বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১

এক অপ্রেমিকের জন্য -- তসলিমা নাসরিন

এক অপ্রেমিকের জন্য-- তসলিমা নাসরিন


এই শহরেই তুমি বাস করবে, 
কাজে অকাজে দৌড়োবে এদিক ওদিক কোথাও আড্ডা দেবে অবসরে, 
মদ খাবে, তুমুল হৈ চৈ করবে, রাত ঘুমিয়ে যাবে, তুমি ঘুমোবে না।

ফাঁক পেলে কোনও কোনও সন্ধেয় এ বাড়ি ও বাড়ি খেতে যাবে,
খেলতে যাবে,
কে জানে হয়তো খুলতেই যাবে আলগোছে কারও শাড়ি
আমার আঙিনা পেরিয়েই কোনও বাড়িতেই হয়তো।

এ পাড়াতেই হয়তো দু’বেলা হাঁটাহাঁটি করবে,
হাতের নাগালেই থাকবে, হয়তো কখনও জানিয়েও দেবে আমাকে,
যে, কাছেই আছো,
কুঁকড়ে যেতে থাকবো, কুচি কুচি করে নিজেকে কাটতে থাকবো
দেখা না হওয়ার যণ্ত্রণায়,
তবু বলবো না, এসো।
বলবো না, তোমাকে সুযোগ দেব না বলার যে তোমার সময় নেই, বা ভীষণ ব্যস্ত তুমি ইদানিং
তোমার অপ্রেম থেকে নিজেকে বাঁচাবো আমি।

তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে না। 
বছর পেরোবে, তোমার সঙ্গে দেখা হবে না আমার, 
দেখা না হতে না হতে ভুলতে থাকবো 
তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াটা ঠিক কেমন ছিল 

কী রঙের সার্ট পরতে তুমি, 
হাসলে তোমাকে ঠিক কেমন দেখাতো, 
কথা বলার সময় নখ খুঁটতে, চোখের দিকে নাকি অন্য কোথাও তাকাতে, 
পা নাড়তে, ঘন ঘন চেয়ার ছেড়ে উঠতে, জল খেতে কিনা, ভুলতে থাকবো। 
দেখা না হতে না হতে ভুলতে থাকবো তুমি ঠিক দেখতে কেমন ছিলে, 
অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যাবে, 
তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। 
এক শহরেই, অথচ দেখা হবে না। 
পথ ভুলেও কেউ কারও পথের দিকে হাঁটবো না, 
আমাদের অসুখ বিসুখ হবে, দেখা হবে না। 
কোনও রাস্তার মোড়ে কিংবা পেট্রোল পাম্পে কিংবা মাছের দোকানে, বইমেলায়, রেস্তোরাঁয়, কোথাও দেখা হবে না।

আরও অনেকগুলো বছর পর, ভেবে রেখেছি, 
যেদিন হুড়মুড় করে এক ঝাঁক আলো নিয়ে সন্ধে ঢুকতে থাকবে 
আমার নির্জন ঘরে, 
যেদিন বারান্দায় দাঁড়ালে আমার আঁচল উড়িয়ে নিতে থাকবে বুনো বৈশাখি 
এক আকাশ চাঁদের সঙ্গে কথা বলবো যে রাতে সারারাত-- 
তোমাকে মনে মনে বলবোই সেদিন, 
কী এমন হয় দেখা না হলে, 
দেখা না হলে মনে হতো বুঝি বেঁচে থাকা যায় না, 
কে বলেছে যায় না, দেখ, দিব্যি যায়! 
তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি কয়েক হাজার বছর, 
তাই বলে কি আর বেঁচে ছিলাম না? দিব্যি ছিলাম!

ভেবেছি বলবো, 
তুমি তো আসলে একটা কিছুই-না ধরনের কিছু, 
আমার আকাংখা দিয়ে এঁকেছিলাম তোমাকে, 
আমার আকাংখা দিয়ে তোমাকে প্রেমিক করেছিলাম, 
আমার আকাংখা দিয়ে তোমাকে অপ্রেমিকও করেছি 
তোমাকে না দেখে লক্ষ বছরও বেঁচে থাকতে পারি! 
অপ্রেমিককে না ছুঁয়ে, অনন্তকাল।

এক ফোঁটা চোখের জল বর্ষার জলের মতো ঝরে ধুয়ে দিতে পারে 
এতকালের আঁকা সবগুলো ছবি, 
তোমার নাম ধাম দ্রুত মুছে দিতে পারে চোখের জল। 
তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।

আমাকে একা বলে ভেবো না কখনো, তোমার অপ্রেম আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে।

বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১

"হার না মানা অন্ধকার"... তবুও বিশ্বাস করি আলোর জয়


লেখকের মুন্সিয়ানায় অভিভূত আমি। এটা লেখকের লেখা প্রথম পড়া বই। ক'টা দিন ধরেই হরর থ্রিলার ঘরানার কিছু খুঁজছিলাম, চমৎকার এক কথায়। ঐ যে বলেছিলাম, লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম হানা দেবার জন্যে, এটাকে সেখানেই পাই। 

"হার না মানা অন্ধকার"... ১ম পর্ব। ঈশ্বর বিশ্বাস করলে, অপশক্তিকেও স্বীকার করতে হয়। কাহিনী চলছে, দূর্দান্ত এবং মুন্সিয়ানা বলেছি এই জন্যে, এক কাহিনী থেকে লেখক নিয়ে গিয়েছে আরেক কাহিনীতে, এক জগতের কাহিনীর মধ্যে আরেক জগত চলে আসছে, মনে হচ্ছিল মূল কাহিনী বুঝি এটাই। একটুও বিরক্তি আসছিল না, বরং আগ্রহ বেড়েই যাচ্ছে, উত্তেজনায় ভাটা পরেনি, প্রত্যেকটা চরিত্রতের অঙ্কন যথাযথভাবে।

শেষের বেলার ঘটনার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না, পরে মনে হলো, তা তো হবেই, কারণ পরের পর্ব আসছে। ভাগ্যিস, লাইব্রেরীতে ২য় পর্বটাও ছিল, না হলে মাথা গরমটা থামাতে পারতাম না। দূরদেশে এখন এই ২য় পর্ব পাবোটাই বা কোথায়! আর অপেক্ষা বড্ড খারাপ জিনিষ।


"সত্য-কলাম" এর প্রকাশক রফিক শিকদার এর লিখিত উপাখ্যানগুলোতে হারিয়ে যাবেন, সময় ভালো কাটবে। ১০৯ পৃষ্ঠার, পরিসর কম, কিন্তু চমৎকার। ২য় পর্বটাও পড়ার আগ্রহ জাগবে, যেমন আমি এখন শুরু করব। 

********************

বই: হার না মানা অন্ধকার

লেখক: বাপ্পী খান

প্রকাশক: বাতিঘর, ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ইং









মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১

"আলাদিন" এর আশায়.......

"আলাদিন" এর আশায়....... 

মহামারীর ধাক্কায় বন্দী শহর জীবন, আবারও স্বাভাবিকতার আশায় বাহিরমুখো। খুলে গিয়েছে, কম্যুউনিটির পাবলিক পাঠাগারগুলোও। মহামারীর ছোবলে বন্দী জীবনগুলো শুরুর ঘন্টা বাজার দিনগুলোতে, ঘরে এনে রেখেছিলাম প্রায় ৩০/৩৫ বই। নিজের লাইব্রেরী কার্ড, আবার ডাক্তার ম্যাডামের কার্ড নিয়েও।

সেগুলো আবার যথাস্থানে ফেরত এবং বগলদাবায় নতুন কিছু নেব বলে ভাবছি, চোখে পরল, "আলাদিন".... এই শব্দটির সাথে আমাদের ৯০' এর শিশুবেলাগুলো একদম মাখোমাখোভাবে জড়িত। একটু স্মৃতিকাতরতার সাথেই হাতে নেই। লেখকের নামটাও বড় চমৎকার। "#আহনাফ_তাহমিদ"। ভাল লাগল। বইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাঠ অংশটাও মজার লাগল। পড়া শেষে, মনে হলো ইসসসস.... কবে বের হবে এর ২য় পর্ব। 

খোঁজ করে দেখলাম, এখনোও বের হয় নি। 


একটা অ্যারাবিক আরবান ফ্যান্টাসির জগৎ। ১ম পর্বে চমৎকার করে, কাহিনীকে একটা ভীত দেয়া হয়েছে। শুরুতেই মনে হবে, কি রে ভাই হচ্ছেটা কি! কিন্তু পরে মনে হচ্ছে, আরেব্বাস হলোটা কি!!! উত্তেজনা ছিল। ইস্কান্দর মির্জা, জিন্নাতুল হুদা, আলাদিন, জেসমিন, সাইফার বইয়ের চরিত্রগুলোর নাম। আমি সত্যিই ২য় পর্বের আশায় খুব উৎসাহ নিয়েই অপেক্ষা করছি, কারণ যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে এই পর্ব, সেখান থেকে এই কাহিনীকে একটা জবরদস্ত রুপ দেয়া সম্ভব। 

লেখকের জন্যে অনেক শুভ কামনা।

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...