শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭

নি:স্বার্থ ভালোবাসা.....

কাল রাত থেকেই প্রেশারটা বড্ড জ্বালাতন করছে। আর মাইগ্রেনটাও কেমন যেন বাড়ছে। সিটিং রুমে পানির গ্লাস হাতে অরুনা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ছে, চেষ্টা করছে মাথার ভেতরে চলতে থাকা কড়া কড়া সেই কথাগুলোর তীব্র শব্দগুলোকে শান্ত করবার, তার সাথে বাড়তে বাড়তে থাকা নিজের বুকের ব্যাথা।

১৪ টা বছর!! দীর্ঘ একটা সময় নিজের জীবনের। অথচ মনে হচ্ছে এই সেদিনই তো লন্ডনে এলাম, কোলে তখন ২ বছরের আনন্দ, রায়ান। স্বপ্ন আর গায়ের জোর তখন কত তীব্র জীবন্ত, প্রাণবন্ত। তারপর?? তারপর বাস্তব কেমন যেন অস্বাভাবিক হতে লাগল, মনে হচ্ছিল তখন গোটা জীবনীশক্তিকে শুঁষে নিয়ে বাস্তব বলছে, "এখন জীবন চলবে আমার কথায়, তুমি তো হাতের পুতুল!"

মনে আছে, ১ দিনের মাথায় ঘর ছাড়তে হয়েছিল, তীব্র এক শীতের রাতে, কোথায় উঠব ঠিক নেই, কোন হোটেলে ওঠার সামর্থ্য তেমন নেই, "অর্থ", কাগজের নোটগুলো ভয়াবহ বাস্তবতার আরেক রুপ! ৩ বছরের রায়ান, নিশ্চিত মনে ঘুমুচ্ছে, আর পেটে তখন আরেকটি আনন্দ!! রিহানা। এক বন্ধু, হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে রক্ষা সেই যাত্রা, হয়ত ঠিক মারা যেতনা, কিন্তু সেই দিনের অপমান, অপদস্থতা প্রতিনিয়ত অরুনা কে নাড়া দিয়ে বলছিল, "তুমি কিসের আশাতে এসেছো, এখানে!!" সিটিং রুমে বসে মাথার উপর ছাঁদ, এই বাসাটা দেখছে আর ভাবছে দীর্ঘ ১০ টি বছর পর সম্ভব হয়েছে একটি মনের মতন বাসা পাওয়া!

দেশে যখন মাথার উপরে নিশ্চিত এক ছাঁদ ছিল, কখনোই ভাবে নি কত বড় আর্শীবাদ এটা, বাবা রাত করে ফেরেন আবার সেই ভোরে বেড়িয়ে যেতেন, কই একবারও তো তেমন করে ভাবে নি কখনো! বাবার জীবনে কি "স্বপ্ন", "আশা", "আকাঙ্খা" বলতে কিছু আছে!! বাবা কি এই শব্দগুলোর অর্থ আদৌও জানতেন! নাকি জেনেও ভুলে যেতে চেয়েছিলেন অরুনাদের দিকে তাকিয়ে?

আশরাফ কখনোও রাত দু'টো তে ফিরত কাজ থেকে, কখনোও বা আবার সেই ভোর ৪ টায় বেড়িয়ে যেত। "ভালো থেকো!" কথাটা বলতে বড্ড মুখে বাজতো! কোনরকম ভাবে বলত, "খাবারটা সময় মত খেয়ে নিও"। আশরাফও কি ভুলে যাচ্ছিল অরুনার বাবার মত, ভালো থাকার অর্থটা কি!! সপ্তাহে তখন যে মানুষ ৭ দিনই কাজ করে যাচ্ছে, তার কাছে তখন ভালো থাকাটাও বিলাসিতা।

অরুনা পানির খালি গ্লাসটিতে মনের অজান্তেই আরেকবার চুমুক দিতে গিয়ে ভাবল, কতটা অপমানই না করেছিল, নিজের বাবা মা কে! ছোট ছোট কতগুলো কথা! অথচ কতটা বিশাক্ত ছিল, ছিল কতটা ধাঁরালো। "কি দিতেই বা পেরেছো তোমারা বাবা-মা হয়ে? পাশের বাড়ির নীলার বাবা-মাকে দেখেছো! সন্তানদের জন্যে কত কিছু করেছে, আর আমি একটু ঘুরতে যাবো তাতেই এতো হিসাব, পিকনিকের জন্যে পয়সা দিতে পারছো না"!! মা তখন বলতে পারতেন না, অরুনার টিউটরের জন্যে পয়সা আলাদা করাটাই তখন কত কষ্টকর ছিল!!

