী (রহ:) সেই বৃদ্ধ ইহুদি আলেম কে জিজ্ঞেস করেন, আমি আপনার তিনটি প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছি, আমি শুধু একটা প্রশ্ন করব এবং তার উত্তর আপনাকে দিতে হবে....

কি ছিল সেই প্রশ্ন এবং কি ছিল তার উত্তর সেটা জানার জন্যে ইনশাল্লাহ পরবর্তী বুধবারে আমরা আবার দেখা করব, সেই অব্দি, ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

ভাল এবং সার্থক সময় কাটুক, এই কামনায় এখানেই বিদায়।


পর্ব ২:


আমরা আগের পর্বে শেষ করেছিলাম জুনায়েদ বাগদাদী (রহ:) সেই প্রশ্ন না জেনেই, তো আসুন জেনে নেই উনি কি প্রশ্ন করেছিলেন, এবং কি উত্তর ছিল সেই ইহুদি বৃদ্ধ আলেম এর।

জুনায়েদ (রহ:) প্রশ্ন করলেন, হে বৃদ্ধ আলেম, আমি তো আপনার তিনটি প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছি, এখন আপনি আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিন।
বৃদ্ধ বলিলেন কেন না! প্রশ্ন করুন।
জুনায়েদ (রহ:) প্রশ্ন করিলেন, বেহেশতের দরজার উপর কি লেখা আছে?

বৃদ্ধ একদম স্তব্ধ হয়ে রইলেন। তার সাগরেদরা তো আলেমকে প্রশ্ন করা শুরু করল, যে কেন আপনি জবাব দিচ্ছেন না! জবাব দিন।
বৃদ্ধ বললেন, আমার জবাব তোমরা সহ্য করতে পারবে? মানতে পারবে?
- অবশ্যই পারব!
অস্বীকার করবে না তো!!
- প্রশ্নই উঠে না অস্বীকার করার।

বৃদ্ধ বললেন, বেহেশত এর দরজার উপর লেখা আছে, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূল্লাহ্"।
(সুবাহানাল্লাহ)

পরবর্তীতে ঐ মজলিসের সকলেই ইসলাম গ্রহণ করে নেয়।


যাক্, এই ঘটনার পরে আমি আবার সেই ছোট ছোট মূল্যবান কথাগুলো তুলে ধরছি।

৮) ধৈর্য্যধারণ এবং চুপ করিয়া থাকাই তোমার পথ, এর চেয়ে উত্তম কোন পথ আমি জানি না।

৯) মোমেনের কর্তব্য হলো, ঈমানের ব্যাপারে সততার আশ্রয় গ্রহণ করা এবং পদস্থলন হতে সর্বদা সতর্ক থাকা।

১০) প্রশ্ন করা হয়, "প্রতিমা" কি?? ইমাম গাজ্জালী উত্তর দিলেন, যে বস্তুই তোমাকে আল্লাহ হতে দূরে রাখে, তাই প্রতিমা।

১১) কিছু অনভিজ্ঞ লোক দরবেশী পোশাক পরিধান করে থাকে। মুখে থাকে ধর্মের বাণী, অন্তরে কুফরী।

১২) আল্লাহ নিকট লজ্জিত হওয়া মোমেন বান্দার কর্তব্য। কারণ, লজ্জা ঈমানেরই অংশ। বরং ঈমানের আত্মা।

