মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০২৩

অল্প কিছু আলো-দেবেশ রায়

#পাঠপ্রতিক্রিয়া

অল্প কিছু আলো-দেবেশ রায়
"আমাদের ভালো থাকা নিয়ে বলা কথা"
------------
দেশভাগোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যে কিংবদন্তিতূল্য একজন, পশ্চিম বঙ্গের দেবেশ রায়।
এই প্রবন্ধ গ্রন্থে দেবেশ রায় কথা পেড়েছেন অনেক বিষয়েই। আমাদের ভালো থাকা নিয়ে, কখনওবা খুব মশকরার ছলে 'আমরা যে আসলে ভালো নেই' বা পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চে ভালো থাকার অভিনয় সং সেজে করে যাই, তারই চিত্রায়ণ করেছেন।


৬০ এর দশকে, "কী বলবো" আর "কীভাবে বলবো" নিয়ে এক তর্ক উঠে। দেবেশ রায়, "কীভাবে বলবো" এই শর্ত মাথায় নিয়েই হয়ত স্টাইলে এতো ভিন্নতা নিয়ে খেলেছেন। শব্দ, বাক্যগঠনে ভাষাকে যে ভারে ভারী করেছেন, আমার কতক জায়গায় দু'তিন বার পড়তে হয়েছে এর গুরার্থ উদ্ধার করতে।
তারই সমসাময়িক এই বাংলার কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক তাই বলেছেন....
"ভাবনার চিত্রণ, অনুভবের চিত্রণ, উপলব্ধির চিত্রণ, বোধের চিত্রণ! এত দায় কি ভাষা নিতে পারবে? ভাষাকে দিয়েই তিনি এই অসাধ্য সাধন করিয়ে নেবার চেষ্টার করেন।.....

.....লেখকজীবনে দেবেশ যতই এগোচ্ছেন ততই তাঁর লেখা ঘোর জটিল হয়ে উঠছে। সরল বাক্যও তাঁর সহজতার সীমানা পার হয়ে প্রায় অবোধ্য একটা জটিলতার দিকে চলে যাচ্ছে। কখনো কখনো মনে হয় দেবেশ রায়ের একে একটি বাক্য যা ধরতে পারে, তার অতিরিক্ত ভার নিয়ে অনেক সময় টলমল করতে থাকে। আমার নিজের ধারণা, এটাকেই হয়তো আয়েশি পাঠক ভারাক্লিষ্টতা বলে মনে করে।"

"সামান্য অমান্যতা"য় তার হাসান ভাইয়ের উদ্দেশ্যে চিঠিও ছিল। "নামায আমার আদায় হইল না" এ ব্যক্ত ছিল "সেলিম আল দীন"কে হারাবার বেদনা।
"আধুনিকতা, আমাদের আধুনিকতা ও অন্য আধুনিকতা" প্রবন্ধে পোষ্টমর্ডানিজমকে নিয়ে ছিল প্রশ্ন।

... "আধুনিকতার পরের যে নতুন আধুনিকতার কথা আমি ভাবছি- তা কোন খোঁড়া তত্ত্ব নয়, তা কেন্দ্রিকতাকে অস্বীকার করা এক পরিধিকে সত্য করে তোলার সক্রিয়তা। কেন্দ্রহীন পরিধি- এমন কল্পনার মধ্যে স্ববিরোধীতা আছে। সেই স্ববিরোধী দ্বন্দ্বকেই আমি খুঁজছি। আমাদের এই এখনকার, এই বর্তমানের দ্বান্দ্বিকতা।"

সুখ পাঠ্য।

#সাহিত্যানুশীলন

**************
বই: অল্প কিছু আলো
লেখক: দেবেশ রায়
প্রকাশনা: অভিযান পাবলিশার্স
**************


বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

নরকে এক ঋতু- র‍্যাঁবো

নরকে এক ঋতু (Une saison enfer)

-অনুবাদ: লোকনাথ ভট্টাচার্য


৩৭ বছর জীবনে কবিত্ত্বের সময় মাত্র পাঁচ বছর। আর তাতেই দাপটে প্রশ্ন করে গিয়েছেন, প্রশ্ন রেখে গিয়েছেন গভীর জীবনবোধের সব প্রহেলিকার।

