রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১

তোমার জন্য - মোঃ ওয়ালিউল ইসলাম সাকিব

তোমার জন্য- মোঃ ওয়ালিউল ইসলাম সাকিব

তোমার জন্য এই পৃথিবী থেমে থাকবেনা,
তোমার জন্য পৃথিবীর কেউ অপেক্ষা করবে না,
তোমার জন্য কয়েক সেকেন্ড সবকিছু থেমে যাবে না।
সূর্য পূর্ব আকাশেই উঠবে,
......

পশ্চিম আকাশেই অস্ত যাবে।
তোমার জন্য এক মূহুর্ত ও থামবে না কোনোকিছু,
তোমার জন্য কারও জীবনের পথচলা থেমে থাকবে না,
তোমার অপেক্ষায় কেউ বসে থাকবে না।
একাকিত্বের কারাগারে তোমার জীবন দুঃসহ হয়ে উঠবে,

ঠিক সেই মূহুর্তে....
কেউ যদি তোমার অপেক্ষা করে,
তবে সেটা আমি।



কারও জীবনের পথচলা থামুক আর নাই থামুক,
আমার জীবনের পথচলা থেমে যাবে।
কেউ অপেক্ষা করুক আর নাই করুক,
আমি তোমার অপেক্ষা করব।
কেউ তোমার দিকে চেয়ে থাকুক আর নাই থাকুক,
আমি তোমার দিকে চেয়ে থাকব।
কেউ তোমার অনুভূতি বুঝুক আর নাই বুঝুক,
আমি তোমার অনুভূতি ঠিকই বুঝব।
তোমার চোখের ভাষা আর কেউ না বুঝলেও,
আমি ঠিকই তোমার চোখের ভাষা পড়ে নেব।



তোমার প্রতিক্ষায় আমি অনন্ত কাল কাটিয়ে দিব,
তোমার পথচেয়ে বসে থাকব সারাজীবন।
তোমার দেখা পাওয়ার আশায় এরকম শত শত জীবন,
আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।



পৃথিবীর সবকিছু চলতে থাকবে,
শুধু তোমার জন্য থমকে থাকব একমাত্র আমি,
থমকে থাকবে আমার জীবন।
তোমার জন্য আমি সব করতে পারি,
শুধু জীবন দিয়ে দেব না।

যদি জীবন দিয়ে দেই,
তাহলে তোমার জন্য আর কেউ অপেক্ষা করবে না,
তোমার জন্য পথচেয়ে থাকার আর কেউ থাকবে না,
তাই জীবন দেব না,


আমার জীবনের সব অর্জন তোমাকে উৎসর্গ করে দেব,
আমার অনুভূতির প্রতিটি বিন্দু দিয়ে,
আমি তোমাকে ভালোবাসব।


একটা পৃথিবীতে যত ভালোবাসা আছে,!
তার চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসা আমি তোমাকে দেব।
আমার সবকিছু শুধু তোমার জন্য;


এই কথাগুলো তোমাকে বলতে চেয়েছি বহুবার,
কিন্তু বলতে পারিনি,.....বলতে পারিনি,..
লিখে রেখেছি খাতায়।


আমার এই লেখা হয়ত তোমার হাতে পৌছবে,
হয়ত পৌছবে না।
তুমি হয়তবা বুঝতে পেরেছ,আমি তোমাকে ভালোবাসি,
হয়তোবা কখনোই........ বোঝনি আমার অনুভূতি।


হয়তোবা একদিন তোমার মস্তিষ্ক থেকে,
আমার স্মৃতি মুছে যাবে।
কিন্তু আমার মস্তিষ্ক থেকে,
কখনোই তোমার স্মৃতি মুছে যাবে না।


পৃথিবীর সব স্মৃতি মুছে গেলেও,
তোমার স্মৃতি কখনোই মুছে যাবে না।


তুমি আমাকে ভুলে গেলে....... যেতেও পার,
কিন্তু............ আমি তোমাকে কখনোই ভুলবনা।
আমি এই আশায় তোমার প্রতিক্ষায় থাকব,...যদি তুমি আস,
তুমি না আসলেও তোমার প্রতিক্ষায় সারাজীবন কাটিয়ে দেব।


অমলকান্তি - নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী---"অন্ধকার বারান্দা"

অমলকান্তি আমার বন্ধু,

ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।
রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না,
শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে
এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে,
দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।


আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!
ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,
জাম আর জামরুলের পাতায়
যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।


আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে।
মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে;
চা খায়, এটা-ওটা গল্প করে, তারপর বলে, “উঠি তাহলে।”
আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।