যখন লন্ডন আসবে বলে ঠিক হলো, বাবা-মা চাইছিলেন না অরুনা আসুক এখানে, একমাত্র মেয়ে এতদূর যাবে!! অরুনার শেষ উত্তরে মনে আছে, বাবা-মা দুজনেই কেমন বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন, "আমার জীবন বাবা-মা হয়ে তেমন করে তো গড়ে দিতে পারো নি! যখন নিজে গড়তে যাচ্ছি তখন কেন স্বার্থপরের মতো বাধা দিচ্ছো"। বাবা-মার মুখে কোন উত্তর ছিল না। বাবা আইসিউতে ছিলেন, অরুনার পাসপোর্ট ভিসার জন্যে অফিসে তখন। বাবার মুখটাও দেখা হয়নি শেষবারের মতোন। মা সিড়ি থেকে পরে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান, আর অরুনার তখন সিটিজেনশিপ এর জন্যে অ্যাপলিকেশন প্রসেসিং চলছে। ভাবছিল, পাসপোর্ট হাতে পেয়েই তো... কিন্ত নাহ্, তা  আর হলো না! মা গত হবার ১ মাস পর দেশের বাড়িতে বসে ভাবছিল, কত কর্কশ, কত ধাঁরালো কথার আঘাতে বিদ্ধ করেছে বাবা-মাকে। দায়িত্ব নাকি তারা পালন করতে পারে নি! সে নিজে কি পারল, একমাত্র মেয়ে হয়ে!! মৃত্যুশয্যায় একজনের মুখেও এক ফোঁটা পানি দেবার সুযোগ পায়নি। সেদিন যে অপমান করে চলে গিয়েছিল, একবারও অরুনার মনে হয়নি পেছনটা ফিরে দেখি, মা কি তাকিয়ে ছিলেন আশা করে? অরুনা একবার পেছন ফিরবে!! কিংবা আবার ঘুরে এসে বলবে,
"যা বলেছি রাগের মাথায়, প্লিজ মনে কিছু নিও না"!!


অতীত প্রায়ই ফিরে ফিরে আসে, আজ তারই একমাত্র মেয়ে রিহানা যখন মুখের উপর কতগুলো ইংলিশ ঝেড়ে বলছিল, কিই বা দিতে পেরেছে তারা! তখন মার মতো অরুনাও বোবা হয়ে গিয়েছিল! "কিই দিতে পেরেছি আমরা"?? অরুনা তখন বলতে পারে নি, "একটা কাপড় সখ করে কেনা হয় নি, বাকি সখ তো দূরের কথা! আমাদের "ইনজয়মেন্ট"এর দিনগুলি জলাঞ্জলি দিয়েছি তোমাদের "ইনজয়মেন্টের" জন্যে! আমি এক হাতে তোমাদের পেলেছি, আর তোমাদের বাবা খেঁটেছে একটা কুকুরের মতোন"।

অরুনা কিছুই বলতে পারে নি। শুধুই বোবা দৃষ্টি মেলে রিহানার চলে যাওয়া দেখছিল, আর ভাবছিল নি:স্বার্থ ভালোবাসার, কি নির্মম পরিহাস!!

অরুনা বসে আছে, আর হয়তবা তার মায়ের মতনই মনের কোন এক ছোট্ট কোণায়, ছোট্ট আশা নিয়ে ভাবছে এই বুঝি রিহানা ফিরে এসে বলবে......"যা বলেছি রাগের মাথায়, প্লিজ মনে কিছু নিও না" 

নি:স্বার্থ ভালোবাসারা শুধু অপেক্ষাই করে যায়!

শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭

মহা ভাবনা..."A philosophy of Astronomy" Summary

আস্সালামু আলাইকুম,


আজ শেয়ার করব .... "মহান ভাবনা" এই বইটি থেকে। এমন কিছু কথা, যা সত্যিই কেমন যেন এক নতুন করে ভাবনাগুলোকে নাড়িয়ে দেয়। আশা করি ভালো লাগবে। 


PART : 1

এ বিশ্বে একমাত্র মানুষই তার স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবতে পারে, এর জন্যে প্রথমেই তার জানা উচিৎ তার ভাবনাশক্তি কতটুকু এবং তার ভাবনার "সত্ত্বা" সেই মহাস্রষ্টার পরিচয় কি?

মানুষ ছোট হোক বা বড় হোক, মহাজ্ঞানী হোক বা ক্ষুদ্র জ্ঞানী, সে নিজেকে যা ভাবে বা নিজেকে যতটুকু যোগ্য মনে করে সেকি আসলেই তাই? মানুষের জ্ঞানের দৌঁড় এবং যোগ্যতার সীমা জানতে হলে মহাবিশ্ব নিয়ে যদি একটু ঘাটাঘাটি করি তবে দেখা যাবে, মানুষ নামে আমরা যে এত দম্ভ দেখাই, আমাদের আসলে কোন অস্তিত্বই নেই।

সংক্ষিপ্তভাবে মহাবিশ্বের আলোচনা: পৃথিবীর পরিধি (বেড়) হচেছ ২৫০০০ মাইল। আর ব্যাস হচ্ছে ৮ হাজার মাইল। এবং ওজন ৬ এর পর ২১ টি শূন্য বসালে যা হয় তাই। আর সূর্য হচ্ছে পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুন বড়। ওজন পৃথিবীর চেয়ে তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার গুন বেশি। এই সূর্য তার ৯টি গ্রহ ও ৪৪ টি উপগ্রহ নিয়ে সৌরজগত গঠন করেছে। এই সৌরজগত আবার একটি মহাজগতের ভেতর আছে, যার নাম হচ্ছে ছায়াপথ (Milky way) এই ছায়াপথটিকে একটি এমন বিশ্ব বলা হয়, যা কল্পনা করতেও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে। আর এই রকমই মহাবিশ্ব আছে অসংখ্য, যার সংখ্যা বিজ্ঞানীরা এই অব্দি বের করতে পারেনি।

বিজ্ঞনীরা বলে কালো গহবর বলতে মহাশূন্যে একটি ভয়াবহ এবং অন্ধকারতম জায়গা আছে। এর আকর্ষন ক্ষমতা এত বেশী যে, কোন নক্ষত্র তার কাছ দিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা আলোও তার ছোবল থেকে রেহাই পায় না, সেই আলোকেও শুষে নেয়। যদি কোন নক্ষত্র তার আকর্ষন ব্যাসার্ধের মধ্যেও আসে তাহলে কালো গহবরের আকর্ষণে নক্ষত্রটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে এবং বিচ্ছিন্ন অংশগুলোকে কালো গহবর নিমিষেই গ্রাস করে ফেলে।

বিজ্ঞনীরা আরোও একটি আশ্চর্য ঘটনার কথা বলছে যা মহাবিশ্বে মহাসৃষ্টির আদি থেকে অদ্যাবধি চলছে। সেটা হচ্ছে, মহাবিশ্বের কোটি কোটি নীহারিকা বিশ্ব, যার প্রত্যেকটার ভেতর প্রায় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি নক্ষত্র আছে। সৃষ্টির পর থেকেই এর মহাপ্রচন্ড গতিতে এক অজানা লক্ষ্যের দিকে বিরামহীনভাবে ছুটছে। এরা একদিকেই শুধু ছুটছে আর কোন দিন ফিরে আসে নি।

এই মহাবিশ্বের এবং মহাশূন্যকাশের বিশালতার তুলনায় মানুষ কতটুকু!! স্রষ্টা বলেন, "লিল্লাহি মাফিছ ছামাওয়াতি ওমা ফিল আরদ" (আল-কুরআন)-- ("আসমান সমূহে যা কিছু আছে এবং যা কিছু আছে পৃথিবীতে সবই আমার।") 
"ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আ'লীউল আজীম"- (এই মহাসৃষ্টি হেফাজত করতে আমার মোটেও বেগ পেতে হয় না। এবং সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তিনি উচ্চ, সুমহান এবং সবার উপরে বড় ও সর্বশক্তিমান।)