উনিশ শতকের কবিদের মধ্যে যারা এই একবিংশতেও সাড়া জাগান দোর্দন্ডপ্রতাপে, তাদেরই একজন এই ফরাসী কবি "জাঁ আর্তুর র‍্যাঁবো"। "নরকে এক ঋতু" একমাত্র কবিতার বই, সাতটি অধ্যায় নিয়ে।



সাহিত্যের এই বিচিত্র শাখা "কবিতা"য় আমার অক্ষরজ্ঞান খুবই নগন্য। শশুড়বাবার পাঠাগারে ঘুরপাকের ফলেই হয়তবা আগ্রহ জমতে শুরু হচ্ছে।

র‍্যাঁবোর স্বল্প পরিসরের জীবনে মাত্র ১৪ বছরে কবিতার শুরু যার সমাপ্তি ২০ গিয়ে। আমার আকর্ষনের হেতু হয়তবা এটাই, যে সেই অল্প বয়সেই কলমের ধারে উঠে এসেছে বিদ্রোহ, বিপ্লব, সামাজিক সংস্কৃতি, আচারের উপর ছুঁড়ে দেয়া প্রশ্ন, অথচ লেখনীতে পরিপক্কতা। কোন উদ্ধত নাস্তিকের প্রশ্ন নয় বরং এ যেন নিজেকেই বার বার দহনে জালিয়ে ফিনিক্স পাখি হবার প্রয়াস।
"পবিত্রতা!
জাগরণের এই ক্ষণটিই আমাকে দেখালো সেই পবিত্রতার আলো- আত্মাই মানুষকে টানে ঈশ্বরের পথে!..
কী মর্মভেদী দুর্ভাগ্য!"

অবশেষে....
"এই মনোহর মজুরগণের তরে,
ব্যাবিলনিয়ার অধীশ্বরের দাস হয়ে থাকে যারা।

ভেনাস, তোমার অনুরাগীদের ত্যাগ করো ক্ষণতরে।
যাদের হৃদয় চেনে নি কিছুই মুকুট ছাড়া।"



#সাহিত্যানুশীলন


*****************
বই: নরকে এক ঋতু

লেখক: র‍্যাঁবো (Jha Artur Rabo)

অনুবাদক: লোকনাথ ভট্টাচার্য

প্রকাশক: সঞ্জয় সামন্ত, এবং মুশায়েরা (কলকাতা)
****************

বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩

আল্লামা ইকবালের মেটাফিজিকস


ইকবালের আধ্যাত্মবাদ

প্রতীচ্য ও প্রাচ্য, প্রাচীন ও সাম্প্রতিক, অতীন্দ্রিয় ও ইন্দ্রিয়বাদী জ্ঞানের সম্মিলনস্থল হিসেবে আল্লামা ইকবালকে পাঠ করার যে প্রয়োজনীয়তা আমাদের জ্ঞানতত্ত্বে তীব্র হচ্ছে, এ বই সে প্রয়োজনীয়তার প্রতি একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ।

লেখক ইকবালের দর্শনের অধিবিদ্যা নিয়ে যে আলোচনা এবং উপস্থাপনা তাই নিয়েই ঘেঁটেছেন, যা মূলত তার "Metaphysics in Persia" & "Reconstruction of religious thoughts in Islam" বইকেই ভিত্তি বানিয়ে উপস্থাপন করা। 

ইকবাল বার্গস, নিটশে, ম্যাকটাগার্টকে অধ্যয়ন করে মূলত আত্মার প্রকৃতি ও ইচ্ছাশক্তি মূল ধরে অনুপ্রাণিত হয়েছে চিন্তার ক্ষেত্রে কিন্তু পরিপূর্ণ তৃপ্ত হতে পারেন নি। ইকবাল স্রষ্টার জ্ঞান, আত্মার জ্ঞান ও অমরত্বের জ্ঞানকে দৃঢ়তার সাথে সামনে নিয়ে এসেছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দর্শনের সাথে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে। 

ব্যক্তিগত মতামত, অনুবাদের সময় স্বাভাবিকভাবেই মূল কিছুটা ব্যহত হয়, তা মাথায় রেখেই হয়ত শব্দচয়ন, উপস্থাপনে আরও কিছুটা পারদর্শিতা দেখানো যেত। যেহেতু লেখক এতে আল্লামা ইকবাল ও অন্যান্য দার্শনিকদের তুলনামূলক আলোচনা সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন, এবং বইয়ের শেষে পাদটীকায় ইকবাল ও অন্যান্য বইয়ের তালিকা সংযুক্ত করে দিয়েছেন, আশা করা যায় অনুসন্ধিৎসু পাঠক সেখান থেকে গভীর জ্ঞান আহরনের রসদ পাবে। 

আমার স্বল্প জ্ঞানের দ্বারা এই কথার মর্মকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি.....