আমাদের মধ্যে যে এখন মাষ্টারি করে,
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত,
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল,
উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না।
অথচ, সকলেরই ইচ্ছেপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সেই অমলকান্তি–রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে
ভাবতে-ভাবতে
যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।

শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১

দারিদ্র্য রেখা - তারাপদ রায়

দারিদ্র্য রেখা - তারাপদ রায়


আমি নিতান্ত গরীব ছিলাম, খুবই গরীব।
আমার ক্ষুধার অন্ন ছিল না, আমার লজ্জা নিবারণের কাপড় ছিল না,
আমার মাথার উপরে আচ্ছাদন ছিল না।
অসীম দয়ার শরীর আপনার, আপনি এসে আমাকে বললেন,
না, গরীব কথাটা খুব খারাপ,
ওতে মানুষের মর্যাদা হানি হয়, তুমি আসলে দরিদ্র।

অপরিসীম দারিদ্র্যের মধ্যে আমার কষ্টের দিন,
আমার কষ্টের দিন, দিনের পর দিন আর শেষ হয় না,
আমি আরো জীর্ণ আরো ক্লিষ্ট হয়ে গেলাম।

হঠাৎ আপনি আবার এলেন, এসে বললেন,
দ্যাখো, বিবেচনা করে দেখলাম, দরিদ্র শব্দটিও ভালো নয়,
তুমি হলে নিঃস্ব।

দীর্ঘ নিঃস্বতায় আমার দিন রাত্রি, গনগনে গরমে ধুঁকতে ধুঁকতে,
শীতের রাতের ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে,
বর্ষার জলে ভিজতে ভিজতে,
আমি নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে গেলাম।
আপনার কিন্তু ক্লান্তি নেই, আপনি আবার এলেন,
আপনি বললেন, তোমার নিঃস্বতার কোনো মানে হয় না,
তুমি নিঃস্ব হবে কেন,
তোমাকে চিরকাল শুধু বঞ্চনা করা হয়েছে,
তুমি বঞ্চিত, তুমি চিরবঞ্চিত।

আমার বঞ্চনার অবসান নেই,
বছরের পর বছর আধপেটা খেয়ে, উদোম আকাশের নিচে রাস্তায় শুয়ে,
কঙ্কালসার আমার বেঁচে থাকা।
কিন্তু আপনি আমাকে ভোলেননি,
এবার আপনার মুষ্টিবদ্ধ হাত, আপনি এসে উদাত্ত কণ্ঠে ডাক দিলেন,
জাগো, জাগো সর্বহারা।
তখন আর আমার জাগবার ক্ষমতা নেই,
ক্ষুধায় অনাহারে আমি শেষ হয়ে এসেছি,
আমার বুকের পাঁজর হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে,
আপনার উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে আমি তাল মেলাতে পারছি না।

ইতিমধ্যে আরো বহুদিন গিয়েছে,
আপনি এখন আরো বুদ্ধিমান, আরো চৌকস হয়েছেন।
এবার আপনি একটি ব্ল্যাকবোর্ড নিয়ে এসেছেন,
সেখানে চকখড়ি দিয়ে যত্ন করে একটা ঝকঝকে লম্বা লাইন টেনে দিয়েছেন।
এবার বড় পরিশ্রম হয়েছে আপনার,
কপালের ঘাম মুছে আমাকে বলেছেন,
এই যে রেখা দেখছো, এর নিচে, অনেক নিচে তুমি রয়েছো।
চমৎকার!
আপনাকে ধন্যবাদ, বহু ধন্যবাদ!

আমার গরীবপনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার দারিদ্র্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার নিঃস্বতার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার বঞ্চনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার সর্বহারাত্বের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আর সবশেষে ওই ঝকঝকে লম্বা রেখাটি,
ওই উজ্জ্বল উপহারটির জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

কিন্তু, ক্রমশ, আমার ক্ষুধার অন্ন এখন আরো কমে গেছে,
আমার লজ্জা নিবারণের কাপড় এখন আরো ছিঁড়ে গেছে,
আমার মাথার ওপরের আচ্ছাদন আরো সরে গেছে।
কিন্তু ধন্যবাদ,
হে প্রগাঢ় হিতৈষী,
আপনাকে বহু ধন্যবাদ!

সাহর- শাহরিয়ার খান শিহাব

#পাঠপ্রতিক্রিয়া: "বড় হুজুর বলেন, 'শয়তান কাউকে নিজের দলে আসতে বাধ্য করে না। করতে পারেও না, সেই ক্ষমতাও তার নাই। সে শুধু আহবান করে, ফ...