এখন শুধু আমাদের এই সূর্যকে নিয়েই ভাবি। সূর্য যদি ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরত্ব কমিয়ে ৪ কোটি মাইল হতো তবে, পৃথিবী বলতে কোন অস্তিত্বই থাকত না।
আবার সূর্য যদি তার বর্তমান অবস্থান থেকে একটু অধিক দূরত্বে অবস্থান করত, তবে পৃ্থিবীতে এমন শীতলতা সৃষ্টি হতো যে মানুষ তো দূরের কথা কোন প্রাণীরই অস্তিত্ব কল্পনা করা যেত না। আল্লাহ পাক সূর্যকে মাটির পৃথিবীর জীবনীশক্তির প্রধান শক্তি হিসাবে সৃষ্টি করেছে।

সূর্যের ভেতরে বিপুল পরিমান অনু বিস্ফোরণ হওয়ার কারণে, সহজ কথায় সূর্যের যে ক্ষতি হয়, তার পরিমান প্রতি সেকেন্ডে ৪০ লক্ষ টন অর্থাৎ সূর্যের আলো এবং তাপ (মনে করি একটি জলন্ত চুলো) জ্বালিয়ে রাখতে প্রতি সেকেন্ডে ৪০ লক্ষ টন লাকড়ি সূর্যের ভেতর ঠেলতে হয়। এই ভাবে দিনরাত ২৪ ঘন্টায়, ৩৫ হাজার কোটি টন লাকড়ি সূর্যের মধ্যে দিলেই একমাত্র তার আগুন ঠিক থাকবে, এবং আমাদের সকলের এবং গাছপালার জীবনও বেঁচে থাকবে। মহান স্রষ্টা প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ টন লাকড়ি ঠেলে সূর্যকে জ্বালিয়ে  আমাদের জ্ঞানের অজান্তে অলক্ষ্যভাবেই পৃথিবীর সকল জীবনীশক্তি বাঁচিয়ে রেখেছেন।  এই যে ২৪ ঘন্টায়, সেকেন্ডে সেকেন্ডে এত কোটি কোটি টন লাকড়ি ঠেলছেন, কখনো কি প্রতিদান চেয়েছেন?? আমরা "সুবহানাল্লাহ", "আলহামদুল্লিল্লাহ", আল্লাহু আকবার" কতবার বলি??

এই মহাবিশ্বের এবং মহাশূন্যকাশের বিশালতায় মানুষ কতটুকু? এই মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুন সূর্যের কোন অস্তিত্বই নাই। সেই সূর্যের কাছে পৃথিবী কতটুকু? সেই পৃথিবীর আবার কতটি মহাদেশ! সেই মহাদেশের মধ্যে আবার কতগুলো দেশ চীন, জাপান, রাশিয়া, ভারত। সেই ভারতবর্ষেরই আরো একটি ক্ষুদ্র অংশ বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের কতগুলো বিভাগ, সেই বিভাগগুলোর মধ্যে আমরা আছি, তাও কোন একটি ছোট ছোট শহরের, ছোট কোন অংশের, কোন একটি ঘরের ভেতর, কোন একটি কামরা তে,,,, এই ক্ষুদ্র আমরা "মানুষ"!! আর সেই মহান সৃষ্টিকর্তা বলেন, আমি তোমার ঘাড়ের শিরার চেয়েও অতি নিকটে আছি!!

আল্লাহপাক বলেন, "নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি আর দিবারাত্রির বৈপরিত্যের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে অকাট্য নিদর্শনসমূহ।"- আল-কুরআন।

মানুষের ভেতর যে অাত্মা বা রুহ আছে তাকে জাগাতে হয়, এই রুহের অসীম শক্তি। একে জাগাতে পারলে তার শ্রবণ, দর্শন, অনুধাবন শক্তির উন্নতি হয়, তখন সে সেই মহান স্রষ্টা আল্লাহু রাব্বুল আলামিন কে উপলব্ধি করতে পারে এবং আল্লাহ বলে যে একজন মহান স্রষ্টা আছেন, তা অর্ন্তদৃষ্টি দ্বারা বিশ্বাস করতে পারে....আল্লাহ পাক্ বলেন, "ফাজকুরুনী আজকুরুকুম"- অর্থাৎ "তুমি আমাকে ডাক, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব।"

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...