১৩) মানুষের অজ্ঞতা অগ্নিস্বরুপ।

১৪) "এই সময়ও অতিবাহিত হয়ে যাবে।" অর্থাৎ বর্তমান।

১৫) নিদ্রা তিন প্রকার। ক) আল্লাহর জন্যে নিদ্রা খ) আল্লাহর সাথে নিদ্রা। এবং গ) আল্লাহ হইতে নিদ্রা। অর্থাৎ,
      ক) আল্লাহর জন্যে নিদ্রা : যে ব্যক্তি ইবাদত বন্দেগী করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পরে তখন, একটু বিশ্রাম নিয়ে পূর্নদ্যোমে আবার ইবাদত করার জন্যে যে নিদ্রায় যায়, তাকে আল্লাহর জন্যে নিদ্রা বলে।
      খ) আল্লাহর সাথে নিদ্রা: যে ব্যক্তি যিকির-ইবাদত করতে করতে ঘুমিয়ে পরে সে অাল্লাহর সাথে নিদ্রায় যায়।
      গ) আল্লাহ হইতে নিদ্রা: আল্লাহর এবাদত বন্দেগীতে হতে বিরত থেকে যে নিদ্রায় যায়। আর এটাই হচ্ছে আমাদের নিদ্রা। নফসের প্রতিপালন এবং শয়তানের নির্দেশ পালন করার জন্যে এই নিদ্রা।

১৬) চল্লিশ দিনের মধ্যে মোমেন বান্দার উপর কোন বিপদ আসা প্রয়োজন, কেননা মোমেনের বিপদের মধ্যে মঙ্গল নিহিত রয়েছে। সাধারণ লোকও যদি বিপদাপন্ন হয় তবে সেটা দ্বারা তার পাপমোচন হয়। আর যদি কোন সালেক বিপদাপন্ন হয়, তবে তাহার মর্যাদা ও অবস্থার উন্নতি হয়। (আলহামদুল্লিল্লাহ।)

১৭) একের সাথে অন্যের ভালোবাসা পরকালে কোন কাজেই আসবে না, যদি না সে ভালোবাসা আল্লাহর জন্যে না হয়। এছাড়া পার্থিব স্বার্থের বর্শীভূত ভালোবাসা শুধুমাত্র হারাম কাজেই লিপ্ত করে।

১৮) তাওরাত, যবুর, ইনজিল এবং অন্যান্য আসমানী কিতাবে যা কিছু আছে, তার সংক্ষিপ্তসারই আল্লাহপাক কোরআন শরীফে বর্ণনা করেছেন।

১৯) প্রেমের সাথে কাজ আদায় কর, দেখ প্রেমের কি কুদরত।

২০) হেকমতের মনজিল রহমত দ্বারা অতিক্রান্ত করা যায়। সর্বক্ষণ তাঁহারই দয়ার প্রয়োজন হয়।

২১) মহব্বতের সর্বপ্রথম স্তরই হলো বিপদে ধৈর্য্যধারণ করা। অর্থাৎ বন্ধুর পক্ষ থেকে যে বিপদই আসে তা প্রশান্ত চিত্তে বরণ করা।

২২) আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে অন্তরায় বা বাধাই হচ্ছে, পাপ ও অপবিত্রতা।

২৩) অসদগুণাবলী যখন পরিবর্তন হয় তখন তোমার সমস্ত সমস্যারও সমাধান হয়ে যায়।

২৪) যে ব্যক্তি তিনটি কাজ করবে তার পরিনাম অবশ্যই ভালো হবে। যেমন:
    ক) কাহারও উপর অত্যাচার না করা।
    খ) ইসলামের শুকরিয়া আদায় করা।
    গ) ঈমান চলিয়া যাওয়ার ভয় করা।
আর যে অত্যাচারী হয়, মুসলামান হওয়ার শুকরিয়া আদায় না করা এবং ঈমান চলে যাবার ভয় না করে, তবে মনে করবে তাহার পরিনতি খুবই ভয়ংকর।

তো এই ছিল সংক্ষিপ্তসারে তুলে ধরা "মাজলিসে গাযযালী"।

এতো মূল্যবান কথাগুলো, সময় নিয়ে যখন আমরা ভাবব, কিংবা অন্যেদের সাথে আলোচনা করব, তখন আরো বেশি বেশি এর গুঢ় নিহত তত্ত্বগুলো, শিক্ষাগুলো আমাদের ভিতর, আমাদের চেতনায় ধরা পরবে। আমরা আরোও বেশি আত্মস্থ করতে পারবো।
মহান আল্লাহপাক আমাদের সেই জ্ঞান ও হেকমত দান করুক, আমীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...