"চিন্তার দ্বারা অর্জিত সকল জ্ঞানই আপেক্ষিক। আবার এটা কেবল আভাসও বটে। কিন্তু স্বজ্ঞার দ্বারা হৃদয়ে উদিত জ্ঞান দিয়ে আমরা পরম পর্যন্ত পৌঁছতে পারি।"


#সাহিত্যানুশীলন

***********************************
বই: আল্লামা ইকবালের মেটাফিজিকস
লেখক: ড. ইশরাত হাসান ইনভার
অনুবাদ: মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি
প্রকাশক: আদর্শ (২০২২)
Goodreads: 4/5 
***********************************

মসলার যুদ্ধ....

#সাহিত্যানুশীলন

#পাঠপ্রতিক্রিয়া

মসলার লোভে ইউরোপীয় শক্তির অভ্যূত্থান। এরপর উপনিবেশ স্থাপনের রক্তাক্ত নীল নকশা।
"মসলার যুদ্ধ", সত্যেন সেন এর লেখা ক্ষুদ্র পরিসরের এক ইতিহাস, যার হাত ধরে উপনিবেশবাদ, ক্রুসেডের বিষ, দেশীয় শক্তি, স্বাধীনতা সংগ্রাম এর বীজ বোঝা যায়।

কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরলাম....

"আন্তর্জাতিক আইন? সে তো ইউরোপের জাতিগুলোর নিজেদের ভেতরকার ব্যাপার। লন্ডন বা প্যারিসে যা বর্বরতা বলে আখ্যা পায়, পিকিং এর বুকে তাকেই সভ্যজনোচিত আচার বলে ব্যাখা করা যেতে পারে।"
--------------
"গোয়া দখল করবার পর অ্যালবুকার্ক পর্তুগাল-রাজ ডোম ম্যানুয়েলের কাছে এ সম্পর্কে যে সংবাদ পাঠিয়েছিলেন, তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি লিখেছিলেন...
'গোয়ায় যে সমস্ত আরবীয় ছিল, আমরা তাদের সবাইকে হত্যা করেছি, আমাদের হাতে কেউ রেহাই পায়নি। আমরা তাদের মসজিদের মধ্যে আটকে রেখে, শেষে সেই মসজিদ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি।'............"

--------------
"মানবতাবিরোধী অতি জঘন্য কাজের সাথে যদি কোনোমতে ধর্মকে সংশ্লিষ্ট করে রাখা যায়, তবে তার সব দোষ কেটে যায়। শুধু দোষ কেটে যাওয়াই নয়, সময় সময় তা অতি মহৎ ও পবিত্র কাজ বলেও কীর্তিত হয়ে থাকে।"

---------------
"এই সমাজের এই তো রীতি। যারা উৎপাদন করে, অভার ও অনশন তাদেরই প্রাপ্য। আর তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গেলে দমন-নীতির হিংস্র আক্রমণ তাদের উপরেই নেমে আসে। যুগ যুগ ধরে এই রীতিই চলে আসছে। আজও কি চলছে না?"
----------------
"এই মসলার যুদ্ধ রক্তাক্ত, হিংস্র, বীভৎস! আবার এই মসলার যুদ্ধ প্রাচ্যের পরিবর্তনহীন পশ্চাৎমুখী সমাজের সামনে বৃহৎ বিশ্বের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বদ্ধ জীবনের উপরে দুরন্ত ঝটিকার আলোঢ়ন জাগিয়েছে, প্রচন্ড অত্যাচারের শক্তি স্বপ্ন-দেখা ঘুমন্ত মানুষকে চুলের ঝুঁটি ধরে টেনে তুলেছে!
ওটাও সত্য! এটাও সত্য! কোনটাই মিথ্যা নয়।"
________________________________
বই: মসলার যুদ্ধ
লেখক: সত্যেন সেন
________________________________
#bookreview #bengaliliterature #বাংলাসাহিত্য #সত্যেনসেন #মসলারযুদ্ধ #history #indianhistory #colonialism

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...